খুলনা ব্যুরো

  ০২ আগস্ট, ২০২১

বৃষ্টিতে ডুবেছে ৪৮০০ হেক্টর আমন বীজতলা

টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিপাতে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ৭ হাজার ৬৬৪ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, আউশ ধান ও সবজি ডুবে গেছে। এরই মধ্যে রয়েছে ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক।

এদিকে, খুলনা আবহাওয়া অফিস নিম্নচাপের কারণে গত এক সপ্তাহে খুলনাঞ্চলে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান গতকাল বলেন, টানা চার দিনের বৃষ্টিতে খুলনায় ১ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা ডুবে গেছে। এরমধ্যে কয়রায় ১ হাজার ১৫ হেক্টর জমি রয়েছে। কয়রার স্লুইসগেটের কপাট খুলে যাওয়ায় পানি আটকানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে পানি নেমে না গেলে কয়রার বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া দাকোপের ৭০০ হেক্টর জমির বীজতলা ডুবে গেছে।

তিনি আরো জানান, খুলনায় এ বছর ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা তৈরি হয়েছে। বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি। বৃষ্টির কারণে ৩১৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি জমি ডুবে গেছে। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস থাকায় আউশ ধানের ২২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া, টিপনা রুদাঘরা খলশী, চুকনগর, মাগুরাঘোনা গোলনা মাদার তলা, চ্যাংমারী, শাহাপুর, সাহস রাজাপুর, সরাফপুর, শোভনা মাগুরখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ফসলে জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে আমন ধানের চারাগাছ, শাকসবজি নষ্ট হয়েছে। বর্ষা ও জোয়ারের পানিতে ঘের তলিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। কৃষক ও মাছচাষিদের মাথায় হাত উঠে গেছে। করোনার কারণে এবার বীজ ও পোনা অধিক দামে কিনে চাষাবাদ করেছিলেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ভারী বর্ষণে ৫ হেক্টর আমন বীজতলা, ৭ হেক্টর সবজিখেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামীতে সরকারি বরাদ্দসাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসন করা হবে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, অতিবর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ডুমুরিয়া উপজেলার ১৯০৮ হেক্টর আয়তনের ২৬৫০টি ঘের ও ১৯.৫ হেক্টর আয়তনের ২৩০টি পুকুর গলদা-বাগদা রেণু ও সাদা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। পুকুর ও ঘেরের অবকাঠামো ক্ষতি ১০ লক্ষাধিক টাকাসহ মৎস্য খাতে প্রায় ৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ঘের ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করব এবং যে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সেসব এলাকার পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার ১ হাজার ৭০০ হেক্টর আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। পাশাপাশি ৮৬০ হেক্টর রোপা আমন জমি ও ৫০০ হেক্টর সবজিখেত ডুবে গেছে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বাগেরহাটে ১ হাজার ২৮৭ হেক্টর জমির আমন বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ জেলায় ৫ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছিল। রোপা আমনের ১৫ হেক্টর জমি ডুবে গেছে।

তিনি আরো জানান, জেলায় ২৯৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ হয়। আউশের ৯৫০ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত। আউশ চাষ হয় ৫ হাজার ২৯৮ হেক্টর জমিতে। গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ হয় ৬ হাজার ৩০৫ হেক্টর। এরমধ্যে ২০৯ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত। জেলার মধ্যে শরণখোলায় সবচেয়ে বেশি জমি ডুবে গেছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ রবিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, গত এক সপ্তাহে খুলনাঞ্চলে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩০ জুলাই সর্বোচ্চ ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তবে এখন আর নিম্নচাপ নেই। মোংলা বন্দরের ৩নং সতর্ক সংকেতও তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন স্বাভাবিক আবহাওয়া চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close