মুহাম্মদ কামাল হোসেন

  ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

সবুজ সুখ লাল অসুখ

কোনো এক অদ্ভুত কারণে হাসনা বুবুর সঙ্গে মায়ের সম্পর্কটা বরাবরি অন্যরকম। প্রায় পিঠেপিঠি বয়সের দুজনের সম্পর্কটা রক্তের সম্পর্কিত না হলেও শিকড় নিঃসন্দেহে অনেক গভীরে প্রোথিত। একেতো শৈশবের বন্ধু, তার ওপর দুজনের জীবনের একটা নির্দিষ্ট গতিপথ ও জীবন ঘনিষ্ঠ কিছু রসায়ন প্রায় একই মোহনায় এসে মিশে গেছে। সেই ছোটবেলা থেকে এসবের কিছু খ-িত অংশ দেখে দেখে আমরা বড় হয়ে আসছি।

বয়স যখন ধীরে ধীরে বার্ধক্যের দুয়ারে ঠেলে নিয়ে যেতে থাকে, বড় বেশি মায়া মোহে নিয়োজিত হয়ে যায় প্রতিটি মানুষ। ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ও একাকীত্বের ভয় এসে আক্রমণ করে রক্তচোষা বাদুরের মতো। ঠিক প্রয়োজনের সময় তখন আপন বলতে কেউ পাশে থাকে না। স্বামীসুখ থেকে বঞ্চিত এই দুই নারী জীবনের খুঁটিনাটি সবকিছু অনুভূতি শেয়ার করে সময় কাটিয়ে দেয়। কখনো কখনো তাদের এই সখ্যতা অতিরঞ্জন মনে হলেও মেকি বা মিথ্যে মনে হয়নি। কোনোদিন মাকে এই নিয়ে মুখ ফোটে কিছু বলার সাহসটুকু পর্যন্ত পাইনি। আমার বড় বোন নিপা অবশ্য ভিন্ন প্রকৃতির। মা আর বুবুর সঙ্গে খুব সহজে দ্রুত মিশে যেতে পারতো। হয়তো মেয়ে বলে এমনটা সম্ভব হয়েছে। আমি বুঝদার হওয়ার পর থেকে মাকে মুহুর্মুহু প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছি, কিন্তু কার্যত সদুত্তর বের করতে পারিনি। শুধু মাঝেমধ্যে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস আড়াল করে বলতো, ‘খোকা, তুই এখনো ছোটো, এসবের কিছু বুঝবি না। এক দিন বড় হলে নিশ্চয় সব বুঝতে পারবি।’ ব্যস, এরপর বড় হয়েও এ নিয়ে কোনো দিন মাকে আর প্রশ্ন করিনি, কিছু জানতেও আগ্রহ দেখাইনি। তাছাড়া জন্মের পর থেকে দেখে আসছি, মা কিছুটা রাশভারি ও চাপা স্বভাবের। যদিও পরে জেনেছি, তিনি মোটেও এমনটা ছিলেন না।

সময়গুলো দ্রুত কেটে যেতে থাকে। দেয়ালে শোভিত ক্যালেন্ডারের পাতায় কেটে যায় আরও বেশ কয়েকটি বছর। ততদিনে পড়ালেখা শেষ করে সহসায় একটি চাকরিও পেয়ে যাই আমি। দ্রুত সংসারের দায়িত্বভার নিই। মায়ের ইচ্ছেতে দিনকয়েকের মধ্যে রূপাকে বিয়ে করে ঘরে তুলি। এরপর ধীরে ধীরে হাসনা বুবুর সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারি, জানতে পারি আমার আদর্শবান বাবা সম্পর্কেও।

বুবুর তিনকুলে বলার মতো কেউ নেই। একমাত্র ছেলে রাতুল থেকেও নেই। অভাগী মায়ের থেকে কবেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শোনা যায়, বিয়ে করে বউ বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে দীর্ঘবছর ধরে রাজধানী শহরে বসবাস করে আসছে। অথচ ছেলেকে একটা সময় পর্যন্ত তিনি কোলে পিঠে কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে মানুষ করেছেন। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে খুঁজে-মাঙে পড়ালেখার খরচ চালিয়ে গেছেন। আজ যখন মায়ের মুখে একটুকরো হাসি ফুটিয়ে দুর্দিন ঘুচানোর সময় এসেছে, তখন অকৃতজ্ঞ ছেলে নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। জগৎ সংসার বড় রহস্যময়, বৈচিত্র্যময় মানুষের জীবনধারা। সেই থেকে দেখে আসছি, হাসনা বুবু আমাদের বাড়িতে আশ্রিতা হয়ে আছেন। অযতœ অবহেলা ও নাওয়া খাওয়ার সামান্যতম কষ্টে কোনোদিন তাকে আঁচ পেতে হয়নি। ষাটোর্ধŸ বয়সী রোগে শোকে জর্জরিত আমার অসুস্থ মাকে দিনরাত সেবাশুশ্রুষা করে আসছেন। যদিও এখন তিনি আগের মতো অতটা খাটাখাটুনি করতে পারছেন না। বার্ধক্যের প্রভাব তার শরীরেও দৃশ্যমান। এমন চওড়া বুক, শক্তপোক্ত বাহু কিংবা পেটানো শারীরিক গড়নের কর্মঠ নারী কালেভদ্রে কেউ দেখেছে কী-না আমার জানা নেই। রূপে সৌন্দর্যেও তিনি কোনো অংশে কমতি ছিলেন না।

এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক আমার মায়ের প্রসঙ্গে। জন্মের পর থেকে মাকে কখনো হাসতে বা কাঁদতে দেখিনি। অবশ্য পাড়া-পড়শির কাছে শুনে আসছি, আমার মা মোটেও এরকম ছিলেন না। এই বাড়িতে নববধূ হিসেবে যখন পালকী চড়ে আসেন, তখন থেকে যথেষ্ট উচ্ছল ও প্রাণবন্ত ছিলেন। অন্য চার-পাঁচজন গ্রাম্যবধুর মতো শিশিরসিক্ত ভোরের দূর্বাঘাস কিংবা সোনাঝরা রোদে পা মাড়িয়ে চলতেন। স্বভাবসুলভ চঞ্চলা হরিণীর মতো বাড়িময় ছুটে বেড়িয়ে রাঙিয়ে রাখতেন চারপাশের গোটা বিমূর্ত পরিবেশ। আমার বাবা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক। গুরুগম্ভীর ও কিছুটা চাপা স্বভাবের। উঁচুস্তরের ব্যক্তিত্বে সমৃদ্ধ একজন আদর্শবান সুপুরুষ। আমার দাদা-দাদু মাকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসতেন। লক্ষ্মীমন্ত বউ বলে সর্বদা সম্বোধন করতেন। পরিবারে কোনোদিন অভাব-অনটন কিংবা দুঃখ-দুর্দশা ছিল না। দাদা-দাদুর একমাত্র সন্তান হিসেবে অনেক ধন সম্পদ ও জমিজিরাতের মালিক হন বাবা। মা সারাক্ষণ বাড়িজুড়ে আলো ঝলমলিয়ে ঘুরঘুর করে বেড়াতেন। আমার জন্মের মাত্র এক বছরের মাথায় দেশব্যাপী যুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠে।

৭ মার্চ, ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। গর্জে ওঠে এদেশের বীর বাঙালি ছাত্রজনতা। রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেনÑ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর ডাকে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা পূর্বপাকিস্তানের জনপদ। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর সাড়ে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মুক্তিপাগল আবালবৃদ্ধ বণিতা। সেদিনটি ছিল ২৫ মার্চ ১৯৭১। রাতের অন্ধকারে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর শকুনের মতো অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হিংস্র সৈন্যরা। শুরু করে ভয়াল ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম বর্বরোচিত হত্যাকা-। অশীতিপর বৃদ্ধ থেকে শুরু করে কোলের শিশুটি পর্যন্ত কেউ রক্ষা পায়নি পাক হায়েনাদের নারকীয় তা-ব থেকে। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে এক দিন বাবাকে ঘাতক পাকিস্তানি শত্রুরা চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। সেদিন আরও শত শত মানুষকে ধরে নিয়ে জড়ো করা হয় তাঁরই চিরচেনা স্বপ্নের বিদ্যাপীঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। সদ্য বিয়ে হওয়া হাসনা বুবুর জোয়ানমর্দ স্বামী সদালাপী যুবক আশরাফকেও টেনেহিচড়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। লাইনে দাঁড় করিয়ে একে একে সবাইকে নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেদিন পাকবাহিনীর তাজা বুলেট থেকে বাঁচতে পারেনি একটি তাজা প্রাণও। আমার সহজ সরল আদর্শিক বাবার সঙ্গে আশরাফকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বেয়নেটের সুচালো মাথা দিয়ে লাশগুলোকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।

লোকমুখে শ্রুতকথা, নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে সেদিন আশরাফ নিজের জীবনের বিনিময়ে একজন আদর্শবান শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর আমার বাবাকে বাঁচাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পাক হানাদার বাহিনীর পৈশাচিকতা ও ঘাতক বুলেটে নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে সবাইকে। সদ্য মেহেদি রাঙা হাতের রঙটুকু মুছতে না মুছতে বুবুকে অল্পবয়সে বিধবার বেশভূষা ধারণ করতে হয়। সেই নৃশংস লোমহর্ষক ঘটনার পর থেকে আমার গর্ভধারিণী মাও পুরোপুরি ‘থ’ মেরে যায়। জীবনের সমস্ত রঙ-তামাশা ও হাসি-আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে ভাবলেশহীন ও একাকিত্ব জীবনযাপনের পথ বেছে নেয়। কারো সঙ্গে প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত কথা বিনিময় করতেন না। সবসময় গুমোট একটা ভাব নিয়ে জড়সড় হয়ে থাকতেন। কখনো খুব একটা হাসতে বা কাঁদতে দেখা যায়নি তাকে। এই নিয়ে মাকে কখনো কোনো ধরনের প্রশ্ন করার সাহস পর্যন্ত পাইনি। কারণ বরাবরই মাকে ভয় ও যথেষ্ট ভক্তি সম্মান করে আসছি। কিন্তু আমার একমাত্র বড় বোন নিপা বরাবরই ঠিক উল্টো দিকে। অবশ্য প্রয়োজনের বেশি আপুও খুব একটা বেশি কথা বলার সুযোগ পেত না। বোনের বিয়েশাদি হয়ে গেলে মা আরও গভীরভাবে একাকিত্ব হয়ে পড়ে। স্বামী-সংসার সামলে মাকে দেখতে বছরে দু-একবারের বেশি বোনের পক্ষে আসা সম্ভব হতো না। আমিও পড়াশোনার কাজে সবসময় ব্যতিব্যস্ত থাকতাম। দিনের প্রায় পুরোটা সময় মাকে বাড়িতে একা থাকতে হতো। তত দিনে নিভৃত জীবনযাপনে মাও আলাদা একটা নিজস্ব জগত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। ধর্ম-কর্ম ও ইবাদত-বন্দেগিতে একপ্রকার কেটে যায় মায়ের নিঃসঙ্গ জীবন। এমনি একটা সময়ে হঠাৎ এক দিন হাসনা বুুুবুকে নিয়ে আসা হয় মাকে দেখাশোনা করার জন্য। ততদিনে বুবুুর একমাত্র জোয়ান তাগড়া ছেলেটাও তাকে ছেড়ে চলে যায়। একূল-ওকূল সবকূল হারিয়ে মানুষটি মায়ের দেখভাল ও যতœআত্তিতে পুরোপুরিভাবে মনোনিবেশ শুরু করে।

কলেজ হোস্টেল থেকে কয়েকদিন পরপর বাড়ি ফিরে এসে দেখতে পেতাম, বুবুর সঙ্গে মায়ের সখ্যতা বেশ জমে ওঠেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে মা। আমার সঙ্গে কথা বলারও জো পর্যন্ত পেত না। তবু মাঝেমধ্যে মা-ছেলের মধ্যে টুকিটাকি কথাবার্তা বিনিময় হতো। ঠিকমতো পড়াশোনা করার জন্য বারংবার তাগাদা দিত। বুুবুকেও মুুহুর্মুহু কড়া নির্দেশনা দিয়ে রাখতো ছেলের যেন অযতœ-অবহেলা না হয়। মায়ের মতো বুবুও আমার প্রতি সবসময় যথাযথ দায়িত্ব পালন ও যতœআত্তি করার চেষ্টা করে গেছে।

ডিসেম্বর মাস। শীতের সকাল। বছর ঘুরে আরেকটি বিজয়লগ্ন দরজায় এসে উপস্থিত। বাইরে বের হওয়ার জন্য তোড়জোড় করছিলাম। বাবার স্কুলে মাইকে উচ্চৈঃস্বরে একের পর এক বিজয়ের গান বেজে চলেছে। সকাল সকাল রূপার হাতের সুস্বাদু চা-নাশতা পর্ব সেরে বাইরে বের হতে যাবো, অমনি সময়ে মা ঘর থেকে ডেকে ওঠে।

‘বাবা আবির, একটু এদিকে আয়।’

‘জ্বি মা, আসছি।’

মার ডাক শুনে চুপ করে থাকা যায় না। মুহূর্তেই মায়ের রুমে পা রাখি। আহ! কতদিন পরে মা এমন মধুর সুরে ডাকলো। একটু পরে আমার স্ত্রী রূপাও এসে উপস্থিত। হাসনা বুবু মায়ের পাশে আগে থেকেই বসা ছিল। রূপাকেও মা রুমে এসে বসতে বলে। আমি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চেপে রাখতে না পেরে পাল্টা প্রশ্ন করিÑ

‘কী হয়েছে মা তোমার? কিছু লাগবে?’

‘নারে খোকা, কিচ্ছু লাগবে না। আমি ভালো আছি।’

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আজ মাকে একটু অন্যরকম লাগছে। কেমন জানি ধীরস্থির ও শান্ত। মনে হচ্ছে, আমাদের উদ্দেশে জরুরি কিছু বলবেন।

‘মাগো, কী হয়েছে তোমার? আমাদের খুলে বলো?’

‘খোকা রে, অধৈর্য হস কেন। বিজয়ের গল্প শুনবি না আজ? একটু এদিকে আয়। আমার পাশে এসে বস। লাল সবুজের

গল্প বলবো।’

কালক্ষেপণ না করে আমি মায়ের পাশে গিয়ে টুপ করে বসে পড়ি। মায়ের নির্দেশে খাটের তোষকের তলা থেকে একখানা চাবি খুঁজে বের করি।

‘খোকা, চাবিটা দিয়ে ওই জানালার কার্নিশের ওপরে রাখা পুরাতন সুটকেসটা খোল।’

আমি কোনোমতে কৌতূহল দমাতে না পেরে বলেই ফেললামÑ

‘ওটাতে কী আছে মা?’

‘একটুকরো বিজয়ের গল্প ও রক্তমাখা পাঞ্জাবি।’

‘বলো কী মা! এসব কার?’

‘তোর বাবার।’

মুহূর্তে হাহাকার করে ওঠে আমার হৃদয়। বাবার আদর-স্নেহ জীবনে হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছি। জন্মের পর চোখ মেলে বাবাকে দেখতে পেয়েও পাইনি। বুঝ হবার পর থেকে বাবাকে কখনো দেখিনি। কাঁপা কাঁপা শরীরে জানালার কার্নিশ থেকে সুটকেসখানা নামিয়ে আনি। কম্পিত হাতে বের করে নিয়ে আসি বাবার ব্যবহৃত রক্তমাখা পাঞ্জাবি। জীবনে এই প্রথমবার দেখলাম বাবার ব্যবহৃত কোনো জিনিস। পাঞ্জাবিতে লেগে আছে রক্তের ছোপ ছোপ কালচে দাগ। অজান্তেই নিজের নাকের কাছে নিয়ে আসি বাবার দলিত ছেড়া পাঞ্জাবি। মুহুর্মুহু নাকে শুকে খুঁজে বের করার বৃথা চেষ্টা করি বাবার শরীরের অবশিষ্ট গন্ধটা কেমন ছিল। তারপর মেলে ধরি মায়ের চোখের সামনে। হাত বাড়িয়ে মা পোশাকটি তার কাছে নিয়ে যায়। একদৃষ্টে চেয়ে থাকে রক্তেভেজা পাঞ্জাবিটির দিকে। ভিন্ন অভিজ্ঞতা ও ব্যথাতুর হৃদয়ে বিড়াল পায়ে একপর্যায়ে

মায়ের রুম থেকে বের হতে যাই। পেছন থেকে মার

আবারো শীতল কণ্ঠÑ

‘খোকা, আরেকটু দাঁড়া।’

আমি থমকে দাঁড়াই। মা আমার হাতে বাবার স্মৃতিময় রক্তমাখা পাঞ্জাবিখানা তুলে দেয়।

‘এটা আমানত। যতœ করে তুলে রাখবি বাবা। আমার নাতি-নাতনিদের বড় হলে দেখাবি। ওরা যেন স্বাধীনতার প্রকৃত ঘ্রাণ পায়। মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠতে পারে। দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে পারে।’

মা আরো কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু বলতে পারেনি। আবেগে গলা বসে যায়। চোখ ভিজে ওঠে। জীবনে এই প্রথমবার মায়ের মুখে একসঙ্গে অশ্রুত হাসি-কান্না দেখতে পাই। অধিক শোকে পাথর হওয়া মানুষটি অবশেষে গলতে শুরু করেছে। মাকে কীভাবে সান্ত¡না দেবো বুঝে

ওঠতে পারছি না।

মাকে জড়িয়ে কাঁদছে হাসনা বুবু, কাঁদছে রূপা। নিশ্চয় বড়বোন নিপা থাকলে সেও কেঁদে বুক ভাসাতো। মায়ের ক্ষরিত চোখের জলধারার সঙ্গে আমাদের বেদনাবিদুর জল একাকার হয়ে মিশে যায়। তবু কোনোমতে মায়ের শীতল হাত দুটি চেপে ধরে সান্ত¡না দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close