অরূপ তালুকদার

  ২৫ জুন, ২০২২

আজ স্বপ্ন পূরণের দিন

দেশ ও জাতির সক্ষমতার অনন্য প্রতীক হয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম পদ্মা বহুমুখী সেতু। সব ধরনের বাদানুবাদ আর প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাসহ নানা বাধা বিপত্তি জয় করে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই ‘পদ্মা সেতু’ এখন বিশ্বের কাছে এক ঐতিহাসিক বাস্তবতা।

আজ সেই শুভ দিন। বাংলাদেশের জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত এই স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে আজ ২৫ জুন শনিবার। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন লালিত ‘পদ্মা সেতু’ উদ্বোধন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আর অবহেলিত থাকবে না।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে বিশাল এক উৎসবে পরিণত করার লক্ষ্যে সেতুর দুই প্রান্ত ছাড়িয়ে এই উৎসব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সারা দেশে। কিছুদিন আগে উদ্বোধনের তারিখটি ঘোষণা করার পর থেকেই দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বিভিন্ন পেশাজীবী এবং কর্মজীবীসহ প্রায় সাত কোটি মানুষ আনন্দণ্ডউচ্ছ্বাস আরো এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।

সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেতু পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী চলে যাবেন সেতুর অপর প্রান্ত জাজিরায়। এ প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর যোগ দেবেন দলীয় জনসভায় মাদারীপুরের শিবচরে। কাঁঠালবাড়ীতে অনুষ্ঠিতব্য জনসভার মঞ্চটি তৈরি করা হচ্ছে পদ্মা সেতুর আদলে। এই জনসভায় ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের উপস্থিতি আশা করছেন দলীয় নেতারা। জনসভার পরে ফানুস উড়ানো থেকে শুরু করে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে দেশের নামিদামি শিল্পীদের নিয়ে।

দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে কোনো রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য কিংবা গুজব কেউ যাতে ছড়িয়ে দিতে না পারে সেজন্য আগে থেকেই সজাগ রয়েছে সাইবার পেট্রলিং, প্রস্তুত রাখা হয়েছে ডগ স্কোয়াড, পুলিশের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বিশেষায়িত ইউনিট ‘সোয়াট’। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে ‘সোয়াট’সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬ হাজার সদস্য।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশাল আয়োজন এবং সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ দুর্নীতি করে না। এই সেতু আমাদের সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক।

আজ সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে প্রায় ৩ হাজার আমন্ত্রিত কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধন শেষে কাঁঠালবাড়ীর বিশাল জনসভায় লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ৮ বছর পর সর্বমোট ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মূল সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং সংযোগ সেতুর ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারসহ মোট ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়।

তবে শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে নানা ধরনের আয়োজন করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন’, যুক্তরাষ্ট্র শাখা ২৪ জুন, শুক্রবার রাতে আয়োজন করেছে বিশাল এক অনুষ্ঠানের জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন উডসাইড গুলশান টেরেস মিলনায়তনে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বৃহত্তম ‘মাল্টিপারপাস ব্রিজ’ হচ্ছে এই সেতু। পৃথিবীর গভীরতম পাইলের এই সেতুর ২৬৬ পাইলে ১ লাখ ৪৬ হাজার টন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত গেছে এই সেতুর অবকাঠামো। পদ্মা সেতুর নানা বিশেষত্বের মধ্যে আরো একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এই সেতুতে ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর অন্য কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। যে কারণে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকার সক্ষমতা রয়েছে এই সেতুর। নদীতে থাকা ৪০টি পিলারের নিচের পাইল ইস্পাতের এবং তীরের দুটি পিলার কংক্রিটের।

পদ্মা সেতু দাঁড়িয়ে আছে পদ্মা নদীর জলের ওপরে ১৮ মিটার উঁচুতে। তাই জলের উচ্চতা

যতই বাড়ুক না কেন এর নিচ দিয়ে পাঁচতলা সমান উচ্চতার যেকোনো নৌযান সহজেই চলাচল করতে পারবে। পদ্মা সেতুর আলোর ব্যবস্থাতেও রয়েছে বিশেষত্ব। সাধারণ আলোর ব্যবস্থা ছাড়াও আর্কিটেকচারাল লাইটিংও আছে। বিশেষ বিশেষ কোনো দিবস উদ্যাপনের সময় এই লাইটিংয়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা যাবে। এরই মধ্যে সব আলো জ্বালিয়ে তাদের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে।

এই সেতু নির্মাণের সঙ্গেই তৈরি করা হচ্ছে ব্রিজ মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামে থাকবে সেতুতে ব্যবহৃত সব ধরনের জিনিসপত্রের নমুনা। সেই সঙ্গে থাকবে এই সেতু নির্মাণে যারা জড়িত ছিলেন তাদের সবার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রুপ ছবি।

এ তো হলো পদ্মা সেতুর কথা। কিন্তু এছাড়াও একসময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলে এখন নানা ধরনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য শিল্পপতিদের নজর পড়েছে। নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য তারা বিভিন্ন স্থানে জমি কেনার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ফলে এই অঞ্চলের কোথাও কোথাও জমিজমার দাম বেড়ে গেছে দশগুণেরও বেশি। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছর ২৪ অক্টোবর বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর নির্মিত চার লেনের দৃষ্টিনন্দন ‘পায়রা সেতু’ উদ্বোধনে পর সবার দৃষ্টি এখন স্বাভাবিকভাবেই পড়েছে এই দিকে। ১১১৮ কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত পায়রা সেতু উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে মাওয়া থেকে দক্ষিণবঙ্গের একেবারে শেষ প্রান্তের কুয়াকাটাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে ফেরিবিহীন যোগাযোগব্যবস্থা চালু হয়েছে। এখন ঢাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যাবে প্রকৃতির অবারিত লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে।

এদিকে লেবুখালী সংলগ্ন পায়রা সেতুর উত্তর প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে শেখ হাসিনা সেনানিবাস। দক্ষিণ প্রান্তে দুমকিতে আগে থেকেই রয়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। মহাসড়কের পাশে রয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রসহ আরো বেশকিছু স্থাপনা। এসব কারণে এর আশপাশে বড় বড় শিল্পপতিদের জমি কেনার জন্য উৎসাহ বেড়ে গেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এখানে গড়ে তোলা হতে পারে রিসোর্ট বা ছোট-বড় কলকারখানা। দেখা গেছে, এরই মধ্যে বেশ কিছু ডেভেলপার এবং শিল্পপতি কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে জমি কিনে তাতে তাদের মালিকানা দেখিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে পটুয়াখালী শহরের কাছেই স্থাপিত হয়েছে কোস্টগার্ডের ঘাঁটি ও অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের স্থাপনা। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন থেকে এরই মধ্যে ইপিজেড স্থাপনের জন্য জেলার সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া মৌজায় প্রায় আড়াই একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে।

দীর্ঘদিনের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের এক সময়ের অতি সাধারণ কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন অঞ্চলে এরই মধ্যে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল-মোটেলসহ ছোট-বড় রেস্তোরাঁ। ফলে কুয়াকাটার আগের সাধারণ গ্রাম্য প্রাকৃতিক চেহারা এখন আর নেই। গত কয়েক বছরের মধ্যেই সামগ্রিক দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ায় নতুনভাবে আধুনিক চেহারায় সেজে উঠেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের জৌলুস দিনে দিনে আরো বাড়বে।

কাছাকাছি এলাকা গঙ্গামতি, খাজুরা, ফাতরার চর প্রভৃতি স্থানেও এখন প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা। আর সেজন্যই এসব জায়গার আশপাশে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে আরো মানসম্মত হোটেল- মোটেল এবং রিসোর্ট তৈরির জন্য জমি কিনে ফেলেছে শিকদার গ্রুপসহ সেঞ্চুরি, ইউএস-বাংলা, ওয়েস্টার্ন, বসুধা ইত্যাদি বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তা গ্রুপ। এখন ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’ উদ্বোধন হয়ে গেলেই দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে যোগাযোগের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে পদ্মা সেতুর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে পায়রা বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য অভাবিতভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্যগুলো অতি সহজেই বিদেশে রপ্তানি করা যাবে পায়রা সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে। শিল্প উদ্যোক্তাদের ধারণা, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠবে ভারী ও মাঝারি ধরনের বিভিন্ন শিল্প ও কারখানা, যাতে নতুন করে কর্মসংস্থান হবে লাখ লাখ মানুষের। কমবে স্বাভাবিকভাবেই ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব।

পদ্মা সেতুর কারণে মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকাতেও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এই জেলার শিবচরে ৭০ একর জমির ওপর প্রস্তাবিত দেশের প্রথম ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি এখানেই ১০৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বেনারসি পল্লী।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ সহজতর করার জন্য পদ্মা সেতুর দুপাশ দিয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দৃষ্টিনন্দন ৫৫ কিলোমিটার চার লেনের আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা যাত্রাবাড়ী উড়ালসেতুর ঢাল থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে পদ্মার দক্ষিণ তীরের মাদারীপুর জেলার শিবচর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মার উত্তরপাড়ে ২৫ কিলোমিটার, দক্ষিণপাড়ের মাদারীপুরের শিবচরে ৯ কিলোমিটার এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ২১ কিলোমিটার সড়ক পথ। এর ফলে রাজধানী ঢাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজতর হচ্ছে।

এদিকে মাদারীপুরের শিবচরে বিমানবন্দর এবং রাজৈরে একটি ইকোনমিক জোন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, ফরিদপুর এবং মাদারীপুর প্রধানত কৃষিপ্রধান অঞ্চল হলেও পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ জোরেশোরে শুরু হওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে এ অঞ্চলের চেহারা পাল্টে গেছে। প্রচুর লোকজন পেশা বদলিয়ে নানা ধরনের দোকানপাট আর ব্যবসা-বাণিজ্যে মন দিচ্ছে। সড়ক বা সাধারণ রাস্তার পাশের কাঠ বাঁশ আর টিন ইত্যাদি দিয়ে পূর্বে নির্মিত ঘরবাড়ি এখন পাকা ঘরবাড়িতে পরিণত হয়েছে। এসব মিলিয়ে বিশাল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বত্র এখন চলছে আনন্দ উচ্ছ্বাস আর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা, যার সঙ্গে দিনে দিনে পরিবর্তন ঘটছে সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক জীবনেও।

তবে শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষরাই নয়, পদ্মা সেতুর কারণে কোনো না কোনোভাবে উপকৃত হবে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষরাও। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পাবেন আগের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ মালামাল উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে আনা নেওয়ার জন্য এখন আর তেমন সময় লাগবে না, খরচও বাঁচবে। উত্তরবঙ্গের আম লিচু কাঁঠাল অনেক সহজলভ্য হবে দক্ষিণবঙ্গে। পক্ষান্তরে এদিকের রুপালি ইলিশ অনায়াসে যাবে ওদিকে।

এদিকে প্রমত্তা পদ্মার দুই পাড়ের মানুষদের আতঙ্ক ছিল নদীভাঙন। বছরের পর বছর ধরে পদ্মার ভাঙনে সহায়-সম্পদ হারিয়ে গৃহহীন হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। পদ্মা সেতুকে এই ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য সেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে নদী শাসন প্রকল্পের আওতায় পদ্মাপাড়ের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় নদীর তলদেশ খননসহ কংক্রিট ব্লক ও জিওব্যাগ ফেলা এবং নদীতীর বাঁধাই করা হয়েছে। ফলে নদীভাঙনের কারণে আতঙ্কিত মানুষদের স্বস্তি মিলেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে এভাবে অন্যদের সঙ্গে পদ্মা পাড়ের মানুষরাও নানাভাবে উপকৃত হয়েছে।

লেখক : শব্দ সৈনিক ও কথাসাহিত্যিক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close