কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি

  ০৮ জানুয়ারি, ২০২৪

নীলফামারী

কিশোরগঞ্জে বাড়ছে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ ও বাহন

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ময়নুল ইসলাম নামের এক যুবক ঘোড়াকে বেছে নিয়ে করছেন হালচাষ ও মালামাল পরিবহন। তিনি উপজেলার কিশোরগঞ্জ সদর ইউপির ইসমাইল মাঝাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার ঘোড়া দিয়ে হালচাষ ও মালামাল পরিবহন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, আধুনিক যন্ত্রযান আবিষ্কারের আগে গ্রামবাংলার কৃষিতে হালচাষ, বাহনে একমাত্র মাধ্যম ছিল গরু-মহিষ। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আহরণ ও গাড়ি ছিল জমিদার রাজা, বাদশাসহ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের প্রধান বাহন। খুব সাহসী, বিশস্ত ও প্রভুভক্ত পোষ্য প্রাণি হিসেবে রাজা-বাদশাহরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে ঘোড়া ব্যবহার করতো। কিন্তু প্রযুক্তির যুগে হালচাষ, বাহন, সমর ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক যান্ত্রীকিরণ। আর যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষ দিয়ে হালচাষ, বাহন ও ঘোড়ার পিঠে আহরণ, বাহন বিলুপ্তির পথে।

ময়নুল বলেন, বর্তমান বাজারে ১ জোড়া বলদ গরু-মহিষের দাম ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে অন্তত ১০ জোড়া ঘোড়া কেনা যায়। ঘোড়ার লালন-পালন খরচ ও রোগ-বালাই কম। বিশেষ করে পাড়া-মহল্লায় গরু-মহিষের হাল, গাড়িও নেই। তাই কদর ও চাহিদা থেকে ১ বছর আগে ৮ হাজার টাকা দিয়ে ১টা ঘোড়া কিনি। গাড়ি তৈরি করে মালামাল পরিবহন শুরু করি। স্থানীয়রাও পুরোনো আভিজাত্যকে লালন করে রিকশা, ভ্যানে মালামাল পরিবহন না করে ঘোড়ার গাড়িতে বহন ও হাট-বাজার যাতায়াতে উৎসাহী হয়ে ওঠে। এতে পুরো এলাকায় সাড়া জাগায় আমার ঘোড়ার গাড়ি। দৈনন্দিন ভাড়া খাটিয়ে আয় হয় ৭০০-৮০০ টাকা। এ আয়ে কুড়িগ্রাম জেলার আড়াই যাত্রাপুর হাট ও দিনাজপুর চশাই আমবাড়ি হাট থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে হালচাষে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ১জোড়া ঘোড়া কিনে আনি। কৃষকরাও শখের বসে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ না করে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে নিচ্ছেন। পাশের গ্রামের কৃষকরাও বাড়িতে ভিড় করছেন। অগ্রিম হালের মজুরি দিচ্ছেন। প্রতি হাল ৩০ শতাংশ (১ বিঘা) জমি চাষে দাম নেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা করে। ইরি-বোরো আবাদের মৌসুম চলছে। এতে হালের প্রচুর চাহিদা। যা প্রতি দিন ২-৩ হালের কাজ করে আয় হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ঘোড়ার খাদ্য বাবদ দৈনিক ব্যয় হয় ২৫০ টাকা।

চাঁদখানা নগর বন গ্রামের কৃষক মিলন মিয়া বলেন, সময়মতো ট্রাক্টর পাওয়া যায় না। এর চাষে বেশি খনন হয় না। ঘোড়ার লাঙলের ফলায় জমির গভীর পর্যন্ত চাষ হয়। অল্প সময়ে অধিক জমি চাষ করা যায়। চাষের পর মই দেওয়ার কোনো চিন্তা থাকে না। তাই ঘোড়া দিয়ে চাষ করে নিচ্ছি। ঘোড়া দিয়ে হালচাষ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পরিবেশবিদরা। এতে মাটির গুণাগুণ ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে। প্রকৃতির লাঙল কেঁচোসহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ ধ্বংস হয় না। মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ফসল ভালো হয়। বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে এ জিনিসটাকে ফিরিয়ে আনা গেলে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পারব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, ঘোড়া আভিজাত্যের প্রতীক। যা আদিকাল থেকে নানা কাজে এর ব্যবহার। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঘোড়ার ব্যবহার বিলীনের পথে। তবে স্বল্প মূল্যের ঘোড়া দিয়ে ময়নুল হালচাষ ও পরিবহনে ভালো আয়ের পথ সৃষ্টি করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close