মাহমুদুল হাসান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)

  ০৭ আগস্ট, ২০২২

রাঙ্গাবালীতে অকেজো ৩৮ স্লুইসগেট, দুশ্চিন্তায় কৃষক

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ৬ ইউনিয়নে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য স্লুইস-কালভার্ট বসানো হয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন সংষ্কার না করা, অবৈধ দখল, পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অনেকগুলো স্লুইস কালভার্ট অকার্যকর হয়ে পরেছে। ১৮০টি স্লুইসগেটের মধ্যে ৩৮টি অকার্যকার রয়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্থানীয় কৃষকরা।

স্থানীয়রা জানান, অধিকাংশ স্লুইসগেট দেখাশুনা (নিয়ন্ত্রণ) করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। খালগুলোতে মাছ শিকারের জন্য তাদের ইচ্ছে মতো (সুবিধামতো) পানি উঠায় এবং নামায় নিজেদের সুবিধার জন্য এবং আর্থিকভাবে লাভমান হওয়ার জন্য বর্ষায় জলাবদ্ধতা তৈরি করে রাখে। কৃষকের পেটে লাথি মারছে তারা। তাই বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন হাজারো কৃষক। সময় মতো পানি নামতে পারেনা। যার ফলে সময়মতো চাষাবাদ করতে পারেনা, কেউ কেউ ধানের চারা রোপন করলেও জলাবদ্ধতার কারনে তাও নষ্ট হয়ে যায়। অতিরিক্ত পলি জমে খাল এবং স্লুইস ভরাট হয়ে যায়। স্লুইসের লোহার কপাট মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লবণ পানি অসময়ে ঢুকে পরে। এতে কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয় সাধারণ কৃষকের। যার প্রভাব পরে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে।

জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ১৪৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধের অভ্যন্তরীণ জনপদ ও আবাদি জমিতে বর্র্ষায় জমে থাকা অতিরিক্ত পানি অপসারণ ও লবনপানি নিয়ন্ত্রনের জন্য বেড়িবাঁধে ১৮০টি ছোট-বড় স্লুইসগেট নির্মাণ করে পাউবো।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় দুই যুগ আগের ছোট-বড় স্লুইস বসানো হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের সুবিধামতো স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের ছত্র ছায়ায় প্রতিটি খালে ১০-১৫ টি করে ধর্মজাল পেতে পোনা মাছ থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের মাছ শিকার করা হচ্ছে। এছাড়া ছোট ফাসের জালের কারনে খালের পানি আটকে থাকে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

এদিকে এলজিইডি ১৪৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ করেছে। সড়কের দু-পাশের খাল বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য যে কয়টি ছোট বড় কালভার্ট করেছে। তাও অনেক কালভার্টের মুখের সামনে বাধ দিয়ে কেউ পুকুর আবার কেউ বাড়ি ঘরের ভিটা তৈরি করেছে। অপরিকল্পিত বাড়ি ও পুকুর করার কারনে জমিতে পানি আটকে থাকায় কৃষি কাজ করতে পারছে না কৃষক।

এলাকাবাসী জানায়, স্লুইস বসানোর পর থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এখন পর্যন্ত স্লুইস মেরামত করেনি। অনেকগুলি কপাট নষ্ট হয়ে গেছে, খাল খনন না করায় পলি পড়ে স্লুইজের অনেক কপাট নষ্ট হয়ে গেছে। এক কপাটের স্লুইসগুলো অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর উদ্যোগে মাঝে মধ্যে মেরামত করে স্লুইসগুলি সচল রাখছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, রাঙ্গাবালী উপজেলায় আমাদের ১৮০টি স্লুইস আছে। এর মধ্যে কিছু কার্যকার আছে আবার কিছু অকার্যকার হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৪২টি কার্যকার ও ৩৮ অকার্যকার রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু স্লুইস একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। ওই স্লুইসগুলো আবার নতুন করে করতে হবে। তবে এ বছর আমাদের হাতে কোন বাজেট নাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close