বগুড়া প্রতিনিধি

  ২১ জুন, ২০২২

যমুনায় পানি বৃদ্ধি

৭০০ হেক্টর ফসল পানির নিচে

উজানের ঢলে কয়েক দিন ধরেই বগুড়ায় যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে খেতের ফসল। পানিবন্দি মানুষ এরই মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুই উপজেলার ৫ শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে।

জানা গেছে, গত রবিবার দুপুরে বগুড়া সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও শুক্রবার সন্ধায় তা বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এতে যমুনার তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় পাট, আউশ ধান, শাকসবজিসহ ফসলি জমিতে এবং পুকুরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে করে ওইসব এলাকায় বসবাসরত মানুষরা বেকায়দায় পড়েছে। বসতবাড়িতে পানি ওঠায় পরিবারের সদস্যসহ গবাদি পশু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ।

সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার চরাঞ্চলের পাট, আমন ধান, কাউন এবং ধৈঞ্চা জাতের ফসল এখন পানি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। পানি উঠেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেঁড়িবাধের অভ্যন্তরে অবস্থানরত লোকালয়ের বাড়িঘরে। এসব এলাকার এলাকাবাসী তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নৌকা যোগে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় বিপাকে পরেছেন শিক্ষক শিক্ষিকা এবং ছাত্র ছাত্রী।

সারিয়াকান্দির কুতুবপুর ইউনিয়নের ঘুঘুমারী এলাকার হাফিজার রহমানসহ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৩ দিন ধরে তাদের বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাধে আশ্রয় নিয়েছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, যমুনা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় উপজেলার ৫০০ হেক্টর পাট, ১৫০ হেক্টর আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ধৈঞ্চা, কাউন, তিলসহ অন্যান্য ফসল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। কৃষকরা জানায়, আগাম বন্যায় তারা অপরিপক্ক পাটগাছ কর্তন করছেন। অপরিপক্ক পাটগাছ কর্তন করায় তারা শতকরা ৩০ থেকে ৫০ ভাগ পাটের আঁশ কম পাবেন। ফলে এ অঞ্চলে পাটের উৎপাদন কয়েকগুণ কম হবে। এতে তারা ব্যাপকভাবে লোকসানের মুখে পড়বে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে ৭টি মাধ্যমিক ও বাকিগুলো প্রাথমিক ও মাদ্রাসা রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে বা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেঁড়িবাধে অস্থায়ী একচালা টিনের ঘরে স্থানান্তর করা পাঠদান দেওয়া হয়েছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২ হাজার ৭০০ বাড়িঘর পানিতে আক্রান্ত। এর মধ্যে সাড়ে ৫০০ বসতবাড়ি আংশিক নিমজ্জিত এবং বাকি ২ হাজার ২০০ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পানি বেড়ে দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ৭ শতাধিক হেক্টর জমির খেতের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দির সাড়ে ৫০০ হেক্টর পাট, ১৭০ হেক্টর আউশ ধান, ৪ হেক্টর শাকসবজি পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ধৈঞ্চা, কাউন, তিলসহ অন্যান্য ফসল বন্যার পানিতে ডুবেছে। সারিয়াকান্দির পাশাপাশি সোনাতলা উপজেলারও ১০টির বেশি গ্রামে এখন পানি ঢুকেছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের পারতিত পরল গ্রামের শাহজাহান আলী বলেন, আমার ৭ বিঘা জমির আধাপাকা কাউন পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৮ বিঘা জমিতে পাট ছিল, তার মধ্যে মাত্র ৩ বিঘা জমির পাট আধাপাকা অবস্থায় কোন মতে কেটে নিয়েছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, পানি দ্রুত কমে গেলে ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। তবে দীর্ঘ সময় পানি থাকলে ফসলের ক্ষতি হবে।

সারিয়াকান্দি ইউএনও মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বন্যার্ত মানুষের সহযোগীতায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন ধরেই পানি বাড়ছে। আরো ২-৩ দিন পর্যন্ত পানি বাড়তে পারে। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধের অবকাঠামো ও তীর সুরক্ষিত, বড় বন্যা মোকাবেলার সক্ষমতা রয়েছে। বড় ধরনের বন্যার আশংকা নেই বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close