জাকির উদ্দিন আহমেদ, জেনারেল সেক্রেটারি, ইসাব

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মতামত

দুর্যোগ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট খাতে দরকার নীতি সহায়তা

বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। এখন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ। এর মধ্যে দেশে অগ্নিদুর্ঘটনাসহ অন্য যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন জাকির উদ্দিন আহমেদ। তিনি ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) জেনারেল সেক্রেটারি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপী নবম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো আয়োজন করেছে ইসাব। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ মেলা উদ্বোধনের পর এই আয়োজন শেষ হচ্ছে আজ। এ আয়োজন নিয়ে ও সংশ্লিষ্ট খাত নিয়ে মতামত দিয়েছেন ইসাব জেনারেল সেক্রেটারি।

বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। এখন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ। এর মধ্যে দেশে অগ্নিদুর্ঘটনাসহ অন্য যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন জাকির উদ্দিন আহমেদ। তিনি ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) জেনারেল সেক্রেটারি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপী নবম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো আয়োজন করেছে ইসাব। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ মেলা উদ্বোধনের পর এই আয়োজন শেষ হচ্ছে আজ। এ আয়োজন নিয়ে ও সংশ্লিষ্ট খাত নিয়ে মতামত দিয়েছেন ইসাবের জেনারেল সেক্রেটারি।

জাকির উদ্দিন বলেন, দুর্যোগ আমাদের অর্জন, সুখ ও অনুভূতিকে নষ্ট করে দিতে পারে। আমাদের উদাসীনতায় দুর্যোগ মোকাবিলার সব ধরনের প্রস্তুতির মধ্যে ঘাটতি থাকলে তা ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনবে। স্মার্ট হতে যাওয়া এদেশের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে নিম্নমানের সরঞ্জাম আনা বন্ধ করতে হবে। কারণ নিম্নমানের পণ্যের কারণে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ অগ্নিকান্ডের বড় কারণ থাকে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট। বিদেশ থেকে নিম্নমানের তারসহ অন্য সরঞ্জাম যাছাই না করেই ব্যবহার করার ফলে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এভাবে নানা কারণ অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা ও সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভূমিকম্পের ঝুঁকিও আমাদের আতঙ্কিত করে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে বড় ভূমিকম্পে ৭৫ শতাংশ ভবন ধ্বংস হতে পারে। সরাসরি মারা যাবে কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ। অবস্থা এমন হবে যে ধ্বংসস্তূপ সরানোর ব্যবস্থাও থাকবে না। তাই আমাদের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে এখানে। তাই দরকার প্রস্তুতির।

অগ্নিসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনার বিষয়ে গবেষণা করতে হবে। পরিস্থিতি কি তা বুঝতে হবে। তরুণদের এ বিষয়ে পাঠদান করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসে যারা যুক্ত হবেন তাদের পরিস্থিতি অবহিত করতে হবে। আমাদের ছোট ছোট উদ্যোগ নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করবে। জীবনের নিরাপত্তা সবার আগে-বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে এ জন্য সরকারকে নীতি সহায়তাসহ বিভিন্ন সহায়তা দিতে হবে। দিতে হবে প্রণোদনা। এ খাতে উৎপাদন ও বিনিয়োগে সহায়তা দরকার। এছাড়া এ খাতে বিদেশিরাও বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ এ খাত বিকশিত হচ্ছে দিনে দিনে। বিদেশ থেকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে খরচ বেশি পড়ছে। ডলারের দাম বেড়েছে। তার ওপর শুল্কও বেশি। ফলে দেশীয় বাজার গড়ে তা বিকাশে সব ধরনের সহায়তা জরুরি দরকার। এ খাতের বিকাশে গবেষণাও দরকার। গবেষণারমাধ্যমে পরিস্থিতি জেনে সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। এ যাবত দুর্ঘটনার পর যত তদন্ত কমিটি ও সুপারিশ করেছে সেগুলোর বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে? সুপারিশ পড়েই থাকে। আমরা এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন চাই। এখনো ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড হালনাগাদ সময় মতো হচ্ছে না। ২০১৩ সালেরটা হয়েছে ২০২০ সালে। অথচ পাঁচ বছর পর পর এটি হালনাগাদ করা দরকার।

ইসাবের জেনারেল সেক্রেটারি বলেন, বড় বড় দুর্ঘটনার পর সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে বড় তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। তারপর সবকিছু কেমন যেন নীরবতার দিকে চলে যায়। গত তিন দশক ধরে দেশে অগ্নিনিরাপত্তা ও সুরক্ষাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছি। দেশে গড়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা নিরাপত্তার, সুরক্ষার যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম তৈরি করে ও বাজারজাত করে। কিন্তু তাদের কথা সরকারের ওপরের পর্যায়ে পৌঁছে না। এ খাতে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এটা সময়ের দাবি। দেশের দুর্যোগ মোকাবিলা করে সুরক্ষা দেওয়ার কাজটি নীরবেই করে যাচ্ছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। তাদের অবহেলার চোখে দেখে, তাদের অবদানকে অস্বীকার করে সামনে যাত্রার পথ পূর্ণ হবে না।

এ অবস্থায় ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী নবম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো আয়োজন করেছে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উদ্বোধন করা হয় এ প্রদর্শনীর। আমি সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে বলব, এ আয়োজন এবার আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এরই মধ্যে আমরা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা, নতুন তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিতিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছি।

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে প্রতিদিন সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মতামত দিচ্ছেন। মুক্ত আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন দর্শক-শ্রোতা। একটি সেশনে তাদের সংখ্যা হাজার ছাড়াচ্ছে। ফলে এ খাতে আলোচনার মাধ্যমে গবেষণা ও উন্নয়নের একটা ক্ষেত্র আমরা তৈরি করেছি। প্রতিদিন এখানে এসে অংশগ্রহণকারীরা বুঝতে পারছেন দেশে অগ্নি নিরাপত্তাসহ অন্য নিরাপত্তারক্ষার ক্ষেত্রে ঘাটতি কোথায় কোথায় রয়েছে।

১৮ ফেব্রুয়ারি অগ্নিনিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সামনের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। তাতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ছিলেন ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ, লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম, লে. কর্নেল (অব.) জুলফিকুর রহমান, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ড. আবদুল লতিফ হেলালী, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. জিল্লুর রহমান, স্থপতি মোস্তফা খালিদ পলাশের মতো ব্যক্তিত্বরা।

তারা বলেছেন, সংকট কোথায় কোথায় আছে আর কি করতে হবে। তারা বলেছেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কলকারখানা বাড়ছে। মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। ভবন বাড়ছে। রাসায়নিকের ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু এখনো মানুষজন নিজেকে নিরাপদ ভাবছে। এটা এক ধরনের ভ্রান্ত মানসিকতা। সবাইকে নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন- আগুন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে বড় বিপদ ডেকে আনে। তা প্রতিরোধের জন্য আগাম ব্যবস্থাপনা, সতর্কতা দরকার।

আমি মনে করি, করকারখানায় অগ্নি পরিকল্পনা অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটি পূর্ণমাত্রার ডিজিটালাইজেশন দরকার। হয়রানি ও জটিলতা এড়াতে মানুষের পরিকল্পনা ডিজিটালি পেশ করতে পারে। এ প্রক্রিয়া অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্ঘটনাস্থল থেকে আক্রান্তদের সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে। সমন্বিত তথ্য প্রবাহ ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপির) মাধ্যমে দেশের স্মার্ট নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সমাধান সম্ভব। এর মাধ্যমে অগ্নিদুর্ঘটনার বিরুদ্ধে লড়াই ও দুর্ঘটনাস্থল থেকে সহজে আক্রান্তদের সরিয়ে নেওয়া নিশ্চিত হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সমাধানের বিকল্প নেই। স্মার্ট অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য আমাদের আরো বেশি স্মার্ট হতে হবে। যন্ত্রপাতি আদর্শমানের হতে হবে। অগ্নিঝুঁকি কমাতে আমাদের এখনো নিরাপদ ও স্মার্ট অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ার জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। কারণ মূলত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে চারপাশের তথ্যউপাত্ত বা ডেটা কাজে লাগিয়ে নগরের অবকাঠামো তদারকি ও ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব।

প্রকল্প বা কর্মসূচি বা উদ্যোগের ক্ষেত্রে সরকারকে পিপিপিতে জোর দিতে হবে। সুন্দর নীতি ও কৌশলগ্রহণ করে সেগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের মাধ্যমে স্মার্ট ও বাসযোগ্য নগরী উপহার দেওয়া সম্ভব।

আমাদের শিল্পায়ন ও নগরায়ন যেভাবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, আমাদের ঝুঁকি ও দুর্ঘটনাও বাড়ছে। চীনের স্কুলগুলোয় নিয়মিত অগ্নিনিরাপত্তার সব ধরনের সরঞ্জাম যথাযথভাবে ব্যবহার করার শিক্ষা দেওয়া হয়। এগুলোর ব্যবহার বাড়াতে প্রলোদনা প্রদান করে। আমরাও তা করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান তিন দিনের এ প্রদর্শনী উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নের জন্য বেগুলেটরি অথোরিটি তৈরি করা হবে। আমরা আশান্বিত হয়েছি। এ রকম সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিভিন্ন আশ্বাস আমরা পাচ্ছি।

আমাদের দেশে নিরাপত্তা পণ্য তৈরি করে তা রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য যারা আমদানি করেন, যারা বিদেশি তারা এদেশে এ খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ কথাটিও বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এবার প্রদর্শনীতে বিশ্বের ৩০ দেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। অগ্নিঝুঁকি কমিয়ে দেশে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার, অগ্নি-সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া ও অগ্নিনিরাপত্তা, সুরক্ষার বিষয়ে সব মহলে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close