নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জাতীয় পেনশন স্কিমে আস্থা বাড়ানো হচ্ছে

জাতীয় পেনশন স্কিমে আস্থা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ আরো সহজ করার পাশাপাশি প্রচারে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৬ মাসে ১৯ হাজার ১৫৮ জন চাঁদা দিয়েছেন। তহবিলে জমা ২৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখনো এ আর্থিক সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন নয় দেশের বড় জনগোষ্ঠী। এ কারণেই জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রবাসীদের অংশগ্রহণ আরো সহজ করতে চাচ্ছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রচারে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।

এ বিষয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, জাপান-কোরিয়ার মতো দেশ ৬০-এর দশকে চালু করে সর্বজনীন পেনশন। এত যুগ পাড়ি দেওয়ার পর এখন ওইসব দেশে সর্বজনীন পেনশন একটা পর্যায়ে এসেছে। আমাদের অত সময় লাগবে না। সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে আমরা ওইসব দেশের অভিজ্ঞতা জেনেছি। তারা বলেছে, শুরুতে তারাও আমাদের মতো নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। ওইসব দেশের চেয়েও অনেক আগেই আমরা সর্বজনীন পেনশনে সফলতা পাব বলে আমার বিশ্বাস।

জানা গেছে, জাতীয় পেনশন স্কিমে কার্যকরের জন্য নতুন নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশের বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ নির্দেশনা দিয়েছে। এ-সংক্রান্ত চিঠি সব ব্যাংকের এমডির কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় সরকার। সরকারের এ উদ্দেশ্য পূরণে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তাই তাদের উদ্বুদ্ধ করার ব্যাপারে বেসরকারি ব্যাংকের এমডিরা যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন, সেই নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ব্যাংক হিসাবের উৎসে কর ও আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, গত ৩১ অক্টোবর পেনশন স্কিমের চাঁদায় বিনিয়োগে কর রেয়াতি সুবিধা ও পেনশন বাবদ উদ্ভূত আয়কে করমুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ পর্যায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ পরিচালিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ব্যাংক হিসাবগুলো উৎসে কর ও আবগারি শুল্ক মওকুফ করা প্রয়োজন। বর্তমানে ব্যক্তি, কোম্পানি বা ফান্ড নির্বিশেষে ব্যাংক হিসাবের স্থিতি অনুযায়ী আবগারি শুল্ক কাটা হয়ে থাকে। ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক কাটা হয় না। ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা, ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা, ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা, ১ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি স্থিতির জন্য ৫০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয় ব্যাংকগুলো। বছরের যেকোনো সময় সর্বোচ্চ স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক আদায় করা হয়। অন্যদিকে ব্যাংক আমানতের বিপরীতে সুদ আয় বা সঞ্চয়পত্রের সুদ আয় থেকে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়। যদি করদাতা রিটার্ন জমার স্লিপ জমা না দেন, তাহলে ১৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়।

তবে জনগণের মধ্যে আস্থার সংকট ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাবকেই পেনশন স্কিমের এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি রবিবার সন্ধ্যার এক সাক্ষাৎকারে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, পেনশন স্কিমের টাকা কোথায় বিনিয়োগ হবে, এখান থেকে কেমন লাভ হবে বা লোকসান হলে কী ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে এখনো মানুষ সচেতন নয়, তাই এই অবস্থা। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাবও এর জন্য দায়ী। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এই স্কিম চালুর সময়ে দুর্বল থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ে। তাছাড়া তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনও রয়েছে, যেটা আমাদের অভাব আছে। তাই সামনের দিনে এই স্কিমের কি অবস্থা হবে সেটা সময়ই বলে দেবে।

সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা গতকাল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমরা মাত্র ৬ মাস হলো এটা চালু করেছি।

এখনো অনেকেই এটা সম্পর্কে জানে না। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে এটা আরো ভালো অবস্থানে যাবে। তিনি বলেন, এটা নিয়ে প্রচার-প্রচারণা করতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। মানুষের মাঝে আস্থা আনতে প্রতি বছরই এই তহবিলের তথ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। তিনি বলেন, পেনশন স্কিম কর্তৃপক্ষ জনগণের আমানত রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন। সরকার এই তহবিল থেকে কোনো ঋণ নিতে পারে না। বরং আমরা সরকারের বিভিন্ন বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করে থাকি। কারণ বিল-বন্ডে বিনিয়োগে আয় সুনিশ্চিত থাকে। ফলে এই তহবিল নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো শঙ্কা থাকবে না।

জাপান-কোরিয়ার মতো দেশ ষাটের দশকে চালু করে সর্বজনীন পেনশন। সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে আমরা ওইসব দেশের অভিজ্ঞতা জেনেছি। তারা বলেছে, শুরুতে তারাও আমাদের মতো নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। এত যুগ পাড়ি দেওয়ার পর এখন ওইসব দেশে সর্বজনীন পেনশন একটা পর্যায়ে এসেছে। আমাদের অত সময় লাগবে না। ওইসব দেশের চেয়েও অনেক আগেই আমরা সর্বজনীন পেনশনে সফলতা পাব বলে আমার বিশ্বাস।

চলতি বছরের ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। চারটি স্কিমের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়। এগুলো হলো প্রবাস (প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য), প্রগতি (বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য), সুরক্ষা (স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য) এবং সমতা (স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য)। পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে ইউপেনশন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা পাসপোর্ট নম্বর, একটি সচল মুঠোফোন নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর, নমিনির এনআইডি ইত্যাদি তথ্য লাগে।

চাঁদা দিয়ে পেনশনব্যবস্থার আওতায় আসতে পারেন ১৮ বছরের বেশি বয়সি যে কেউ। দেশের অন্তত ১০ কোটি মানুষ পেনশনব্যবস্থার আওতায় আসবেন, এমন প্রত্যাশা সরকারের রয়েছে। বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনা এবং নিম্নআয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যেই পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে বলে শুরু থেকেই বলে আসছে পেনশন কর্তৃপক্ষ। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শুরুর দিকে শুধু সোনালী ব্যাংক ছিল স্কিমে নিবন্ধনের সহায়তাকারী। পরে অগ্রণী ব্যাংককেও এ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে দি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে পেনশন কর্তৃপক্ষের আলোচনা হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close