প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৯ জানুয়ারি, ২০২৪

জামানত হারালেন ৩২১ প্রার্থী

সংসদ নির্বাচনের আইনানুযায়ী, কোনো প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে প্রদত্ত ভোটের (কাস্টিং ভোট) ৮ ভাগের এক ভাগ বা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেতে হয়। কোনো আসনের নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম ভোট পেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের জামানত বাতিলের বিধান রয়েছে। বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় চট্টগ্রামে ৯৭, কুমিল্লায় ৭৭, খুলনায় ৩০, গাজীপুরে ২৮, নারায়ণগঞ্জে তৈমূরসহ ২৭, যশোরে ২০, নওগাঁয় ১৯, নড়াইলে ১২, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪, লালমনিরহাটে ৩, বগুড়ার আদমদীঘিতে ১ ও দিনাজপুরে ৩ প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ১৬ আসনের ১২৪ প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন ৯৭ জন। এর মধ্যে আছেন ছয়টি রাজনৈতিক দলের দলীয় প্রধান ও শীর্ষনেতারা। নির্বাচনী ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব প্রার্থী কাস্ট হওয়া ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ পাননি। ফলে তারা কমিশনে জমা করা জামানত ফিরে পাবেন না। চট্টগ্রাম-২ আসনে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ ও জাতীয় পার্টির সোলায়মান শেঠেরও জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। শেঠকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম-১২ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম-৫ আসনে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম-১০ ও ১১ আসনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদিনের জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যদিও নাজিম তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছেন।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের ১, জাতীয় পার্টি (জাপা) ও অন্যান্য দলের প্রার্থীসহ ৭৭ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নির্বাচনে কুমিল্লার ১১টি আসন থেকে অংশ নেন ৯৩ প্রার্থী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ১৬ প্রার্থী জামানত হারাননি। তবে জাতীয় পার্টিসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অন্যসব দলের সব প্রার্থীর জামানতই বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত বার্তায় শিটগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে এ খবর জানা গেছে।

গাজীপুর : গাজীপুরের পাঁচটি আসনে ৩৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে ২৮ প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। ৫টি আসনে বিজয়ী ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছাড়া অন্য সব প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। জামানত হারানোর তালিকায় জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের প্রার্থীরাও রয়েছেন। নির্বাচনের ফল অনুসারে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খুলনা : খুলনার ছয়টি আসনে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেয় ১১টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র ৩৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৩০ জনই জামানত হারাচ্ছেন। নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। খুলনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ বলেন, কোনো প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে মোট প্রদত্ত বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হবে। খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) তিনজন, খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে ৬ জন, খুলনা-৩ (দৌলতপুর-খালিশপুর-খানজাহান আলী) আসনে ৩ জন, খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে ১০ প্রার্থী। খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে ৩, খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে ৫।

নড়াইল : নড়াইল-১ আসনে বি এম কবিরুল হক মুক্তি ও নড়াইল-২ আসনে মাশরাফি বিন মর্তুজা বিজয়ী হয়েছেন। বাকি ১২ প্রার্থী তাদের জামানত খুইয়েছেন। জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, কাস্টিং ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ ভোট না পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে ২৭ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব ও সাবেক বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনে ৩৪ জন প্রার্থী বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই ৩৪ প্রার্থীর ২৭ জনই জামানত বাজেয়াপ্ত হতে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের ৭ জন, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে ৪ জন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ৬ জনই জামানত হারিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনেও ৮ জন প্রার্থী বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এখানেও ৭ প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের জামানত হারিয়েছেন ৭ প্রার্থী। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের ৩ জনই হারিয়েছেন তাদের জামানত।

যশোর : যশোরের ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী ৩১ প্রার্থীর মধ্যে ২০ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী সবকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা জামানাত হারিয়েছেন। জামানত হারানো প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) ছয় আসনের ছয়জন, তৃণমূল বিএনপির (সোনালি আঁশ) তিন আসনের তিনজন, ইসলামী ঐক্যজোটের (মিনার) দুই আসনের দুজন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের (ডাব) একজন, বিএনএফের ( টেলিভিশন) একজন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (বটগাছ) একজন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের (কুলা) একজন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের দুইটি আসনে (নোঙর) দুজন, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (আম) একজন। এছাড়া স্বন্তন্ত্র প্রার্থী দুজন আওয়ামী লীগ নেতা জামানাত হারিয়েছেন। নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফলের বার্তা শিট পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে ৬টি আসনে ৩১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্যে ২২ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৪৭ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে জানান সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ৩ জন, দুই আসনে ৪ জন, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে ৩ জন ও সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে দুজন, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে ৪ জন ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে ৬ জন প্রার্থী তাদের জামানত হারান। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরো জানান, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাখওয়াত হোসেন সুইট, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ বিশ্বাস ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসেনর স্বতন্ত্র প্রার্থী হালিমুল হক মিরু জামানত ফেরত পাবেন।

আদমদিঘী (বগুড়া) : বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে জামানত হারিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) দুবারের এমপি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার। রিটার্নিং অফিসার ও বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পর তথ্যটি পাওয়া যায়।

নওগাঁ : নওগাঁ জেলায় ৫টি সংসদীয় আসনে ২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে ১৯ জন প্রার্থীই জামানত খোয়াতে যাচ্ছেন। রবিবার রাতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা জেলার পাঁচ আসনে নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় তথ্য পাওয়া গেছে।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী কালীগঞ্জ) আসনটিতে টানা সাতবার নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির এমপি প্রয়াত মজিবর রহমান। সেই আসন তো বটেই, এবারের নির্বাচনে বাকি দুটিও খুইয়েছে জাতীয় পার্টি। তাদের দুই প্রার্থী নৌকার প্রার্থীর কাছে হেরে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন, যা অঙ্কের হিসেবে জামানত হারানোর জন্য উপযুক্ত। রবিবার রাতে ঘোষিত চূড়ান্ত বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পর এমন তথ্য জানা গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চারটি আসনে জাপার চার প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। তারা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের শাহানুল করিম ওরফে গরীবুল্লাহ সেলিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে দলের অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে মোবারক হোসেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের আমজাদ হোসেন।

বিরামপুর (দিনাজপুর) : দিনাজপুর-৬ আসনে ৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে ৩ প্রার্থীই জামানত খোয়াচ্ছেন। বিরামপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ আলী বলেন, দিনাজপুর-৬ আসনে তিন প্রার্থী জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close