মিজান রহমান

  ০৯ জানুয়ারি, ২০২৪

সংসদে ফের বিরোধী দল হচ্ছে জাপা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ। এই নির্বাচনে ২২৩টি আসনে জয় নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং এক সময় বিএনপির জোটে থাকা কল্যাণ পার্টি একটি আসনে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা। ৬৩টি আসনে জয় পেয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তবে তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা। তাই প্রশ্ন উঠেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কারা হচ্ছেন? বা কোন দল পালন করবে এই দায়িত্ব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, এটা প্রায় নিশ্চিত। জাতীয় পার্টি (জাপা) একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল হলেও নতুন সংসদে কোন দল বসবে সংসদ অধ্যক্ষ স্পিকারের বাঁ-পাশে? এমন জোর গুঞ্জন চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

আওয়ামী লীগের নৌকা টানা চতুর্থবার জয়ের বন্দরে ভিড়তে যাচ্ছে তা নিয়ে কোনো সংশয় কারো ছিল না। জল্পনা-কল্পনা ছিল দ্বিতীয় অবস্থান নিয়ে, সেখানে চমক দেখালেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্ররা। বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৫টি দলের বর্জনের মধ্যেই ‘শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনে আবারও দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ; ভোট হওয়া ২৯৯ আসনের মধ্যে ২২৩টি পেয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

গত দুই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি ১১ আসনে জয় পেয়েছে। যে ২৬ আসনে আওয়ামী লীগ লাঙ্গলকে ছাড় দিয়েছিল, তার অর্ধেকের বেশি আসন তারা খুইয়ে বসেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং কল্যাণ পার্টি একটি আসনে জয় পেয়েছে। একটি কেন্দ্র স্থগিত থাকায় ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের ফল স্থগিত রেখেছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। সেই আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এগিয়ে আছেন। লাঙ্গল প্রতীকে জয়ী ১১টি আসন নিয়ে দৃশ্যত আবারও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। তবে সংখ্যায় তাদের পাঁচগুণ বেশি স্বতন্ত্ররা সম্ভাব্য ওই তকমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওসার বলেছেন, জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হবে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। স্বতন্ত্ররা জোট করতে পারে যেহেতু তারা রাজনৈতিক দলের নয় যেহেতু বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংসদের আইন শাখার এক কর্মকতা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আসনের সংখ্যারভিত্তিতে দৃশ্যত আবারও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। তবে সংখ্যায় তাদের পাঁচগুণ বেশি স্বতন্ত্ররা সম্ভাব্য ওই তকমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এ নিয়ে এক ধরনের টানাপড়েন থাকাটাই এখনো স্বাভাবিক।

সংরক্ষিত চারটিসহ মোট ২৬টি আসন নিয়ে একাদশ সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে রয়েছে জাপা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিপরীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন থাকায় স্বাভাবিক নিয়মেই জাপা প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনের রেজাল্ট অফিশিয়ালি ঘোষণা হওয়ার পর জানা যাবে বিরোধী দল কারা, অলরেডি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির তো অনেকেই জিতেছেন, চৌদ্দ দলেরও দুজন জিতেছেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তো দূরে নয়। যিনি লিডার অব দ্য হাউস হবেন তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী, নতুন লিডার অব দ্য হাউস পরিস্থিতি, বাস্তবতা, করণীয় বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এবার সংসদে বিরোধী দল কারা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্ধতিটা আমি কেন আপনাকে বলব? নতুন সরকার বসুক। সংশ্লিষ্ট যারা আছে তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন। বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেবেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জনগণের প্রতিনিধি, তারা নির্বাচিত। এই নির্বাচিত সদস্য হিসেবেই সংসদে বসবেন তাদের ভূমিকা পালন করবেন। এছাড়া অন্য কিছু এই মুহূর্তে ভাববার অবকাশ নেই।

২৬টি আসনের মধ্যে ১১টি আসনে জয় : জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬টি আসনে মধ্যে ১১টি আসন জিতেছে। নির্বাচন কমিশনের ফলাফল থেকে জানা গেছে। সমঝোতার বাইরে কোনো আসনে দলের প্রার্থী জিততে পারেননি। বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, রংপুর-৩ আসনে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, চট্টগ্রাম-৫ আসনে কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী-৩), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ঠাকুরগাঁও-৩), গোলাম কিবরিয়া (বরিশাল-৩), এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫), মো. আশরাফুজ্জামান (সাতক্ষীরা-২), এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১) ও শরিফুল ইসলাম (বগুড়া-২) নির্বাচিত হয়েছেন।

জাতীয় পার্টি আসন সমঝোতা নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে অনেক আলোচনা ও দেন দরবার করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পায়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় আসন না পেয়ে কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদে জাপা ২৩ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য রয়েছেন চারজন। এবার নির্বাচনে তাদের আসন বাড়েনি বরং কমেছে। একাদশ সংসদের ২৩ জন সদস্যের মধ্যে ঢাকায় সৈয়দ আবু হোসেন, গাইবান্ধায় শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ময়মনসিংহে ফখরুল ইমাম, সুনামগঞ্জে পীর ফজলুর রহমান, কুড়িগ্রামে পনির উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারীতে আহসান আদেলুর রহমান ও রানা মোহাম্মদ সোহেল, বগুড়ায় শরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জে লিয়াকত হোসেন, বরিশালে নাসরিন জাহান, বগুড়ায় নুরুল ইসলাম তালুকদারসহ ১৪ জন সংসদ সদস্য হতে পারেননি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে জাপা নির্বাচন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাপা ৩৩টি আসনে জয়ী হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সমঝোতার মাধ্যমে জাপা ২৩টি আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দল হয়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close