চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২২ অক্টোবর, ২০২৪

চিরকুট রেখে বিদ্যুতের মিটার চুরি, বিপাকে গ্রাহকরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে বৈদ্যুতিক মিটার চুরির অভিযোগ দাখিলের সাত দিন পরও মামলা গ্রহণ করেনি পুলিশ। এমনকি অভিযোগের কোনো তদন্তও করা হয়নি এখন পর্যন্ত। ভুক্তভোগীরা বলছেন, অভিযোগ দেওয়ার সময় পুলিশ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এই দুষ্কৃতকারীদের ধরতে কোনো কাজ করছে না। ফলে মিটার না পেয়ে বন্ধ আছে এখনকার শিল্প-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে বাসাবাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ অক্টোবর রাতে গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৭টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করে সংঘবদ্ধ চোররা। মিটার চুরির পর চোররা সেখানে চিরকুটে একটি নম্বর রেখে যায়। ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলেই ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে মিটার ফিরিয়ে দিতে চায় চোররা। ঘটনার পর ১৫ অক্টোবর গোমস্তাপুর থানায় অভিযোগ দাখিল করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই অভিযোগগুলো মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

গোমস্তাপুর উপজেলার শেরপুরের সততা রাইস মিলের মালিক মো. জাকারিয়া জানান, মিটার চুরির পর থেকে তার মিল বন্ধ রয়েছে। এই মিলের আয় দিয়েই তার সংসার চলে। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। কবে মিটার লাগাতে পারবেন, সেটারও ঠিক নেই। মো. জাকারিয়া বলেন, পুলিশ অভিযোগ দেওয়ার সময় আমাদের কাছ থেকে টাকাও নিল অথচ চোর ধরার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। চোরদের মোবাইল থেকে আমাদের বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে- তাদের কাছ থেকে মিটার না নিয়ে বিদ্যুৎ অফিস থেকে নিলে পরিণতি ভালো হবে না। পরে আবারও মিটার চুরি করবে বা পেট্রল দিয়ে মিটার জ্বালিয়ে দেবে। এমনকি মিল জ্বালিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আরেকটি মিলের পরিচালক সানোয়ার হোসেন বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমরা চোরের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তাদের ভয়ে আমরা তটস্থ হয়ে থাকি।

ভুক্তভোগীরা বলছেন- মিটার চুরির পর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে প্রত্যেকের কাছে টাকা নেয় পুলিশ। কিন্তু অভিযোগ দেওয়ার সাত দিন পার হলেও একবারের জন্যও তদন্তে আসেনি পুলিশের কোনো সদস্য। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ গ্রাহকরা পুলিশকে বারবার ফোন দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি। তারা অভিযোগ করেন- চোরের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ চোররা অনেক সংঘবদ্ধ। এক রাতে তারা কয়েক লাখ টাকার মিটার চুরি করে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জানান, নতুন মিটার কিনতে গেলে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। পুলিশ যদি চোর ধরে মিটারগুলো উদ্ধার করে দেয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা লাভবান হবেন।

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারাও। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম বলেন, যেহেতু একটি মোবাইল নম্বর রয়েছে, আবার সেই নম্বরটি সচল রয়েছে, কাজেই চোর ধরা পুলিশের জন্য সহজ ছিল। কিন্তু কেন যে পুলিশ তাদের ধরছে না, তা বোধগম্য নয়। তিনি জানান, মিটার চুরির পর আবার সংযোগ স্থাপন করতে গ্রাহককে বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হয়। এর মধ্যে মিটার কিনতে হয় গ্রাহককে। পাশাপাশি সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও পুনঃসংযোগ ফি বাবদ ১ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। ক্ষুদ্র শিল্প কারখানার মালিকদের জন্য এই টাকা খরচ করা কষ্টসাধ্য বটে।

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জানিয়েছেন, নাচোল উপজেলার আড্ডা মোড় থেকে গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মিটারগুলো চুরি করে নিয়ে যায় চোররা। চুরি যাওয়া মিটারগুলো রাইস মিল, স-মিলসহ উৎপাদনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের। যেগুলো পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির শিল্প ক্যাটাগরির গ্রাহক হিসেবে সংযোগ পেয়েছিল। এই মিটারগুলো সাধারণত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দেয়াল ও বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগানো থাকে। শিল্প ক্যাটাগরির মিটার গ্রাহককে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি থেকে কিনতে হয়। বাইরে থেকে এসব মিটার কেনার সুযোগ নেই।

গোমস্তাপুর থানার ওসি শহীদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের পর পুলিশ চোরদের ধরতে কাজ শুরু করেছে। চোরের রেখে যাওয়া মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে চোরদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। চোর ধরতে পারলেই মিটার উদ্ধার করা সম্ভব হবে। তবে অভিযোগ দাখিলের ছয় দিন পরও অভিযোগগুলো মামলা হিসেবে রেকর্ড না করার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। যদিও অভিযোগ দাখিলের সময় অর্থ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close