মো. মিজানুর রহমান পাটোয়ারী, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিশেষ দিনেই কদর বাড়ে পানাউল্লাহরচর বধ্যভূমির

রাতে মাদকাসক্ত ও দিনে বহিরাগতদের আড্ডা

সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে পানাউল্লাহরচর বধ্যভূমিটি। ঝোপঝাড়ে ছেয়ে যায়। রাতে বসে মাদকাসক্ত ও দিনে বহিরাগতদের আড্ডা। সেখানে যাওয়ার রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী।

প্রসাশনের নজরদারী না থাকায় অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়ার অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসীর। বিশেষ কয়েকটি দিন এলেই কদর বেড়ে যায় এ বধ্যভূমির। পরিষ্কার পরিছন্ন করা হয় এর চারপাশ। দেওয়ালে আর স্থম্ভে দেওয়া হয় রঙের প্রলেপ। বিশেষ দিনে অর্পণ করা হয় পুষ্পস্তবক। তারপর আর কোনো খবর থাকে না বধ্যভূমিটির। ১৬ ডিসেম্বরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। বধ্যভূমির চারপাশ ও চত্বরে আগাছায় ছেয়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহিরাগত ছেলে-মেয়েরা দেওয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে লিপ্ত হয় বিভিন্ন অপকর্মে। রাতে সেখানে মাদকের আসর বসায় মাকদাক্তরা।

১৯৭১ সালে ১৪ এপ্রিল। ভোরে পাকহানাদার বাহিনী ভৈরবে দখল করে চারদিক থেকে আক্রমণ শুরু করে। এ সময় হাজার হাজার মানুষ দিক-বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে প্রাণ বাঁচাতে। এমনিভাবে শিবপুর ও কালিকাপ্রসাদ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে আলগড়া খেয়াঘাটে খেয়া পার হওয়ার অপেক্ষায় জড়ো হয়। এ সময় পাকবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার পানাউল্লাহরচরে অবতরণ করে সৈন্যরা রেললাইন ধরে যাওয়ার সময় খেয়াঘাটে জড়ো হওয়া কয়েকশ মানুষ তাদের নজরে আসে। তারা দ্রুত পৌঁছে খেয়াঘাটে অপেক্ষামান নিরস্ত্র, নিরপরাধ ৪ থেকে ৫শ নারী, পুরুষ ও শিশুকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নিমর্মভাবে ব্রাশফায়ারে গুলি করে হত্যা করে ফেলে যায় সেখানে। সেদিন ব্রহ্মপুত্রের পানি রক্তে লাল হয়ে যায়। একইদিনে পাক বাহিনী ভৈরবের মধ্যেরচর, গোছামারা, চন্ডিবের, কালিপুর, কমলপুর, ভৈরবপুর ও ভৈরব বাজারে আরো দুশতাধিক নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করে। বিভিন্নভাবে আহত হয় কয়েক শতধিক। সেদিন মেঘনা আর ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভাসছিল শুধু লাশ আর লাশ। পাকিস্তানি সেনারা ওইদিন উম্মাদের মতো নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। পানাউল্লারচর (আলগড়া এলাকায়) কয়েক শতাধিক নিহতের মধ্যে পরে কিছু আত্মীয়-স্বজন তাদের লাশ নিয়ে গেলেও বেশিরভাগ লাশ ওই স্থানে গণকবর দেওয়া হয়। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রথমে ২০০৬ সালে বেসরকারিভাবে টাকা উঠিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অর্থ্যায়নে বর্তমান স্মৃতিস্তম্ভ রূপলাভ করে।

স্থানীয়রা জানান, অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই দেশ। ১৯৭১ সালে ব্রহ্মণপুত্র তীরের এই আলগড়া নামক খেয়াঘাটে পাকহানাদার বাহিনী কয়েকশ নারী-পুরুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। তাদের এই পবিত্র স্থানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি আজ অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থেকে ঘন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এতে করে মাদকাসক্ত আর অপরাধীদের আবাসস্থলে পরিণত হওয়াসহ চলে অসামাজিক কাজকর্ম। এ ছাড়া এই বধ্যভূমিতে যাওয়ার রাস্তাটি খুবই নাজুক।

শত শত শহীদের স্মৃতিস্তম্ভটি শুধু ইতিহাস সংরক্ষণের একটি প্রতীক নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার কেন্দ্রস্থল। স্মৃতিস্তম্ভটি রক্ষায় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয়রা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close