নিজস্ব প্রতিবেদক
‘৭ মার্চ অস্বীকার করা মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস পরিপন্থি’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টির বিবৃতি
জাতীয় দিবসগুলোর সঙ্গে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাতিলের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এবং ৪ নভেম্বর সাংবিধানিক দিবস অস্বীকার করা মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরিপন্থি বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘অপরাপর জাতীয় দিবসের সঙ্গে ৭ মার্চকে একাকার করে দেখা বিবেচনাপ্রসূত নয়। তাছাড়া ৭ মার্চে সরকারি কোনো ছুটিও ছিল না।’
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এবং ৪ নভেম্বর সাংবিধানিক দিবস অস্বীকার করা মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরিপন্থি বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। গতকাল বৃহস্পতিবার সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।
সাইফুল হক বলেন, ‘অন্য জাতীয় দিবসের সঙ্গে ৭ মার্চ বাতিলের সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কের মধ্যে ঠেলে দেবে। বিশেষ পরিবারকেন্দ্রিক কয়েকটি দিবসের সঙ্গে ৭ মার্চকে গুলিয়ে ফেলার কোনো অবকাশ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন ও তাদের গণহত্যার মতো অপরাধের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও ৭ মার্চকে সম্পর্কিত করে দেখারও কোনো সুযোগ নেই। ১৯৭১ এর অগ্নিঝরা উত্তাল সময়ে ৭ মার্চের ভাষণ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ায় দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, জনগণকে রাজনৈতিক দিশা দিয়েছিল।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সংবেদনশীল ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দেশের মানুষ, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক অংশগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে একাট্টা সমর্থন জুগিয়ে আসছে তাদের মনোভাব, আকাঙ্ক্ষা ও আবেগ বিবেচনায় নেওয়া দরকার। ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান যে অসাধারণ গণঐক্য তৈরি করেছে এবং নতুন এক অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অসীম সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে রাজনৈতিক ইতিহাসের ভুল ও পক্ষপাতদুষ্ট ব্যাখ্যায় তা নষ্ট করা আত্মঘাতী হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের যেমন অনেক অসাধারণ গৌরবজনক উত্তরাধিকার রয়েছে, তেমনি রয়েছে অনেক নির্মম নেতিবাচক উত্তরাধিকার। সবটাই আবার ইতিহাসের অংশ। ইতিহাসের নির্মোহ পর্যালোচনার ভিত্তিতেই স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র হিসেবে গণতান্ত্রিক ধারায় বাংলাদেশকে তার আগামীর পথচলা নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে অনেক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও মতামত ছাড়া গ্রহণ করছেন এবং অনেকে মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ বিবৃতিতে নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারকে তার কাজের পরিধি সুনির্দিষ্ট করে কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান। বিচার বিভাগসহ সর্বত্র গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেন, “কোনো ‘মব’-এর কাছে আত্মসমর্পণ করে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া অগ্রহণযোগ্য।”
"