মাসুম বিল্লাহ, শালিখা (মাগুরা)

  ০৪ মে, ২০২৪

তীব্র তাপপ্রবাহ

রোদে মাঠে টিকতে পারছেন না কৃষক

এখন মাঠ ভরা সোনালি পাকা ধান। শুরু হয়েছে ধান কাটার মৌসুম। ধান কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে ঘরে তোলায় ব্যস্ত কৃষক-কৃষানিরা। ঠিক এই সময় বাঁধ সাধছে শ্রমিকের সংকট ও বাড়তি দাম, তার ওপর অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। মাঠে অসহনীয় তাপপ্রবাহে মাঠে কাজ করতে পারছেন না শ্রমিকরা। ফসল ঘরে তুলতে শঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকদের।

তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত জনজীবন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূর্যের উত্তাপ। ফসল ভালো হলেও একদিকে রোদের তীব্রতা, অন্যদিকে উচ্চমূল্যের কৃষান- এ দুইয়ের চিন্তায় চাষিদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ।

কৃষকরা উচ্চমূল্যে চুক্তিভিত্তিক কৃষিশ্রমিক ক্রয় করেও নিস্তার পাচ্ছেন না। হাট থেকে কিনে আনা কৃষিশ্রমিকরা গরমে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। দুর্বিষহ খরতাপে মাঠের ধান কাটা শেষ না করেই নানা অজুহাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তারা। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই মাথায় মাথাল ও হাতে কাঁচি নিয়ে নিজের জমির ফসল কাটতে নিজেই নেমে পড়ছেন জমির মালিকরা। তবে একটু কাটার পরেই তীব্র এই গরমে হাঁসফাঁস করছেন তারাও। সরেজমিন উপজেলার ধনেশ্বরগাতী, শালিখা, শতখালী, বুনাগাতীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমনি চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কেউ ধান কাটছেন, কেউ মাথায় করে বাড়িতে বয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, কেউ পলিথিনের তাঁবু টাঙিয়ে মাঠেই সেরে ফেলছেন মাড়াইয়ের কাজ। অনেকে আবার ধানখেতের পাশে ছায়া জায়গায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। পান করছেন স্যালাইন ও খাবার পানি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে দেওয়া এক তথ্য থেকে জানা যায়, এ বছর বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১০ হেক্টর বেশি। যেখানে হেক্টরপ্রতি ফলন হয়েছে ৬ দশমিক ৫ টন। ফলন ভালো হলেও কালবৈশাখীর শঙ্কায় তারা আগেই ফসল কাটতে চাইছেন। কিন্তু তাপপ্রবাহ ও শ্রমিক সংকট এবং বড়তি মজুরির কারণে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ জমির ফসল কাটা শেষ হয়েছে। পরিবেশ অনুকূল থাকলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মাঠের সব ফসল কাটা হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের দিঘী গ্রামের চাষি রতন বিশ্বাস বলেন, ‘৯ একর জমিতে ধান লাগাইছি, আলহামদুলিল্লাহ, ফলনও ভালো হয়েছে। তবে কৃষানের (কৃষিশ্রমিক) মূল্য বেশি থাকায় ধান কাটতে খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। তাই ধানের মূল্য ভালো না পেলে চাষের খরচ উঠানো কঠিন হয়ে যাবে।’

একই ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের চাষি তোবারেক মোল্যা বলেন, ‘বেশি টাকা দিয়েও জন (কৃষিশ্রমিক) পাওয়া যাচ্ছে না, তাই বাধ্য হয়ে নিজেরাই কাজ শুরু করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে দশ দিনের ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে কৃষকদের মাথায় মাথাল লাগিয়ে কাজ করা, খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি পান করাসহ নানাবিধ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দিনের প্রথমার্ধে কাজে যাওয়া ও একটানা কাজ না করে বিরতি দিয়ে কাজ করার অনুরোধ করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close