বদরুল আলম মজুমদার

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অক্টোবরেই ঘোষণা হতে পারে যৌথ রূপরেখা

বিএনপির দ্বিতীয় দফা সংলাপ শিগগির

ফাইল ছবি

দুটি বড় রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজপথ। পাশাপাশি অবস্থানে থেকে এসব কর্মসূচি পালন করা হলেও মাঝে মাঝে ঘটে যাচ্ছে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও। এরই মধ্যে মুন্সীগঞ্জে বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। এদের মধ্যে একজন গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে গত এক মাসে সারা দেশে বিএনপির চারজন মারা গেছেন। এ অবস্থায় বিএনপি নেতারা আর বসে থাকতে চাচ্ছেন না।

নয়াপল্টনে মুন্সীগঞ্জে নিহত শাওনের জানাজায় অংশ নিয়ে দলটির নেতারা বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে নেতারা বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে থাকা অন্য দলগুলো নিয়ে শিগগিরই তারা রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। তার আগে দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষ করে বিএনপি একটি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রীয় কাঠামো বা আন্দোলন নিয়ে একটি রূপরেখা ঘোষণা করতে যাচ্ছে। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসে সংলাপ শেষ করে সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে এই রূপরেখা ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ২৫ দল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। যৌথভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার জন্য একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে। দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের কিছু কাটাছেঁড়া করেই প্রকাশ করা হবে এ যৌথ ঘোষণা। এ রূপরেখায় বিএনপি আগামী নির্বাচনের আগে ও পরের দুই পর্বে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশবাসীর সামনে এ রূপরেখা উপস্থাপন করবে বিএনপি।

যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিবেদককে বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনের জন্য সবাইকেই আহ্বান জানিয়েছি। রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠন যারাই এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে তাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা আন্দোলন করব। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি এবং দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগির আমরা একটি যৌথ ঘোষণা বা রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করব। দ্বিতীয় দফা সংলাপের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে সব দলের সঙ্গেই আমাদের কথাবার্তা চলছে। আবারও আমরা কথা বলব।

সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে ডান-বাম-ইসলামি ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ করেছে বিএনপি। এর বাইরে আরো প্রায় ৩টি দলের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখেছে বিএনপি। এদিকে জাতীয় পার্টি (এরশাদ), ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপি, শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদ, জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ ও কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গেও সংলাপ করতে চায় বিএনপি। এরই মধ্যে এসব দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের যুগপৎ আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব প্রস্তাব দিয়েছে তার অধিকাংশই বিএনপির রূপরেখায় স্থান পেয়েছে। বিএনপির চিন্তার সঙ্গে সমমনা ওইসব দলের পরিকল্পনাও প্রায় একই হওয়ায় রূপরেখা নিয়ে মত পার্থক্য হবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় পরিকল্পনা ঘোষণার পরই দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের সংলাপ শুরু হবে। ওই সংলাপে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি যৌথভাবেও ঘোষণা হতে পারে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে তা একক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পক্ষে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব নয়। প্রয়োজন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক সংস্কারসহ নতুন করে রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করা। এজন্য সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। তারা বিএনপির সঙ্গে প্রাথমিক সংলাপে তাদের দলীয় ও গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছেন। বিএনপির পরিকল্পনা দেখে পরবর্তী আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির মহাসচিব বলেছেন যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। তিনি আগে সেটা ঘোষণা করুন। এটা নিয়ে কথা বলা শুরু করুক। আর দ্বিতীয় দফায় সংলাপ করতে চাইলে যেকোনো সময় সংলাপ করতে রাজি আছি।

বিএনপির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া একটি দলের শীর্ষ নেতা প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। আবার কিছু কিছু বিষয়ে আরো আলোচনা করতে হবে। আমরা মনে করি, দেশে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে সাংবিধানিক ক্ষমতার কাঠামো বদলানো দরকার। এ বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন আছে। আলাপ আলোচনা শেষে আমরা আমাদের কর্মসূচি ঠিক করব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের স্বার্থে সবাইকে এ আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। ইস্পাত কঠিন ঐক্য সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এজন্য সবাইকে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থাকতে হবে। এদিকে বিএনপির পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করছে নবগঠিত রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। আগামী সপ্তাহ থেকেই বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার পরিকল্পনা করছে তারা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close