বদরুল আলম মজুমদার

  ০৮ মে, ২০১৯

বের হয়েছেন পার্থ, অপেক্ষায় অনেকে

বিএনপি শপথ নেওয়ায় জোটে ভাঙনের পদধ্বনি

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কিত অভিহিত করে এবং বিএনপি নেতৃত্ব যাতে চ্যালেঞ্জের মুখে না পড়ে, এ জন্য জোট থেকে বিজয়ীরা সংসদ বর্জনের প্রত্যয় ঘোষণা করেন। এই প্রতিশ্রুতির মধ্যেই বিএনপির বিজয়ী সংসদ সদস্যরা সংসদে যোগ দেওয়াকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না জোট শরিকরা।

তাদের আরো অভিযোগ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শুরুর পর থেকেই ২০-দলীয় জোট একটি নিয়ম রক্ষার জোটে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে গত সোমবার রাতে ২০ দলের অন্যতম শরিক ও বেগম খালেদা জিয়ার অত্যন্ত আস্থাভাজন তরুণ রাজনৈতিক ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বিএনপি জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এ ঘোষণার পর প্রকাশ্যে জোটের সমালোচনা করেছেন লেবার পার্টির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এ ছাড়া পার্থ চলে যাওয়ার পর ২০-দলীয় জোটের আরো কয়েকটি দল জোট ছাড়ার ঘোষণা দিতে পারে বলে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

তবে জোটের শরিকরা দূরে সরে গেলে এ নিয়ে বিএনপিতেও তেমন মাথা ব্যথা নেই। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমনিতেই অন্ধকারে আছে সবাই। বিশেষ করে জোটের অন্যতম শক্তিশালী শরিক জামায়াত নিয়ে ভাঙাগড়ার খেলা চলছে। বিএনপির জামায়াত ত্যাগের বিষয়টি সামনে চলে আসায় দলটি এমনিতেই চাইছে জোটটি ভেঙে যাক।

এমন ইঙ্গিত পেয়েই জোট ছাড়ার ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। তিনি জোট ছাড়ার যুক্তি তুলে ধরে সংবাদমাধ্যমে একটি বিবৃতিও পাঠিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ২০-দলীয় জোট স্থবির হয়ে যায় এবং রাজনীতি ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে পড়ে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বিএনপি বাদে ২০ দলের অন্য কারো সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে শুধু সংহতি ও সহমত পোষণের জন্যই ২০ দলের সভা ডাকা হতো।

পার্থের অভিযোগ, ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে সংসদে যাবে না বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। কিন্তু, তারা শেষ মুহূর্তে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেয়। এতে আমরা হতবাক হয়ে যাই। বিজেপি মনে করে, শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি ৩০ ডিসেম্বরের ‘প্রহসনের’ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। আর এ কারণগুলো দেখিয়েই ২০ দলের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার কথা জানালেন পার্থ।

এরপরই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান গণমাধ্যমকে বলেছেন, কিছুক্ষণের মধ্যে লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলব। আমরা জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপিকে আলটিমেটাম দেব।

এমপিদের শপথ নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। শরিকদের অন্ধকারে রেখে ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতরা শপথ নেওয়ায় সবাই ক্ষুব্ধ। শপথ নেওয়ার কারণে দুই নেতাকে বহিষ্কার ও একজনকে শোকজ করা হয়। পরে দলের সিদ্ধান্তেই চার নেতা শপথ নেন। কেন শপথ নিয়েছেন, সে ব্যাপারে বিএনপি বা গণফোরামের পক্ষ থেকে শরিকদের কাছে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। শরিকদের ডেকে কোনো আলোচনাও হয়নি। নির্বাচন নিয়েও নেই কোনো বক্তব্য। উল্টো শপথের বিরোধীরা এখন কোণঠাসা। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা শপথ নিয়েছেন, তারাই হচ্ছেন পুরস্কৃত। শপথের বিপক্ষে কঠোর অবস্থানে থাকায় অনেক নেতা তিরস্কৃত হচ্ছেন। ফ্রন্টের শরিক গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু দলীয় পদ হারিয়েছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। মন্টুকে বাদ দিয়ে রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জোটের এর সবকিছুর ব্যাখ্যা চেয়ে শরিক দলের নেতারা বলছেন, সবাই একসঙ্গে চলার জন্যই জোট। সেই জোটকে অন্ধকারে রেখে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলে এর কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। শপথকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভেতরেও অস্থিরতা আছে। এ নিয়ে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। যার প্রভাব পড়েছে দলীয় কর্মকাণ্ডেও। গত শনিবার স্থায়ী কমিটির পূর্বনির্ধারিত বৈঠক কোনো কারণ ছাড়াই বাতিল হয়ে যায়।

গত রোববার এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, সংসদে না যাওয়ার আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তার এ বক্তব্য জোটের সঙ্গে টানাপড়েনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিএনপি মহাসচিব বিষয়টি স্বীকার করে নিলেও ঐক্যফুন্টের প্রধান সমন্বয়ক গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এ ইস্যুতে এখনো কোনো বক্তব্য দেননি। তিনি বলছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠন করা হয়নি। তার এমন বক্তব্যে দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।

সূত্র জানায়, শেষ মুহূর্তে নির্বাচিত পাঁচ এমপির শপথ নেওয়ায় বিপাকে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে শপথ নেওয়ার কথা বলার পরও এ নিয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানান। শেষ মুহূর্তে শপথের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে কেন তাদের অবহিত করা হয়নি, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,শপথ,জোটে ভাঙন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close