বদরুল আলম মজুমদার

  ২৬ এপ্রিল, ২০১৯

বিএনপির জাহিদুরের শপথ, বাকিদের কবে?

*শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে : ফখরুল *অভিনন্দন জানাই : হানিফ

অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান গতকাল শপথ নিয়েছেন। জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে তার মতো শপথ নেওয়ার পথেই হাঁটছেন বিএনপির আরো কয়েকজন এমপি। দু-এক দিনের মধ্যে তারাও শপথ নিতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছে। নির্বাচিত অন্য এমপিদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই শপথ নেওয়ার কথা জাহিদুর জানালেও ভেতরে ভেতরে বোঝাপড়া রয়েছে বলে জানিয়েছে দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাহিদুর রহমান জাহিদ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ফখরুল বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, শপথ গ্রহণ না করা। এই সিদ্ধান্তকে অমান্য করে যদি কেউ শপথ গ্রহণ করে থাকেন তা নিঃসন্দেহে সাংগঠনিক অপরাধ। অবশ্যই এ রকম ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুতই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তবে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা স্পষ্ট করেননি বিএনপি মহাসচিব।

দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এমপি হিসেবে শপথ নিয়ে জাহিদুর রহমান বিএনপি নেতাদের কাছে তিরস্কৃত হলেও অভিনন্দন পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে। তাকে অভিনন্দন জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, ভোটারদের দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আপনারা শপথ গ্রহণ করুন। জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে সংসদে আসার জন্য, সেই দায়বদ্ধতা থেকে শপথ নেওয়া উচিত।’

বিএনপির দলীয় সূত্রের দাবি, নির্বাচিত এমপিরা এলাকার ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধতার দোহাই দিলেও কার্যত অন্য রাজনৈতিক সমীকরণের জায়গা থেকেই তারা শপথের পথে হাঁটছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়ায় জাহিদুরকে বহিষ্কারের ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা।

এ বিষয়ে জাহিদুর রহমান বলেন, ‘দল বহিষ্কার করলে করুক। আমি তো আর দলকে ছেড়ে যাচ্ছি না। আমি দলের সঙ্গেই থাকব। ৩৮ বছর ধরেই তো আছি। আমি এই দলেরই লোক।’ সংসদের আজকের অধিবেশনে যোগ না দেওয়ার কথা জানিয়ে জাহিদুর বলেন, ‘মহাসচিব ছাড়া দলের বাকি সদস্যরাও শপথ নিতে পারেন। দেখি তারা আসেন কি না। এলে এক সঙ্গে যোগ দেব।’

বিএনপির এই নির্বাচিত সংসদ সদস্য জানান, ‘১৯৯১ সাল থেকেই আমি নির্বাচন করে যাচ্ছি। সংসদ নির্বাচন করেছি চারবার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই আসনে কখনো বিএনপি জেতেনি। কিন্তু এবার আমি জিতেছি। এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ আমার শপথ নেওয়ার পক্ষে।’

শপথ নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমার শপথ নেওয়া উচিত। কারণ আমাদের নেত্রী কারাগারে। তিনি অসুস্থ। দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মামলা। অনেকে জেলে আছে। বাইরে থেকে কিছুই হচ্ছে না। সুতরাং বাইরে থেকে লাভ কী? তার চেয়ে ভেতরেই যাই, অন্তত চিৎকার করে কথা তো বলতে পারব।’

জাহিদুর রহমান শপথ নেওয়ার ঘণ্টা খানেকের মাথায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নেত্রীকে কারাগারে রেখে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে শপথ নিচ্ছেন বা নেবেন তারা গণদুশমন। জনগণই তাদের বিচার করবে। দল থেকেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আর শপথ নেওয়ার পর জাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সংসদে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবি তুলে ধরতেই তিনি শপথ নিয়েছেন। এ কারণে এখন বিএনপি বহিষ্কার করলেও তিনি তা মানবেন না।

বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা এ প্রতিবেদককে জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জাহিদুরের মতো যদি বাকিরাও একই সিদ্ধান্ত নেন তাহলে দলগতভাবে বিএনপি বড় রকমের ধাক্কা খাবে। এর মাধ্যমে বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্রের গন্ধও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপির অন্তত তিনজন শপথ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওই তিন নেতার ভাষ্য, তারা শেষ পর্যন্ত দলকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। দলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করব। দল রাজি না হলে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেব। সূত্রের দাবি, এই তিন নেতার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত দুজন আগামী রোববারই শপথ নিতে পারেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আটজন প্রার্থী বিজয়ী হন। এর আগে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই নেতা সুলতান মোহাম্মাদ মনুসর আহমেদ ও মোকাব্বির খান দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নেন। পরে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

উল্লেখ্য, বিএনপি শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, তারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংসদে যাবে না। এখন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে দলের হাইকমান্ড অটল রয়েছে। শপথ না নেওয়ার বিষয়ে নির্বাচিতদের দলীয় চেয়ারপারসনের কারাবন্দিত্বের মানবিক বিষয়টিও বোঝানো হয়েছিল। এরই মধ্যে প্রথম জাহিদুর রহমান শপথ নিলেন। এখন বাকি রয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ আসনের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানের শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে তার দফতরে এই শপথবাক্য পাঠ করান।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,শপথ,স্পিকার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close