ড. মেজবাহ উদ্দিন তুহিন

  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

অনেক কষ্টের অর্জন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

মাতৃভাষার জন্য বুকের রক্ত দেওয়ার গৌরবময় শোকের ঐতিহ্যকে বিশ্বজনীন আনন্দে রূপান্তরিত করার প্রয়াস পেয়েছে বাঙালি। যে একুশে ছিল মাথানত না করার কঠিন প্রত্যয়, সেই একুশ এখন বাঙালি জাতির অনিঃশেষ গর্বের প্রেরণা। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রক্ষা করেছিল মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার। স্বৈরাচার আর শাসকশ্রেণির যাবতীয় অনাচারের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিবাদ ‘বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি’ জাতির পরিচয়ের দীর্ঘ সংগ্রামের মাইলফলক এবং স্বকীয় সত্তায় ভাস্বর। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বে প্রথম শহীদ হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাঙালি জাতি। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রজনতাকে হত্যার কারণে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবাদী চেতনার, যা আমাদের স্বাধীনতার প্রেরণা জুগিয়েছে। দেশ বিভাগ, ভাষা আন্দোলন, সামরিক শাসন, গণ-অভ্যুত্থান, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বাঙালি সমাজ বরাবরই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আন্দোলন করেছে। এ জাতি শাসকগোষ্ঠীর নিষ্ঠুরতাকে সর্বদা বীরোচিতভাবে প্রতিহত করেছে। মহান একুশে দিয়েছে অন্যায়-অবিচারের কাছে মাথা না নোয়ানোর শিক্ষা।

এ জনপদের মানুষ ভাষা অধিকারের সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের আত্মপরিচয়ে অধিষ্ঠিত করেছিল। বাঙালি জাতির পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিফলিত হয়েছিল দ্বিগুণ, দারুণ দ্রোহ প্রতিশোধের আগুনে। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা ছিল বাংলা। তা ছাড়া সাহিত্য-সংস্কৃতিতে উর্দু ভাষা আঞ্চলিকভাবেই সীমাবদ্ধ ছিল। তরুণদের রক্তস্নান এবং বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধিদীপ্ততায় আমরা অর্জন করেছি আমাদের অধিকার।

বাংলা ভাষা যেমন রাষ্ট্রভাষা রূপে স্বীকৃত হয়েছে, তেমনি বাঙালির আত্মচেতনাকে জাগিয়ে বাঙালির আবেগ বাংলার সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বহির্বিশ্বে। বাংলাদেশের মাতৃভাষা দিবস বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের শিক্ষা-সংক্রান্ত সংস্থার বৈঠকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি এনে দিয়েছে পৃথিবীর ১৮৮ দেশের প্রায় ৪ হাজার মাতৃভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার এক মহান মর্যাদা। বিগত অর্ধশতাব্দী একুশ শুধু আমাদের জীবনেই ছিল আবেগ-শ্রদ্ধার এক অবিস্মরণীয় দিন। এখন থেকে এই দিন বিশ্বের প্রতিটি মানুষ নিজ মাতৃভাষার প্রতি কমিটমেন্ট প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে সক্রিয় হয়েছেন। তাই এ কথা আজ গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন জাতিকে তাদের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে শিখিয়েছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে মাতৃভাষার প্রতি বাঙালির আবেগ সমগ্র বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে। তাই এ গৌরব বাঙালির, বাংলাদেশের।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন আমাদের লড়াই করতে হয়েছে, তেমনি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত করার জন্য দিতে হয়েছে অনেক শ্রম ও ধৈর্যের পরিচয়। বাংলা ভাষা আমাদের ভাবনা, উপলব্ধি, আকাঙ্ক্ষা ও অভিজ্ঞতার ধারক, তাই প্রবাসে বসেও ভাষার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করেছেন আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা। তারা নিজের কথা ভুলে গিয়ে আত্মত্যাগের মহিমায় ভাষার মর্যাদা লাভের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছেন কানাডায় প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম, যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন আবদুস সালাম। তারা সারা বিশ্বে মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি লাভের জন্য ভ্যাঙ্কুভারে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠনের মাধ্যমেই ১৯৯৮-এর ৯ জানুয়ারি জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার প্রস্তাব দেন। তারা তাদের বক্তব্যে বিশ্বের প্রতিটি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রতি বছর বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস পালনের কথা বলেন। একই সঙ্গে বাঙালিরা যেহেতু মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে মর্যাদা রক্ষা করেছে, তাই ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য দাবি জানান। জাতিসংঘের মহাসচিবের পক্ষে হাসান ফেরদৌস আবেদনকারীদের ইউনেসকোর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন, সে পরিপ্রেক্ষিতে রফিক ইউনেসকোতে পত্র প্রেরণ করেন। তিনি ইউনেসকোর ভাষা বিভাগের পরিচালকের সঙ্গেও কথা বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কানাডার মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড থেকে ১০ জন আবেদনকারীর মাধ্যমে সাতটি ভাষায় স্বাক্ষর করে পাঠানো হয়। পরবর্তীকালে ইউনেসকোর শিক্ষা বিভাগের কর্মসূচি বিশেষজ্ঞ আনা মারিয়া বেসরকারি সংগঠনের প্রস্তাব বিবেচনা সম্ভব নয় বলে জানানোর পর প্রস্তাবটি বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব কাজী রফিক উদ্দিনের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়। তিনি তা তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানালে প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে অবিলম্বে ইউনেসকোর অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে প্যারিসে পৌঁছার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইউনেসকোর অধিবেশনে প্রস্তাব পেশ করার পর পাকিস্তানসহ ২৭টি দেশ তা সমর্থন করে। সাধারণ অধিবেশনে ১৮৮টি দেশের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করে।

একুশের এই অহংকার কিন্তু এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। যুগ-যুগান্তরের অনেক বাধা অতিক্রম করে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ এসেছে আজকের অবস্থানে। বাংলা ভাষা পেয়েছে বিশ্ব স্বীকৃতি। রংপুরে প্রাদেশিক শিক্ষা সম্মেলনে ১৯১১ সালে সৈয়দ নওয়াব আলী বাংলা ভাষাকে ভারতের অন্যতম ভাষা হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতির আহ্বান করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লা ১৯১৮ সালে বিশ্বভারতীয় সম্মেলনে বাংলা ভাষাকে ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। মওলানা আকরম খাঁ ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে বাংলাকে ভারতে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। ১৯৪৭ সালের ২৯ জুলাই ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দীন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দিলে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লা তীব্র প্রতিবাদ জানান, তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তমুদ্দিন মজলিস কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ভাষা বিতর্ক সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করা হয়। একই সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা রূপে ব্যবহার শুরু করে। বিভিন্ন কিছুতে বাংলা বাদ দিয়ে উর্দুর পাশাপাশি ইংরেজির ব্যবহার শুরু করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরিত উচ্চতর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সার্কুলারে ৯টি ভাষায় পরীক্ষার উল্লেখ থাকলেও বাংলা ভাষা বাদ দেওয়া হয়। সে সময়ে এ অঞ্চলের বুদ্ধিজীবীরা পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানায়। ৫ ডিসেম্বর ছাত্র-শিক্ষকদের সমাবেশে মওলানা আকরম খাঁ বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা হলে বিদ্রোহের হুমকি দেন। ডিসেম্বর মাসে ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সভা-সমাবেশ শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে ডাকসু কর্তৃক রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে সভা করা হয়।

ডিসেম্বর শেষ সপ্তাহে তমুদ্দিন মজলিসের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে গণপরিষদের ভাষা করার দাবি জানান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান তা প্রত্যাখ্যান করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী ও পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের গণপরিষদের বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে। ১৯৪৮-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট মহিলা মুসলিম লীগের উদ্যোগে সভানেত্রী মিসেস জোবেদা খাতুনের নেতৃত্বে আন্দোলন করা হয়। ৪৮-এর মহিলা ভাষাসৈনিক হামিদা রহমান পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে পুরুষের পোশাকে সাইকেলে চড়ে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। ১১ মার্চ তারিখে তমুদ্দিন মজলিস ও মুসলিম ছাত্রলীগের ডাকে সর্বাত্মক হরতাল ও বিক্ষোভ পালিত হয়। সরকারি-বেসরকারি লোকজন মিছিলে যোগ দেয়। ১৩ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট হয়। ১৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ মিছিলে ১৫ জন পুলিশের গুলিতে আহত হয়। ২০ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে ২১ মার্চ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দিলে ছাত্ররা আন্দোলনে ফেটে পড়ে। ২৮ মার্চ জিন্নাহ রেডিওর ভাষণে ভাষা আন্দোলনকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে বলেন। এতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ছাত্রদের ওপর চড়াও হয়, চলে গ্রেপ্তার নির্যাতন। ১৯৪৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাসচিব ফজলুর রহমান পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত এক সভায় মাধ্যমিক শিক্ষায় উর্দু ভাষা বাধ্যতামূলক করার কথা বলেন। এপ্রিল মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের নাম উর্দুতে লেখার সময় সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা হয়। ১৯৫০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার উর্দু ভাষার সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের জন্য কমিটি গঠন করে।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র রচিত হয়েছে বাংলা ভাষায়, যা বাংলা ভাষায় রচিত পৃথিবীর প্রথম ও একমাত্র রাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্র। জাতিসংঘের অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলায় ভাষণ দিয়ে ইতিহাসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠা করেন বাংলা ভাষার মর্যাদা। তিনি বিশ্ব সংস্থায় সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব সমাজের কাছে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের কথা তুলে ধরেছিলেন মাতৃভাষার মাধ্যমে। স্বাধীনতা লাভকারী বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণদান ছিল এক ঐতিহাসিক কাজ। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃতি পেলেও জাতিসংঘে পাকিস্তানিদের প্রতিনিধিত্ব থাকায় বাংলায় ভাষণদান ছিল দুরূহ। তবে সুখের বিষয়, যে পাকিস্তান একসময় আমাদের ভাষার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, সেই পাকিস্তান ১৯৯৯ সালে ইউনেসকোর অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পক্ষে সমর্থন দেয়। কোনো না কোনো বিষয় যখন ভৌগোলিক সীমানা, নির্দিষ্ট মানবগোষ্ঠীর বা জাতির পরিচয় অতিক্রম করে, সর্বজনীন ও বিশ্বের হয়ে ওঠে, তখন তা সর্বগামী আর তাই পাকিস্তান ইতিহাসের নিয়তিকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল আমাদের এ বিজয়ের সমর্থন জোগাতে।

মাতৃভাষার প্রতি আমাদের এ স্বীকৃতি লাভে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে ফুটে উঠেছে আমাদের অদম্য সাহস, মনোবল ও অধিকার আদায়ের প্রতি সচেতনতার পরিচয়। মাল্টি ল্যাংগুয়াল বা বহু ভাষাভাষীর রাজধানী লন্ডনে ড. ফিলিপ বেকারের এক ভাষা জরিপে দেখা গেছে, সেখানে বাংলা দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা। বিশ্বজনীন এ উপলব্ধি বাঙালি জাতিকে এক বিশিষ্ট স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও প্রগতির আহ্বানে অতিক্রম করতে চেয়েছি কুসংস্কার ও হীনমন্যতার প্রতিবন্ধকতা। ভাষা আন্দোলনের সূচনা যেমন স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল, তেমনি আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে স্বকীয়তা বজায় রেখে একুশে উদযাপনের ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের মর্যাদা অর্জনের। তাই একুশে ফেব্রুয়ারিকে শুধু ভাষা আন্দোলনের স্মারক বললে ভুল হবে, এ দিনটি পরিণত হয়েছে মানবাধিকারের স্মারকে। বাঙালির এই অবিনাশী অর্জন বাঙালি জাতিকে বিশ্বে নতুন মর্যাদায় করেছে অভিষিক্ত।

লেখক : গবেষক ও লেখক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close