নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গৃহশ্রমিকবিষয়ক সংলাপে বক্তারা

গৃহকর্মকে শ্রম আইনে অন্তর্ভূক্তির দাবি

 রাজধানীতে গৃহশ্রমিকবিষয়ক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শ্রমিক নেত্রী শিরীন আখতার। মঙ্গলবার মিরপুরের ইউসেপ বাংলাদেশ কার্যালয়ে। ছবি: সংগৃহীত

গৃহশ্রমিক নির্যাতন প্রতিরোধে যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়, তা যথেষ্ট নয়। এ জন্য কঠোর আইন প্রয়োজন। শ্রম আইন ২০০৬-এ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় শ্রমিকের অধিকার, সুযোগ ও সুবিধা বঞ্চিত গৃহকর্মীরা।

রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ইউসেপ বাংলাদেশ কার্যালয়ে এক সংলাপে এই মন্তব্য করেন বক্তারা। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ‘সময় এখন গৃহকর্ম ও গৃহকর্মীর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির: শ্রমিক হিসেবে শ্রম আইনে অর্ন্তভূক্তির’ শীর্ষক ওই সংলাপ হয়। এতে গৃহকর্মকে শ্রম আইনে অর্ন্তভূক্তির দাবি জানান তারা।

বক্তারা বলেন, প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমে গৃহশ্রমিক নির্যাতন, হত্যা ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশিত হয়। কিন্তু এ সবের কোনো বিচার হয় না। নির্যাতনকারীরা ক্ষমতার জোরে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসেন। গৃহশ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা কারও একার বিষয় নয়, বরং নিয়োগকারী-গৃহশ্রমিক উভয়েরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।


  • গৃহশ্রমিক নির্যাতন প্রতিরোধে শুধু নীতিমালা প্রণয়ন নয়, কঠোর আইনের দাবি।
  • থানা-পুলিশ, আদালত সবাই নির্যাতনকারীর বক্তব্যকেই প্রাধান্য দেয় বলে অভিযোগ গৃহকর্মী ফোরাম নেত্রীর।

অক্সফামের সহযোগিতায় উন্নয়ন সংগঠন কর্মজীবী নারী-এর সুনীতি প্রকল্পের আওতায় সংলাপটি আয়োজন করে মিরপুর অঞ্চলের গৃহকর্মী আঞ্চলিক ফোরাম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও কর্মজীবী নারীর প্রতিষ্ঠাতা শিরীন আখতার। স্বাগত বক্তব্য দেন মিরপুর অঞ্চলের গৃহকর্মী আঞ্চলিক ফোরাম সভাপতি জাকিয়া সুলতানা।

শুরুতে সংলাপের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন কর্মজীবী নারীর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফারহানা আফরিন তিথি। বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জমান রতন, অক্সফামের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর তারেক আজিজ, ইউসেপ বাংলাদেশের ডেপুটি প্রোগ্রাম অফিসার জুয়েল চন্দ্র সরকারসহ অন্যরা।

গৃহশ্রমিকদের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন মিরপুর অঞ্চলের গৃহকর্মী আঞ্চলিক ফোরামের সহ-সভাপতি সোনিয়া বেগম ও সাধারণ সম্পাদক সালমা বেগম। সোনিয়া বলেন, মীমাংসার চাপে গৃহশ্রমিক নির্যাতন মামলার বিচার এগোয় না। থানা-পুলিশ, আদালত সবাই নির্যাতনকারীর বক্তব্যকেই প্রাধান্য দেন। এক পর্যায়ে গৃহশ্রমিকদের হার মানতে হয়।

অনুষ্ঠানে গৃহকর্মীদের অসুবিধার কথা তুলে ধরে বক্তারা। তারা জানান, গৃহকর্মীদের কোনো ছুটি নেই, কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই, নেই স্বাস্থ্য সুবিধা, নেই কোনো নিয়োগপত্র এবং ন্যূনতম মজুরী। এছাড়া গৃহকর্মীরা কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিসহ নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। তাদের কাজের তেমন সামাজিক মর্যাদা নেই এবং পেশা হিসেবে কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই।

রাজধানীতে এক সংলাপে শেষে গৃহশ্রমিক নেত্রীদের সঙ্গে অতিথিরা। মঙ্গলবার মিরপুরের ইউসেপ বাংলাদেশ কার্যালয়ে। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার শ্রম আইন সংশোধন (নভেম্বর ২০২৩) করে সংসদে বিল আকারে পাশ করেছে। এতে শ্রমজীবী নারীর জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ১১২ থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে। কিন্তু সংশোধিত শ্রম আইনেও সুবিধা বঞ্চিত গৃহকর্মীরা। শ্রম আইন সংশোধন বিল (২০২৩) সংসদে পাশ করার পর অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতি কছে পাঠানো হলে রাষ্ট্রপতি এতে সম্মতি না দিয়ে, পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠিয়েছেন। ফলে এখনো সুযোগ আছে বলে মনে করেন তারা।

বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রপতি সম্মতি না দেওয়ার সুযোগ নিয়ে এ সব শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে আরো গতিশীল করতে হবে। আইনের জন্য নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। দাবি প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তারা।

সংলাপে ন্যায্য কর্মঘণ্টা ও মজুরী কাঠামো প্রনয়ন এবং বাস্তবায়ন, যথাসময়ে বেতন প্রদান এবং প্রয়োজনীয় বিশ্রাম, ছুটি, বিনোদন এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, পেশাগত ও জীবন দতা প্রশিণের সুযোগ নিশ্চিত করা, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঢাকা,গৃহশ্রমিক নির্যাতন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close