নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ মার্চ, ২০১৮

এলডিসি থেকে উত্তরণের সাফল্য উদযাপন আজ

সরকারের সব দফতর একটি সেবা ফ্রি দেবে

স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনে বর্তমান সরকারের ঐতিহাসিক সাফল্য আজ সর্বস্তরে উদযাপন করা হবে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশের ওই মর্যাদাপূর্ণ যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় এবং পরের দিন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনের কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি হস্তান্তর করে।

এলডিসি থেকে বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ উত্তরণ প্রক্রিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকার আজ দেশব্যাপী উদযাপনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উৎসব উদযাপনের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জন্য এই বিরাট সম্মান অর্জনে অবদান রাখার জন্য দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।

আজ ভোরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন, এর মাধ্যমে দিবসটির উদ্যাপন শুরু হবে। দেশ ও জাতির জন্য এই সম্মানজনক অবস্থান অর্জনে বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানো হবে। পাশাপাশি দুপুরে রাজধানীর ৯টি স্থান থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হবে। সন্ধ্যায় সেখানে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

একইভাবে দেশব্যাপী ২২ থেকে ২৮ মার্চ র‌্যালির আয়োজন করা হবে। সেখানে বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরা হবে। স্থানীয় প্রশাসন ছবি প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলার আয়োজন এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর ভিডিও প্রদর্শন করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকল জেলায় উৎসব উদ্যাপনে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ইতোমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করেছে। এলডিসি থেকে উত্তরণে দেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ে শুক্রবার বিআইসিসিতে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত।

গত বছরের অক্টোবরে ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইউএনসিটিএডি) এক রিপোর্টে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই তিনটি শর্ত পূর্ণ করায় চলতি মার্চ মাসে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করবে। এই তিনটি মানদন্ড হচ্ছে মাথাপিছু জাতীয় আর (জিএনআই), হিউম্যান অ্যাসেটস ইউডেস্ক (এইচএআই) এবং ইকোনমিক ভালনারেবিলিটি ইনডেস্ক (ইভিআই)। জাতিসংঘের এই মানদন্ড অনুযায়ী, একটি দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় (জিএনআই) হবে ১,২৩০ ডলার অথবা আরো বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬১০ ডলার। এই উত্তরণে একটি দেশের এইচএআই সূচক অবশ্যই ৬৬ অথবা বেশি এবং ইভিআই ৩২ অথবা নিচে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সূচক যথাক্রমে ৭২ দশমিক ৯ এবং ২৪ দশমিক ৮। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের চূড়ান্তভাবে উত্তরণের জন্য ২০২৪ সালে জাতিসংঘের ঘোষণা পর্যন্ত তিনটি সূচকের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

এদিকে, গতকাল বুধবার সচিবালয়ে ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সারা দুনিয়ায় আমাদের বদনাম ছিল, আমরা গরিব। আমরা সাহায্যের জন্য হাত পাতি; সে কথা আমাদের শুনতে হয়েছে। তবে আজ খুব গৌরব বোধ করছি। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ কেবল আবেদন করার যোগ্য হয়েছে, এখনো অনেক পথ বাকি; তারপরও উদ্যাপনের এত আয়োজন কেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কেন নয়; আমরা অনেক নিচে ছিলাম; আমরা ওপরে উঠছি এখন, আরো ওপরে যাব। আমরা দেখিয়েছি আমরাও পারি। আমরা উৎসবপ্রিয় জাতি। তাই সবাইকে নিয়ে উদ্যাপন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা এলডিসি থাকব। ২০১৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত একটা ট্রানজিশনে থাকব। তবে আমাদের মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে। বেশি হারে আন্তর্জাতিক ঋণ নেওয়ার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি। এই সঙ্গে বাংলাদেশের সামনের সব সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশকে জাতিসংঘ জানায় ১৭ মার্চ। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে বাংলাদেশ মিশনকে সেদিন ওই স্বীকৃতিপত্র হস্তান্তর করা হয়। অর্থমন্ত্রী জানান, ওই স্বীকৃতিপত্র মঙ্গলবার দেশে এসেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তা হস্তান্তর করা হবে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই স্বীকৃতির উদ্যাপন হবে ৭ দিন ধরে। ২০ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২৬ মার্চ উৎসব চলবে। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হবে সংবর্ধনা, বিকেলে রাজধানীর নয়টি অঞ্চল থেকে শোভাযাত্রা যাবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে; হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ওই সপ্তাহে সরকারের সব দফতর বা বিভাগ একটি সেবা ফ্রি দেবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উত্তরণের সাফল্য,স্বল্পোন্নত দেশ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist