শামীম রেজা ডাফরুল, গোবিন্দগঞ্জ(গাইবান্ধা)

  ০১ মে, ২০২০

গোবিন্দগঞ্জে কিউ-৬৯ আখ নিয়ে দুঃচিন্তায় চাষীরা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিশেষ জাতের কিউ-৬৯ আখ নিয়ে দুঃচিন্তায় রয়েছে আখচাষীরা। এই আখ সময়মতো বিক্রি করতে না পারলে তাদের প্রচুর টাকা লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে আখচাষীরা বৃহস্পতিবার দুপুরে বকচর নামক স্থানে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের উপর আখের আটি রেখে বিক্ষোভ করে আখ বিক্রিতে সরকারের কৃষি বিভাগের সহায়তার দাবি জানিয়েছে।

জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কামারদহ ইউনিয়নসহ ৩টি ইউনিয়নের গ্রামের উর্বর মাটিতে কৃষকরা লোভনীয় অর্থকরী ফসল হিসাবে কিউ-৬৯ জাতের রসালো লাল আখ উৎপাদন করে আসছে। এ আখের রসে চিনি বা গুড় কোনটাই হয়না। রসালো অতি মিষ্টি এ আখ চিবিয়ে অথবা রস করে খেতে হয়। রমজান মাসে ইফতারিতে সরবৎ করে খেতে এ আখের রসের জুড়ি নেই। এ কারণে রমজান মাসে সারা দেশে এ আখের চাহিদাও বেড়ে যায়। এক বিঘা জমিতে এ আখ চাষে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এ আখ বিক্রি করলে এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকা কৃষকের হাতে আসে। এ টাকায় তারা সারা বছরের সংসারে বড় দায় মিটিয়েও বছর জুড়েই স্বাচ্ছন্দে সংসার চালাতে পারে। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এ আখ ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, খুলনা রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে এ আখ কিনে নিয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকার সড়কের মোড়ে মোড়ে চিবিয়ে খেতে খণ্ড করে অথবা হ্যান্ড ক্রাসার দিয়ে রস করে এ আখ বিক্রি করা হয়। কিন্ত চলতি বছর আখ বিক্রির মৌসুম প্রায় শেষের দিকে হলেও প্রাণঘাতী করোনার কারণে সারা দেশে লকডাউন থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পাইকাররা আসতে পারছেনা। ফলে এ আখ বিক্রি করাও যাচ্ছেনা।

এ কারণে কৃষকরা তাদের এ আখ বিক্রি করতে না পেরে বড় দুঃচিন্তায় রয়েছে। কারণ অনেক কৃষক এনজিও অথবা কোন দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে এ আখ চাষ করেছে। এ আখ বিক্রি করে তারা এ ঋণ শোধ করবে। আর লাভের টাকায় সারা বছর সংসার চালাবে। কৃষক জায়েদ আলী জানায়-সে এক এনজিও থেকে এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে এই আখ চাষ করেছে। এই আখ বিক্রি করতে না পারলে সে ঋণতো শোধ করতে পারবেইনা, তাকে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। এছাড়া বকচর এলাকার কৃষকরা জানায়, দীর্ঘদিন থেকে এ এলাকা একমাত্র লাভজনক ফসল এই আখ। এই আখ চাষ করেই অনেকে লাভবান হযেছে। তাই এ এলাকার অনেক কৃষক ব্যাংক, এনজিও থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে শত শত বিঘাতে এই আখ চাষ করেছে। আখের আবাদ খুব ভাল হওয়ায় আখচাষীদের মুখে হাসি ফুঠে উঠেছিল। কিন্তু মরনঘাতি করোনা ভাইরাসের কারণে আখচাষীদের সে আশা, সে হাসি মলিন হতে বসেছে। কারণ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসতে পারছেনা-এ কারনে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আখ বিক্রি করতে পারছেনা। সেই সাথে সময়মত এ আখ বিক্রি করতে না পারলে আখ শুকিয়ে গেলে তাদের লোকসান হবে। এ ছাড়া কালবৈশাখী ঝড়েও আখের ক্ষতি হওয়ার আশংকাও রয়েছে। ফলে বিঘায় বিঘায় চাষ করা আখ নিয়ে আখচাষীরা তাকিয়ে আছে এখন পাইকারদের আগমনের অপেক্ষায়।

এ কারণে আখচাষীরা বৃহস্পতিবার দুপুরে বকচর নামক স্থানে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের উপর আখের আটি রেখে বিক্ষোভ করেছে। তাই তারা ঋণ নিয়ে তাদের ঘামঝরা অতি যত্নে উৎপাদিত এ আখ বিক্রিতে সরকারের কৃষি বিভাগের সহায়তার দাবি জানিয়েছে ।

এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার খালেদুর রহমান বলেন- কৃষিপণ্য পরিবহনে কোন বাঁধা নেই। তবু আখচাষীরা আমার সাথে যোগাযোগ করলে আখ পরিবহনে কৃষি অফিস সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে-এমন কি কোন জায়গায় বাঁধার সম্মুখীন হলেও কৃষি অফিস তাদের সার্টিফিকেট প্রদান করে সহযোগিতা করবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গোবিন্দগঞ্জ,আখচাষী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close