গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৬ জুলাই, ২০২০

শিপিংয়েও উন্নয়নের ছোঁয়া

আন্তর্জাতিক জাহাজ ব্যবসায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও উন্নয়ন থেমে নেই বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি)। বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় ছয়টি জাহাজ বিএসসি বহরে যোগ হয়েছে। আরো ২৬টি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা আছে। এগুলোর মধ্যে ছয়টি সংগ্রহের জন্য সরকারি অনুমোদন পেয়েছে। বাকি ২০টি সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে বিএসসি। তবে জাহাজ কেনাই এই সংস্থাটির প্রধান কাজ হলেও এ ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন এই সংস্থাটি। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারের বাইরে অন্যদের এ সংস্থাটির প্রতি সু-নজর না থাকা। এতে সংস্থাটি নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কিনতে তহবিলও গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার’ হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা সংস্থাটি এখন আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, দীর্ঘ ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু-তনয়া শেখ হাসিনার হাত ধরে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এর আগে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বিএসসির বহরে নতুন জাহাজ সংযোজন ছিল না। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে সরকার পরিবর্তনে স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত দলটি আবার সংসদের বিরোধী দলে ঠাঁই হয়। তাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত আবার অধরা থেকে যায়। বিএসসিও নতুন জাহাজ কেনার স্বপ্ন থেকে দূরে সরে পড়ে। টানা আট বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে টানা প্রায় একযুগ সরকারে রয়েছে। রাষ্ট্রের অন্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের মতো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ও এর থেকে পিছিয়ে নেই।

তবে দেশি-বিদেশি নানা নিয়মনীতির খড়্গ সংস্থাটির জাহাজ নির্বিঘ্নে চলাচলের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধতা দূর না করে বহরে যত জাহাজ যোগ হোক না কেন, সংস্থাটি কখনোই স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারবে না বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সব থাকার পরও অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে চলতে হবে। এর মধ্যে জাহাজের মালামাল কেনায় পিপিআরের শর্ত শিথিল এবং দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানির চুক্তি কার্যকর করতে হবে।

সূত্র বলছে, জাহাজ নির্মাণ অত্যন্ত জটিল ও সূক্ষ্ম কাজ। এর জন্য জাহাজ কেনা প্রচুর সময় ও অর্থ খরচ হয়। বিএসসিতে ১৯৯১ সাল থেকে নতুন করে কোনো জাহাজ কেনা হয়নি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে পড়ে। যার কারণে জাহাজ পরিচালনা থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ আয় করতে পারেনি। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় নতুন ছয়টি জাহাজ বহরে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক জাহাজ ব্যবসায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে নতুন জাহাজ পরিচালনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জাহাজ কেনার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল গঠনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অর্থ আয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিএসসিকে আর্থিক সংকট কাটিয়ে কার্যকর সংস্থায় নিয়ে যেতে বর্তমান প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তিনি দায়িত্বে আসার এক বছরের মাথায় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিএসসির ৩০০তম পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী।

ওই সভায় জানানো হয়, চলমান ছয়টি জাহাজের মধ্যে তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার বিএসসির বহরে যুক্ত হয়েছে, যার প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৩৯ হাজার টন। বাকি তিনটি অয়েল ট্যাংকার। সেগুলোও ৩৯ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। এ ছাড়া নতুন যে ছয়টি জাহাজ সংগ্রহ করা হবে, সেগুলোর মধ্যে দুটি মাদার ট্যাংকার, যার প্রতিটির ধারণক্ষমতা এক লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টন, দুটি ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ও দুটি ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার বাল্ক ক্যারিয়ার।

বিএসসির প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জসমূহ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমান আন্তর্জাতিক জাহাজশিল্পে বাংলাদেশের জন্য শুধু চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশের ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টি অত্যন্ত সীমিত। এই সীমিত পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি চীনের ঋণপ্রাপ্তির বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সীমিত দরপত্রের নীতিমালা জারি করায় সার্বিক বিষয়টি আরো জটিল হয়ে পড়েছে। এ নীতিমালার কারণে ঋণপ্রাপ্তিসহ সামগ্রিক কার্যক্রম সম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

আর জাহাজ ক্রয়-সংক্রান্ত প্রকল্পে জাহাজ কেনার জন্য এডিপির তহবিল থেকে কোনো ঋণ মেলে না। জিওবির অর্থায়নে ভরসা হলেও ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০টি বাল্ক ক্যারিয়ার প্রতিটি ১০০০০-১৫০০০ ডিডব্লিউটি কেনার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও আজও পর্যন্ত কোনো ফান্ড পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই এটিও বিএসসির জন্য চ্যালেঞ্জ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উন্নয়ন,শিপিং,বিএসসি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close