শাহ্জাহান সাজু
বছরের প্রথম ৬ মাস
টানাটানিতেও মুনাফা অনেক ব্যাংকের
চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার টানাটানি গেছে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। পাশাপাশি ডলার সংকটও সামনে আসে। এতে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদ হার। আমানতকারীকে কোনো কোনো ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতেও শুরু করে। আবার আমানতের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগের সুদ হার ১৭-১৮ শতাংশে গিয়ে উঠে। এ সময়ে খেলাপি ঋণও অনেক বেড়ে যায়। পুরাতন ব্যাংকের পাশাপাশি নতুন ব্যাংকগুলোরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তারপরও বছরের প্রথম ছয় মাসে নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে আগের বছরের এই সময়ের চেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে অনেক ব্যাংক।
বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্যে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যাংকেরই মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর প্রাথমিক হিসাব ও প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গেল বছরে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করেছে। এরপর রয়েছে বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোও আগের বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে। তবে পরিচালন মুনাফা প্রকৃত মুনাফার চিত্র নয়। এর থেকে বিভিন্ন দায় পরিশোধ করে প্রকৃত মুনাফা হিসাব করা হয়। নতুন ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেড।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক ঋণের বেশি সুদের কারণেই ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। আর সুদহার বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত সুদ গুনতে গিয়ে শিল্পোদ্যোক্তারা হিমশিম খেয়েছেন। এতে শিল্পখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কম সুদে আমানত সংগ্রহ করলেও বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা করা হয়নি। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিত স্প্রেড সীমা না মানায় ব্যাংকিং চ্যানেলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) চার শতাংশীয় পয়েন্টের মধ্যে রাখতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আগের নির্দেশিত হারের (পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্ট) চেয়ে ১১টি ব্যাংকের স্প্রেড বেশি রয়েছে। আর নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত স্প্রেড সীমার বাইরে রয়েছে ৪০টি ব্যাংক। এ ছাড়া আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো হওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর মুনাফা বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারল্য সংকট, সুদের হার অনেক বেশি থাকা ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে আশানুরূপ বিনিয়োগ হয়নি। অন্যদিকে, খেলাপি ঋণও বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। আর খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে ব্যাংকগুলোর অনেক ব্যয় করতে হয়েছে। ফলে উচ্চ সুদের কারণেই ব্যাংকগুলো আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি মুনাফা করেছে।
প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলো কয়েকদিন পরে তাদের বার্ষিক অনিরীক্ষিত আর্থিক ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে পেশ করবে। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
পিডিএসও/হেলাল