শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৭

সেবায় পিছিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দরে গত এক দশকেও নির্মিত হয়নি নতুন কোনো জেটি, ইয়ার্ড ও টার্মিনাল। পাশাপাশি কমেছে বন্দরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি সরবরাহ। সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ রয়েছে শুধু পরিকল্পনাতেই। ফলে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোগান্তিতে পড়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ব্যবহারকারীরা।

দেশের আমদানি ও রফতানির প্রায় ৮২ শতাংশ সম্পূর্ণ হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। প্রতিবছর দেশে আমদানি ও রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। এতে বাড়ছে বন্দরের কনটেইনার পরিবহনের হারও।

সদ্য প্রকাশিত লয়েডস লিস্ট অনুসারে, ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৯ একক কনটেইনার পরিবহন করা হয়েছে; যা ২০১৫ সালের চেয়ে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।

গত বছর প্রকাশিত তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৭৬তম। নতুন তালিকায় তা ৭১-এ উন্নীত হয়েছে। গত পাঁচ বছরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের ব্যবধানে কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ। এ হিসাবে গড়ে ১৩ শতাংশ হারে বাড়ছে কনটেইনার পরিবহন। তবে এতে সেবার মান বিচার করা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কনটেইনার পরিবহন বাড়ার সঙ্গে নতুন অবকাঠামো তৈরি না হওয়ায় সেবার মানে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ২০১২ সালে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৭৩ শতাংশ যন্ত্রপাতি থাকলেও ২০১৪ সালে তা ৬৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৫ সালে এ হার আরো কমে দাঁড়ায় ৫৪ শতাংশে।

এদিকে বর্তমানে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ইয়ার্ডে কমপক্ষে ২২টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি প্রয়োজন হলেও রয়েছে মাত্র ১০টি। চিটাগং কনটেইনার টার্মিনালে আরটিজি রয়েছে ১১টি। পুরনো হওয়ায় বারবার বিকল হয়ে যায় এগুলো। যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে জিসিবিতেও। সব মিলিয়ে বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ২৯৯টি যন্ত্রপাতি থাকার কথা থাকলেও এর অর্ধেকেরও কম যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সাধারণ কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ৮৯৫টি যন্ত্রপাতি থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ২০০-এর কিছু বেশি।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ছয়টি গ্যান্ট্রি ক্রেন কিনতে চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে গত ১৫ অক্টোবর চুক্তিপত্র সই করা হয়েছে। তবে ওই ক্রেন চট্টগ্রাম বন্দরের বহরে যুক্ত হতে আরো দুই বছর লাগবে। আধুনিক এই যন্ত্র না থাকায় বন্দরে প্রায় ৭৮ শতাংশ কনটেইনার সনাতন পদ্ধতিতে বা জাহাজের ক্রেনের সাহায্যে ওঠানো-নামানো হয়। ফলে কনটেইনারজটের পাশাপাশি বন্দরে জাহাজজটও দেখা দিচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে গ্রাহক পরামর্শ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জাহাজ কোম্পানি মায়ের্সক লাইনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এমসিসি ট্রান্সপোর্ট; চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতি নিয়ে ১১ অক্টোবর ‘চট্টগ্রাম বন্দর আপডেট-১৬’ শিরোনামে বলা হয়, ‘আমরা এখনো বহির্নোঙরে জাহাজের দীর্ঘমেয়াদি অপেক্ষার সম্মুখীন রয়েছি। এ পরিস্থিতির কখন উন্নতি হয়, তা বলা কঠিন।’ চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য দ্রুত হারে বাড়ছে। ২০২১ সাল নাগাদ শুধু পোশাক রফতানি থেকেই ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম দ্বিগুণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে হবে। এখন বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ইয়ার্ডভিত্তিক পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি স্থাপন করা না হলে এ লক্ষ্য অর্জন হবে না।

তিনি জানান, গত ৪০ বছরে বন্দরে জেটির সংখ্যা বেড়েছে মাত্র সাতটি। বর্তমানে জেটি হওয়ার দরকার ছিল ৬০টি। কিন্তু আছে ২০টি। ফলে জাহাজ যথাসময়ে বার্থিং করতে পারছে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) জাফর আলম জানান, দেশে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহারও বাড়ছে। বন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে স্বল্পমেয়াদে জাহাজ ও পণ্যজট কমাতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে বন্দর। দ্রুত সময়ের মধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার ইয়ার্ডের কাজও শুরু করা হচ্ছে। এরপর লালদিয়া এবং এরপর বে-টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মক্ষমতার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist