নিজস্ব প্রতিবেদক
সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমল সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা
চলতি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এতে মূল এডিপি থেকে কাটছাঁট করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের শুরুতেই মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ অর্থবছর সরকারি তহবিলের অর্থ না কমলেও বৈদেশিক সহায়তা এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বরাদ্দ কমেছে।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, আইএমইডি সচিব মো. মফিজুল ইসলামসহ পরিকল্পনা কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংশোধিত এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিলের (জিওবি) অপরিবর্তিত বরাদ্দ রয়েছে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ৫২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে মূল বরাদ্দ ৫৭ হাজার কোটি টাকা থেকে কমেছে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ২১৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এতে মূল বরাদ্দ ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা থেকে কাটছাঁট করা হয়েছে ১ হাজার ৫৪০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির বাস্তবায়ন অনেক বাড়বে। কেননা আবহাওয়া ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। বাংলাদেশে রফতানি এবং রেমিট্যান্সসহ অর্থনীতির অন্য খাতগুলো ভালো করছে। এছাড়া মাথাপিছু আয় এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, হলি আর্টিজান হামলার কারণে অনেকটা সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই বৈদেশিক সহায়তা থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বাদ দিতে হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগামীতে যদি কোনো মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটি অবশ্যই বিবেচনা করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্প যাতে ঘন ঘন সংশোধন করা না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের মান যাতে নিশ্চিত হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন তদারকি যাতে নিবিড় হয় সেজন্যও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতে ৩৭ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ২২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৬ হাজার ৭৯৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সংশোধিত এডিপিতে অন্যান্য কয়েকটি খাতের বরাদ্দ হচ্ছে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ১৫ হাজার ২১৩ কোটি টাকা, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১৪ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৫ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে বেড়েছে প্রকল্প সংখ্যাও। মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৩০৮টি। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে এসে মোট প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৫৮টিতে। ফলে মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প বেড়েছে ৩৫০টি। এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অনুমোদনহীন প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ২৭টি। বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্থে অনুমোদন ও বরাদ্দহীনভাবে ২৬৮টি প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া পিপিপির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) প্রকল্প রয়েছে ৩০টি।
"