মারুফ আহমেদ, কুমিল্লা

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ

ফোর লেন মহাসড়কেও ধীরে চলে যানবাহন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০-১২ জায়গায় অবৈধ বাজার, স্ট্যান্ড। ইজারাদানের নামে বছরে কোটি টাকার চাঁদাবাজি

ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন মহাসড়কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় শত কিলোমিটার। ব্যস্ততম মহাসড়কের এই অংশে ১০-১২টি স্থানে যেমন রয়েছে বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তেমনি রয়েছে আন্তজেলা বাস, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনের স্ট্যান্ড। এর ফলে মহাসড়কে প্রতিদিন থেমে থেমে সৃষ্ট হচ্ছে যানজট, ঘটছে দুর্ঘটনা। হতাহত হচ্ছেন কেউ কেউ। অভিযোগ আছে, মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা এসব বাজার ও স্ট্যান্ড বছর ভিত্তিক ইজারা দিয়ে প্রতি বছর কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছে বিভিন্ন মহল। এদিকে উচ্চ আদালত মহাসড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের ঘোষণার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এ অরাজকতা বন্ধ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদ্যোগ চোখে পড়েনি কারো। সম্প্রতি যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণায় নড়েচড়ে উঠেছে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো। পুলিশ বলছে, মহাসড়কের বিষয়টি সড়ক ও জনপদের (সওজ)।

সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে চৌদ্দগ্রাম, মিয়াবাজার, সদর দক্ষিণের সুয়াগাজী, পদুয়ারবাজার, কোটবাড়ি রাস্তার মাথা, ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা, বুড়িচংয়ের নিমসার, চান্দিনা, মাধাইয়া, দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ, গৌরীপুর এলাকায় মহাসড়কের উপর রয়েছে যানবাহন অবৈধ স্ট্যান্ড, ভাসমান দোকান-পাট ও সড়কের পাশে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখানে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের লেগুণা, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড তৈরি ছাড়াও যাত্রী উঠানামা করছে। তাদের দেখাদেখি ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন বাহন থেকে পণ্য উঠানামানো হয়। ফলে দাউদকান্দির গৌরীপুর এলাকায় মহাসড়কে চলাচলরত দ্রুতগতির যানবাহনের চালকে অনেকটা বাধ্য হয়েই গাড়ির গতি কমাতে হয়। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে যানবাহনের চালক-যাত্রীসহ পথচারীদেরও।

এদিকে কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার এলাকায় রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ কাঁচামালের বাজার। সারাদেশ থেকে শত শত ট্রাক বোঝাই করে শাক-সবজি পাইকার ও মৌসুমী ফল বিক্রেতারা এখানে নিয়ে আসেন। রাত যত গভীর হয় ততই ব্যস্ততা বাড়ে এই বাজারের। ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম থেকে আসা শত শত পাইকাররা এই বাজার থেকে পণ্য নিয়ে যান। বুড়িচং উপজেলা প্রশাসন প্রতি বছর দরপত্রের মাধ্যমে এই বাজারের ইজারা দিয়ে থাকেন। কিন্তু একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে মহাসড়কের অনেক স্থানে অস্থায়ী আড়ৎ নির্মাণ করে ব্যবসা করছে মাসের পর মাস। ফলে প্রতিদিন সারাদেশ থেকে আসা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের মালামাল সড়কের পাশে, কখনো বা উপরে রেখেই উঠানামা করেন। এ সময় শ্রমিক, ক্রেতা-বিক্রেতা ও যানবাহনের কারণে মহাসড়কের নিমসার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী বিলাস বহুল একাধিক বাসের চালক জানান, নিমসার এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশ ছাড়াও রোড ডিভাইডারের উপরও চলে কেনাবেচা। দুর্ঘটনা এড়াতে বাধ্য হয়েই ধীর গতিতে যানবাহন পারাপার হয়। ফলে রাত ১২ টার পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। সকাল ৮-৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে এই যানজট চলতে থাকে।

মহাসড়কে অবৈধ বাজারের বিষয়ে জানতে চাইলে নিমসা বাজারের ইজারাদার সামসুল হক মুন্সী বলেন, সরকার নির্ধারিত স্থানে না বসে অনেকেই সড়কের পাশে আড়ৎ পরিচালনা করছে। আমরা তাদেরকে সরকার নির্ধারিত জায়গায় সরে যেতে বললেও ব্যবসায়ীরা সেটা কানে নিচ্ছে না। অপর দিকে ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীন মহাসড়কের উপর রয়েছে ৩টি মারুতি (যাত্রী বহনে ছোট যান) ও একটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। নাম না প্রকাশের শর্তে সওজ’র একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানান, সওজ বিভাগের অধীন মহাসড়কে ইজারার মাধ্যমে চালু থাকা এসব যানবাহন থেকে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি হচ্ছে। সড়কের উপর দিনভর গাড়ি রেখে যাত্রী উঠানামা চলছে। এছাড়া এখানেই ‘গ্রাম বাংলা’ নামের একটি বাস কোম্পানি প্রিতিদিন মহাসড়কের উপর বাস রেখে চট্টগ্রাম-ফেনী রুটে চলাচল করছে।

একইভাবে কোটবাড়ি রাস্তার মাথায়, পদুয়ারবাজার, সুয়াগাজী এলাকায়ও সড়কের উপর রয়েছে বেশ কিছু ভাসমান দোকান, যানবাহন স্ট্যান্ড। এখানেও চলছে চাঁদাবাজি। ফলে প্রতিনিয়ত দ্রুতগতির যানবাহন চালকদের এখানেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রশাসন রয়েছে একেবারেই নিরব।

হাইওয়ে পূর্বাঞ্চলের (কুমিল্লা) পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, বিষটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার।

জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইমরুল হাসান জানান, তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব। আর কুমিল্লা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার দ্রুতই অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার কথা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close