আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

ভারতে মাদ্রাসার সংস্কার নিয়ে বিতর্ক

আসামের শিক্ষামন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় সহায়তায় পরিচালিত মাদ্রাসা ও টোল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। আর এতে আগে থেকোই উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মন্ত্রী বলেছেন, এই স্কুলগুলো ‘সাধারণ স্কুল’ এর মতো হবে। এর আগে শর্মা বলেছিলেন, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সরকারের পক্ষ থেকে বেতন দেওয়া হবে। তবে মাদ্রাসা যদি ব্যক্তি উদ্যোগে অনুদান নিয়ে পরিচালিত হয় তবে সরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করবে না। সরকার সেখানে কিছু করতে চাওয়া না। শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন রয়েছে।

কয়েক বছর আগেই শর্মা কংগ্রেস সদস্য ছিলেন। সেখান থেকেই শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৬ সালে তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন। আসামে বর্তমানে ৭০৭টি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ৬১৪টি নিবন্ধিত। এছাড়া খারিজা ও হাফেজি সুক্লও রয়েছে। তবে মাত্র ৯৭টিতে সরকারি সহায়তা মেলে।

শর্মার হঠাৎ করে এই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ায় শুধু শিক্ষা ব্যবস্থাতেই শঙ্কা তৈরি হয়নি। বরং সেখানে উগ্র ইসলামিস্টদের উত্থানের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এছাড়া এই ঘোষণার সময়টাও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি দিল্লিতে শারজিল ইমামের বক্তব্য নিয়ে ঝড় তৈরি হয়েছে। তিনি বলেছিলেন আসামকে ভারতে থেকে আলাদো করে ফেলা উচিত। শিলিগুরিতে মুসলিমদের স্বাধীন করা উচিত। তিনি আরো অভিযোগ করেন, বাংলভাষী মুসলিম ও হিন্দুদের আসামে শিরñেদ করা হচ্ছে। তার এই কথায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর তাকে বিহারে নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়।

সম্প্রতি এক জনসভায় হেমন্ত শর্মা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি আসামে আরবি মাধ্যমের স্কুলগুলোর বিরোধিতা করেন। তিনি এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর অনুদানকারীদের বিরুদ্ধেও দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। বিজেপি কট্টরপন্থিরা এর আগেও এই ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, এখান থেকেই ?উগ্রবাদ জন্ম নিচ্ছে। তারা নির্দিষ্ট করে বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে যারা পড়াশোনা করেন তাদের অল্প বয়স থেকেই উগ্রবাদী ধারণার জন্ম নেয়। বেশির ভাগ মাদ্রাসাই সরকারি অর্থায়ন কিংবা ইসলামি নেতা ও মাওলানাদের অর্থায়নে চলত। কিন্তু তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। এছাড়া শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে সরকারি কমিটিকেও স্বাগত জানায়নি মাদ্রাসগুলো। তারা স্বায়ত্তশাসনের দাবি করে নিজেরাই সিলেবাস তৈরি করে।

এমন দৃশ্য শুধু আসামেই নয়। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও উগ্রবাদের জন্য মাদ্রাসাকে দায়ী করেছিলেন। তার পাঁচ বছরে বাংলাদেশি সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৩০০টি মসজিদ তৈরি হয়েছে। তবে তিনি খুব কট্টর অবস্থানে যেতে পারেননি। বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত ভোট না পেয়ে এই দাবি করছেন রাজনীতিবিদরা।

হাতে থাকা আলামত অনুযায়ী মনে হতে পারে যে এই ইসলামি স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে। তারপরও এই মাদ্রাসার সিলেবাস পরিবর্তনে খুব বেশি উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকারই। পূর্বাঞ্চলে তো নেতাদের ভেতরে সংখ্যালঘু ভোট হারানোরও শঙ্কা কাজ করে। এদিকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সরকার অনেক কঠোর ভূমিকা নিয়েছে। তারা মাদ্রাসায় সিলেবাস পরিবর্তন করেছে। সাধারণ স্কুলের মতো সিলেবাস তৈরির চেষ্টা করেছে। কট্টরপন্থি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা ও দিল্লির সরকারের মধ্যে একটি সমন্বয় হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী থাকার গোয়োন্দ তথ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে প্রায় ৫০ জনকে গ্রেফতারও করা হয়।

এছাড়া ভারতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বোমা হামলাসহ বেশ কিছু অবৈধ কর্মকা-ে জড়িত হয়ে পড়ার খবরও মিলেছে। তাদের অনেকে সিøপার সেল হিসেবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে যোগদানও করেছে। বাংলাদেশের জেএমবি পাকিস্তানের এইচএম গোষ্ঠীরও নাম এসেছে। কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় ছিল।

শিক্ষামন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে কংগ্রেস। আসামের কংগ্রেস নেতা রিপুন বোরা বলেন, সংবিধান যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যেকোনো ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার পূর্ণ অধিকার দিয়েছেন। অধ্যায় ২৮ ও ৩০ অনুযায়ী এই অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। শর্মার দাবি শুধু ধর্মীয় বিষয়ই নয় এটা সংবিধানের লঙ্ঘনও।

অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস এর নেতা বদরুল ইসলাম বলেন, এই পদক্ষেপ একদমই সাম্প্রদায়িক ছিল। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে আসামের মাদ্রাসা বোর্ড। তারা জানায় ১৯৩৪ সাল থেকে আসামের মাদ্রাসা চলছে। সে বছরই আসাম শিক্ষা আইন পাস হয়। শর্মার প্রস্তাব তাই সংবিধানবিরোধী আর এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু বানানো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close