বিশ্বকাপের আগে মেসির সাক্ষাৎকার
আর মাত্র ৬ দিন বাকি। এরপরই পর্দা উঠবে রাশিয়া বিশ্বকাপের। সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা এখন ব্যস্ত দিন গণনায়। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ৩২টি দলও। প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গ ভেঙে জালে বল জড়ানো, মাঝমাঠের কর্তৃত্ব দখল, নিজেদের রক্ষণভাগ নিয়ে নানা কৌশল আঁটা নিয়েই চিন্তা-ভাবনায় সময় কাটছে দলগুলোর কোচ-খেলোয়াড়দের।
পাঠক মনে কৌতূহল হতেই পারে, রাশিয়া বিশ্বকাপ নিয়ে কী ভাবছেন আর্জেন্টিনার প্রাণ ভোমরা লিওনেল মেসি?
বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই মহাযজ্ঞের ২১তম আসরের মূল লড়াইয়ে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামার আগে স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মুন্ডু দেপোর্তিভোকে দেওয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে বার্সেলোনা থেকে বিশ্বকাপভাবনা - সব নিয়েই কথা বলেছেন আর্জেন্টিনার এই মহা তারকা।
প্রতিদিনের সংবাদ অনলাইন পাঠকদের জন্য মেসির সেই সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ব্যর্থতা
এ ভাবে চলতে পারে না। তিন বার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলাম আমরা। এই বাধাটা আমাদের টপকাতেই হবে। আরও একটা বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বার্সেলোনার অধরা থেকে যাবে, এটা হতে দেওয়া যায় না। বার্সেলোনা ক্লাবের সেটা প্রাপ্যও নয়। পরের বছর আমাদের চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে। রোমার কাছে হারের পরে আমাদের খুব রাগ হয়েছিল। ওরা অবশ্য খুব ভাল খেলেছিল। কিন্তু আমাদের এইভাবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নেওয়াটা মেনে নিতে পারিনি।
জিনেদিন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া
আমিও অবাক হয়েছি। কেউ ভাবতেই পারেনি এভাবে রিয়াল থেকে বিদায় নেবে জিদান। ওর ব্যক্তিগত কোনো কারণ নিশ্চয়ই ছিল। যা কেউ জানে না। তবে সত্য হলো, জিদান খুব ভালো অবস্থানে থাকতেই সরে গেল। রিয়ালের ম্যানেজার থাকাকালীন ও সব রকম শিরোপা জিতেছে। জিদান সম্পর্কে কোনো খারাপ কথা কেউ বলতে পারবে না।
রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদ ভবিষ্যৎ
আমি আসলে, জানি না কী হবে। এটাও বলতে পারব কেন সে এমনটা বলেছে। তবে এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে। রিয়ালে সে থাকবে কি না, একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। যা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
বার্সেলোনায় অ্যান্টনিও গ্রিজম্যান
আমি সবসময়ই বলে এসেছি, গ্রিজম্যান দুর্দান্ত একজন ফুটবলার। বড় ফুটবলার হলে তাদের পক্ষে অন্যদের সঙ্গে খেলাটা সহজ হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। এই মুহূর্তে ও দারুণ একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গ্রিজম্যানের বার্সেলোনায় আসা এখনো শতভাগ নিশ্চিত নয়।
আমরা বিশ্বের সেরা দল হতে চাই। তাই সেরা ফুটবলারদেরই দলে চাইব। গ্রিজম্যান বার্সেলোনায় এলে সেটা কোচের কাজ হবে তাকে কীভাবে খেলাবে, তা ঠিক করা।
নেইমারের বার্সেলোনায় প্রত্যাবর্তন
ব্যক্তিগতভাবে বললে, অবশ্যই আমি এটা চাইব। সে দুর্দান্ত একজন ফুটবলার। এটা অবশ্যই ভালো হতো যদি নেইমার বার্সেলোনায় ফিরে আসে। কিন্তু জানি সেটা হওয়া খুব কঠিন। তার সঙ্গে কাটানো সময়গুলো সত্যিই দুর্দান্ত। যদি আমাকে বলেন, তাহলে আমি চাইব অবশ্যই সে ফিরে আসুক।
নেইমারের রিয়াল মাদ্রিদ যাত্রা
আমি কিছুতেই চাইব না, রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিক নেইমার।
নিজের ফুটবল ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা
জাভি (হার্নান্দেজ) কাতারে গিয়েছে, ইনিয়েস্তা জাপানে। আমি কী করব? এখনো তা ঠিক করিনি। যেকোনো জায়গাতেই যেতে পারি। তবে তার আগে দেখতে হবে আমার পরিবার কী চায়, দেখতে হবে সবকিছু কীভাবে চলছে। এটা আসলে একরাতে ঠিক করে ফেলার মতো ব্যাপার নয়।
আমার আমেরিকাতে বা অন্য কোথাও যেয়ে খেলতেও কোনো সমস্যা নেই...।
আমি সবসময়ই বলে এসেছি, ইউরোপে যেমন আমি বার্সাতেই শেষ পর্যন্ত থাকতে চাই। তেমনি আমি আর্জেন্টিনায় নিউওয়েলসের হয়ে শেষ পর্যন্ত খেলে যেতে ভালোবাসব। কিন্তু আমি জানি না, নিউওয়েলসে ফুটবল জীবন শেষ করব কি না। এটা অন্য কোথাও হতে পারে। এ ব্যাপারে আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। দেখা যাক, কী হয়।
সতীর্থদের সঙ্গে বিশ্বকাপে লড়াই
জানি, বিশ্বকাপে বার্সেলোনার অনেকের সঙ্গেই লড়াই হবে। বেশ কয়েকজন সতীর্থের সঙ্গে এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি কথা বলেছি, মজা করেছি। ওরা বিভিন্ন দেশের হয়ে বিশ্বকাপে খেলবে। অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তবে সবার আগে আমার ভাবনায় আইসল্যান্ড। গ্রুপের প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কেমন প্রতিপক্ষ আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ড খুব লড়াকু দল। ওদের রক্ষণটাও খুব ভালো, যা ২০১৬ সালের ইউরোতেই বোঝা গেছে। তারা খুবই সংগঠিতভাবে ফুটবল খেলে। তাদের বিপক্ষে খেলাটা মোটেই সহজ হবে না।
বিশ্বকাপ নিয়ে নিজের ভাবনা
এই ব্যাপারটা আমাকে খুবই গর্বিত করে যে, বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ চান আমি যেন বিশ্বকাপটা হাতে তুলি। এটা সত্যিই গর্বিত হওয়ার মতো একটা ব্যাপার। তারা আমাকে বিশ্বকাপজয়ী তারকা হিসেবে দেখতে মরিয়া। এটা বেশ চিত্তাকর্ষক। আশা করি, রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতে আমি তাদের আশা পূর্ণ করতে পারব।
রাশিয়ায় কারা নজরে থাকবে
ব্রাজিলের নেইমার আর কোটিনহো (ফিলিপে) আছে। স্পেনের আছে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও ডেভিড সিলভা। জার্মানির হয়তো সেভাবে কোনো একক তারকা নেই, কিন্তু দল হিসেবে ওরা খুব ভালো। এর পর ধরুন বেলজিয়াম। ওদের ইডেন অ্যাজার্ড এবং কেভিন দ্য ব্রুইন খুব ভালো ফুটবলার। ফ্রান্সের আছে কিলিয়ান এমবাপে, গ্রিজম্যান। এই বিশ্বকাপে অনেক দলেই খুব ভালো ফুটবলার আছে।
বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে মেসির চাওয়া
যে কাউকেই। যদি সেটা আমাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল হয়, তাতেও কোনো আপত্তি নেই।
আর্জেন্টাইন ভক্তদের জন্য মেসির বার্তা
আমি যেটা সবসময়ই বলে এসেছি, এখানে আসার আগেও বলেছি। আমরা সবসময়ই বিশ্বকাপ জিততে চাই। যদিও আমরা ফেভারিট নই। তবে আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি। রাশিয়া পৌঁছানোর আগে প্রস্তুতির কোনো কমতি রাখছি না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু উজার করে দেব।
পিডিএসও/রিহাব