মুফতি মুহাম্মাদ যুবাইর খান
অসুস্থ ও অক্ষমদের জন্য রোজার বিকল্প
আজ বৃহস্পতিবার, পবিত্র মাহে রমজানের ১৪তম দিন। রমজানের রোজা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। রমজান শুধু আত্মশুদ্ধির শিক্ষাই দেয় না, আত্মনিয়ন্ত্রণেরও শিক্ষা দেয়। রোজার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, মানুষের স্বাস্থ্যগত উন্নতি সাধন করা। রোজা রাখলে অনেকে স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রোজায় কারো স্বাস্থ্য নষ্ট হয়েছে বা রোজা রেখে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে, এমন কোনো ঘটনার কথা আজ অবধি শোনা যায়নি। রোজা কষ্টকর ইবাদত এবং রোজার দ্বারা শরীরে চাপ পড়ে বলে অনেকেই রোজা ছেড়ে দেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শরিয়তের বিধান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া রোজা পরিত্যাগ করার জায়েজ নেই। রমজানে প্রত্যেক সুস্থ, সক্ষম নারী-পুরুষের জন্য রোজা রাখা ফরজ। কিন্তু যারা অসুস্থ ও রোজা রাখতে অক্ষম তাদের জন্য রয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা, তাদের জন্য আছে বিশেষ ছাড়।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রোজা নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের (এক মাস), তবে তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে, অন্য সময় এর সমপরিমাণ সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর এটা যাদের অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের কর্তব্য হচ্ছে, এর পরিবর্তে ফিদিয়া অর্থাৎ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ আরো বেশি দান করে, এটা তার পক্ষে আরো অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন তথা রোজা রাখাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)।
উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এত সুন্দর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয় না। আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অসুস্থ ও সফররত ব্যক্তিকে এ সুযোগ দিয়েছেন যে, যদি সে রমজান মাসে রোজা পালনের ফলে রোগ বেড়ে যাওয়া বা মৃত্যুর আশঙ্কা বোধ করে, অথবা সফরে অসুবিধা এবং কষ্টের সম্মুখীন হওয়ার ভয় থাকে, তবে সে অসুস্থ অবস্থায় ও সফরের দিনগুলোতে রোজা ভঙ্গ করবে এবং এর পরিবর্তে নিষিদ্ধ দিনগুলো ব্যতিরেকে অন্য দিনগুলোতে সেগুলোর কাজা করবে। আয়াতে অতিশয় কষ্ট বলতে বোঝানো হয়েছে, অতি বার্ধক্য বা এমন চিরস্থায়ী রোগ যা সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম, তার জন্য রোজা না রেখে ফিদয়া অর্থাৎ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুচিন্তিত অভিমত হলো, রোজা স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি তো করেই না, বরং শরীর ও মনের উন্নতি লাভেও সহায়ক। পেপটিক আলসার, ডায়াবেটিক, হৃদরোগী, বাত-ব্যথার রোগীরাও সরাসরি রোজায় উপকার পান। পেপটিক আলসারের কারণে অনেকেই রোজা ছেড়ে দেন। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, পেপটিক আলসারে রোজা বিশেষ উপকারী। আল্লাহ তায়ালা রমজানের বাকি দিনগুলোতে শারীরিকভাবে সুস্থ রেখে রমজানের যথাযথ হক আদায় করে রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
"