গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৩ মে, ২০১৮

খুলনায় আজ মধ্যরাতে প্রচারণা শেষ

*দুই ওয়ার্ডে ইভিএম এবং তিন কেন্দ্রে সিসিটিভি *ইসির প্রস্তুতি শেষ, মালামাল বিতরণ কাল *চার স্তরের নিরাপত্তায় ৮ হাজার ফোর্স *নৌকা ও ধানের শীষের লড়াই পরশু

খুলনা সিটি করপোরেশন ভবন

একদিন পরই খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিস) নির্বাচনের ভোট। এ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের নিরাপত্তার দায়িত্ব আজ রোববার সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। চার স্তরের নিরাপত্তায় থাকবে আট হাজারের বেশি ফোর্স। সঙ্গে থাকছে ৪৯৭২ জন নির্বাচন কর্মকর্তা। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা তল্লাশি। কমিশনের অনুমোদিত স্টিকার ব্যতীত মোটরসাইকেল চলাচলেও আরোপ হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আর ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকবে নির্বাচনী এলাকায়। ভোটার ব্যতীত সব ধরনের বহিরাগতদের এলাকা ছাড়তে আগেই পরিপত্র জারি করেছে কমিশন।

নির্বাচন কমিশন থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছাড়া সাধারণ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার না করতে। এদিকে, আগামীকাল সোমবার থেকে নির্বাচনের সামগ্রী প্রিসাইডিং অফিসার এবং কেন্দ্র পাহারায় থাকা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে রিটার্নিং অফিসারের নির্বাচনের ফল প্রকাশ করা সমন্বয় কেন্দ্র থেকে। থাকছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং তিনটি কেন্দ্রে গোপন ক্যামেরা। রাখা হয়েছে ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক।

প্রার্থীদের প্রচারণাও আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। কারণ ভোটের নির্ধারিত ৩২ ঘণ্টা আগেই শেষ হয় প্রচারণা। টানা কয়েকদিনের প্রচারণা ছাপিয়ে তাই আজ বেশি ব্যস্ত থাকবেন সিটির মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটারদের কাছে টানতে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে বিরামহীন ছুটে চলবেন তারা।

মেয়র পদে ৩৯ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৫টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সব ছাপিয়ে আলোচনায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হবে নৌকা-ধানের শীষের মধ্যে। নির্বাচনে শঙ্কাও কম নয়। নৌকার প্রার্থীর আস্থা রয়েছে ইসির প্রতি। বিএনপির প্রার্থীর দাবি তাদের ভরসা ভোটারদের ওপর। ইতোমধ্যে বিএনপি প্রার্থী দুইদিন ধরে প্রেস ব্রিফিং করে অভিযোগ করছে, দলীয় নেতাকর্মীদের পুলিশ হয়রানি করছে। তবে, নির্বাচন কমিশন এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করে আসছে। এখন দেখার বিষয় আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ থেকে কিভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করেন, মানুষ তাকিয়ে আছেন তাদের দিকে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে একটি বিদেশি সংস্থা এবং দেশীয় বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষক সংস্থার পাশাপাশি প্রিন্ট, টিভি মিডিয়া এবং অনলাইন গণমাধ্যমের কয়েকশ সাংবাদিক ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অবস্থান করছেন।

নির্বাচনে প্রস্তুতির বিষয়ে কমিশন সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, খুলনা সিটি নির্বাচন নিয়ে কমিশনের তরফ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত রোববার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামছেন। আশা করছি, কুমিল্লা ও রংপুর সিটির মতো অপ্রীতকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হবে। আর ভোটের দিন কমিশন ভোটের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে, যোগ করেন কমিশন সচিব।

আর খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা মো ইউনূচ আলী বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। এখনো শাস্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। আশা করছি, বাকি দুই দিন নির্বাচনের পরিবেশ একই থাকবে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাসহ প্রায় আট হাজার নির্বাচন কর্মকর্তা এই নির্বাচনে যুক্ত আছে। তার মধ্যে ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকবে ছয় হাজার ৮১৬জন কর্মকর্তা।

প্রচারণা : প্রচারণা আজ রোববার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। এরপর থেকে সিটির মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সির প্রার্থীরা আর কোনো ধরনের প্রচারণা চালাতে পারবেন না। ভোটের আগের দিন নিজস্ব বলয়ে নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রার্থীদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকবে।

৮০০০ আইনশৃঙ্খলার সদস্য : সিটি নির্বাচনে আট হাজারের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্র পাহারায় থাকবে পুলিশ, আনসার ও আর্মস পুলিশ ব্যাটানিয়ানের সমন্বয়ে ছয় হাজার ৮১৬ জন এবং কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ১৬ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অর্থাৎ ৩২০জন, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ৩২ পেট্রোল অর্থাৎ ২৬০ জন, পুলিশ ১১ টিম এবং আনসার ৩ ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে ১২টিম।

নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ৭৩ জন : প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে তাৎক্ষণিক জরিমানা ও শাস্তির পাশাপাশি সামারি ট্রায়াল করে দন্ড দেবেন এসব ম্যাজিস্ট্রেটরা। এর মধ্যে ৩১ ওয়ার্ডে ৬০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৩ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট এ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।

৪৯৭২ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : এ নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার (ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন চার হাজার ৯৭২জন। এর মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ২৮৯ জন, প্রতিটি কক্ষে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ১৫৬১ জন এবং প্রতিটি কক্ষে দুইজন পোলিং অফিসার হিসেবে ৩১২২জন।

ইসির ৩১ নিজস্ব পর্যবেক্ষক : ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট কার্যক্রমের গতি-প্রকৃতি, ভোটার, প্রার্থী-কর্মী সমর্থকদের গতিবিধি এবং সর্বোপরি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন সব কিছু সাধারণ পোশাকে ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করবেন ইসির এই নীরব পর্যবেক্ষকরা। ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম দেখলে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত এবং প্রয়োজনে কমিশনকে ঘটনার তথ্য সম্পর্কে জানাবেন তারা। এসব নিজস্ব পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে ৩১ জন, যার মধ্যে ইসির যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেনকে সমন্বয়ক, উপ-সমন্বয়ক মো. শাহাদাত হোসেন রয়েছেন।

৫ কেন্দ্র ও ওয়ার্ডে ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা : ভোটার সচেতন এবং শিক্ষিত ও শহর কেন্দ্রিক ২৪ ও ২৭ নং ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। যান্ত্রিক জ্ঞান-সম্পন্ন মানুষ যাতে বুঝে-শুনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে জন্য নগরীর ওই দুটি ওয়ার্ডকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিবেচনায় সিটির ৩টি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, যার মধ্যে বিএল কলেজ কেন্দ্র, পিটিআই কেন্দ্র এবং পাইওনিয়র কলেজ কেন্দ্র। এসব প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য আইটি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হয়েছে।

তিন পদে ১৯১ প্রার্থী : খুলনা সিটি নির্বাচনের তিন পদে ১৯১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে পাঁচজনের মধ্যে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক, বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির মিজানুর রহমান এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুজ্জাম্মিল হক। আর সাধারণ কাউন্সিলর ৩৮ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ১৪৮জন।

ভোট কেন্দ্র, কক্ষ এবং ওয়ার্ডের সংখ্যা : সিটিতে ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড এবং ভোটকেন্দ্র ২৮৯টি এবং ভোটকক্ষ ১৫৬১টি।

৪৯৩০৯৩ জন ভোটার : খুলনা সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন; যার মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ জন এবং মহিলা ভোটার দুই লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। ভোটার সংখ্যানুপাতে মহিলার চেয়ে পুরুষ ভোটার চার হাজার ৭৭৯ জন বেশি।

মালামাল সামগ্রী : সিটি নির্বাচনের ভোটের সামগ্রী সোমবার সকাল থেকে কেন্দ্র পাহারায় থাকা পুলিশ এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা র‌্যাব-পুলিশের সহায়তায় এসব সামগ্রী বিতরণ করবেন।

গত এপ্রিলে খুলনা ও গাজীপুর সিটির তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তফসিল অনুযায়ী, ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হয় আগামী ১ মে। ইতোমধ্যে আদালতের নির্দেশ স্থগিত হয় গাজীপুরের ভোট, যা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২৮ জুনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে কমিশনকে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খুলনা সিটি করপোরেশন,কেসিসি নির্বাচন,খুলনা সিটি করপোরেশন ভবন,নির্বাচন কমিশন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist