সম্পাদকীয়

  ২৫ জুলাই, ২০১৯

পাটের মোড়ক সময়ের দাবি

একসময়ের সোনালি আঁশ এখন কৃষকের বিষফোঁড়া। শুধু কৃষকেরই নয়, দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য এই সোনালি আঁশ এখন এক বিশাল আকৃতির বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এ রকম হওয়ার কথা ছিল না। সার্বিকভাবে পাটের প্রতি ধারাবাহিক অবহেলাই আজ এই সোনালি সম্পদ তার সব ঐতিহ্য হারিয়ে পথের ভিখারিতে পরিণত হয়েছে। আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষক থেকে শুরু করে সম্পৃক্ত সবাইকে। খেসারত দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রকেও। অথচ সামান্য কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে এ অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও (অন্তত ৪০ শতাংশ) বেরিয়ে আসা সম্ভব হতো। প্রশ্ন হলো, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে কে? না..., বাস্তবায়ন করার মতো কারো খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। চেষ্টা যে করা হয়নি, এমনটাও নয়। তবে কোনো চেষ্টাই কাজে আসেনি। আমরা সেই একই তিমিরে অবস্থান করছি। সার্বিক অবস্থায় অবনতির মাত্রা বেড়েছে।

অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা নামমাত্র। গত দুই বছর রফতানিতে চলছে মন্দা। ফলে পাটপণ্যের মজুদ বেড়ে এখন ৭০ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। দেশেও বিক্রিবাটা নেই। রফতানিও থমকে গেছে। অবিক্রীত পণ্যের মজুদ নিয়ে বিপাকে আছেন বেশির ভাগ উদ্যোক্তা। গুদামজাত এই পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। বিক্রি না হওয়ায় সক্ষমতার তুলনায় উৎপাদন অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে কারখানা। এরপরও মজুদ ধীর গতিতে হলেও মজুদ বাড়ছে। পাশাপাশি গুদামে পণ্য সংরক্ষণের ব্যয়, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের তাগাদাও অসহনীয় করে তুলছে ব্যবসায়ীদের। ঠিক এ রকম এক পরিস্থিতির মধ্যে অনেকটা কারারুদ্ধ হয়ে পড়েছে সোনালি আঁশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চার বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটপণ্যকে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের মর্যাদা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও তা কার্যকর হয়নি। এই মর্যাদা দেওয়া হলে অন্যান্য কৃষিপণ্যের মতো পাটপণ্য রফতানি করে উদ্যোক্তারা ২০ ভাগ প্রণোদনা পেতেন, যা সোনালি আঁশের সুদিন ফেরাতে সহায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পেত। দ্বিতীয়ত; পাটের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সুরক্ষায় ২০১০ সালে আইন করে সরকার। সেখানে বিভিন্ন পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহারে বাধ্যবাধকতার বিধান করা হয়। আইনে অমান্যকারীদের জেল-জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির বিধানও রাখা হয়। শাস্তির বিধান রাখা হলেও আইন অমান্যকারীদের সংখ্যা কমানো যায়নি। বাস্তবতা বলছে, তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। পলিথিন ব্যাগে ছয়লাপ হয়ে গেছে দেশ। যদিও পলিব্যাগ ব্যবহার এ দেশে নিষিদ্ধ।

নিষিদ্ধের প্রতি মানুষের আকর্ষণ স্বভাবজাত। বিশেষত আমাদের দেশে তা প্রকট। আর সে কারণেই তো বাড়ছে মাদক বাণিজ্য এবং মাদকের ব্যবহার। বাড়ছে দুর্নীতি। একে রোখার শক্তি যেন আমরা হারিয়েছি। ব্যক্তি মানুষ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত, সবারই অবস্থা যেন একই সমান্তরালে। তবে মানুষকে যখন সমাজবদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকতে হবে, তখন সমাজের কিছু রীতিনীতিও তাকে মানতে হবে। আর সেই রীতিনীতি মানতে গিয়ে একই মানুষকে নিষিদ্ধের প্রতি স্বভাবজাত আকর্ষণ থেকে সরে আসতে হবে। এটাই বিজ্ঞান। আমরা মনে করি, এই বিজ্ঞানকে প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকেই যেতে হবে কঠিন সিদ্ধান্তে। পলিব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে যেতে হবে জিরো টলারেন্স নীতিতে। পাটকে রক্ষার জন্য ঘর থেকেই শুরু হোক পলিব্যাগের বিরুদ্ধে অভিযান। শুরু হোক পাটের মোড়কের ব্যবহার।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাটের মোড়ক,সম্পাদকীয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close