ড. ফোরকান আলী

  ২২ জুলাই, ২০১৯

ঈদুল আযহার ত্যাগ ও মহিমা ।। পর্ব ৩

তৃতীয় পর্ব হজ্ব মুসলমানদের ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র কাবাঘর হেফাজতের মালিক মহান আল্লাহ নিজে। বিশ্ব মুসলমানদের মিলন মেলা ঘটে হজ্বের মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরীফে।

কুরবানির আগে ও পরের সতর্কতা: কুরবানি তো দিচ্ছেন কিন্তু কুরবানির আনুসাঙ্গিক সাবধানতাগুলো ঠিক ঠিক জানা আছে? তা না হলে কুরবানির আসল উদ্দেশ্যটাই ব্যহত হতে পারে। তাই সময় থাকতেই জেনে নিন কুরবানির সাবধানতাগুলো। কুরবানির জন্য যে কোনো ধরনের গরু, ছাগল, মহিষ বাছাই করলেই হবে না। লক্ষ্য রাখতে হবে এগুলো কুরবানির জন্য যোগ্য বা হালাল কিনা। কুরবানির পশু কেনবার আগে খানিকটা সতর্কতা অবলম্বন করলেই এ সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়। পশু কেনার প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে আপনার বাছাইকৃত পশুটির কুরবানির বয়স হয়েছে কিনা। অর্থাৎ পশুটি পূর্ণ বয়স্ক কিনা। আর এটা বুঝতে হলে আপনাকে গরুর দাঁত দেখতে হবে। কম বয়সী গরুর দাঁতের সংখ্যা চারটি এবং পূর্ণবয়স্ক গরুর আটটি দাঁত থাকে। এরপর আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে কুরবানির পশুটি গর্ভবতী কিনা। প্রয়োজনে পশু হাসপাতালে পরীক্ষা করানো যেতে পারে। পশুর শিং ভাঙ্গা আছে কিনা অথবা অন্ধ কিংবা শরীরে কোনো ধরনের ক্ষত-ঘা আছে কিনা। সেসব বিষয়ে পূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে। সর্বোপরি কুরবানির পশুটি সুস্থ-সবল আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া লক্ষ্য করতে হবে পশুটি স্বাভাবিক আচরণ অথবা ঝিমুচ্ছে কি না। যদি পশুটি ঝিমুতে থাকে অথবা খাবার ঠিক মতো না খায় তাহলে বুঝতে হবে পশুটি রোগাক্রান্ত।

আরও পড়ুন : ঈদুল আযহার ত্যাগ ও মহিমা ।। পর্ব ২

আরও পড়ুন : ঈদুল আযহার ত্যাগ ও মহিমা

কুরবানির পর্যন্ত পশুর যত্ন : কুরবানি পর্যন্ত পশুটির যত্ন-আত্তি করতে হবে। কারণ, কুরবানির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পশুটিকে সুস্থ-সবল রাখতে হবে। এজন্য পশুটিকে অবশ্যই বাসার শুকনো কোনো জায়গায় রাখতে হবে। কোনো মতেই একে ভেজা, কাদাযুক্ত বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় রাখা যাবে না। পশুর রাখার জায়গায় প্রয়োজনে খড় বা চট দিতে পারেন। ক্ষেত্রবিশেষে শুকনো ভ‚সিও ছিটাতে পারেন। এখন যেহেতু শীতকাল তাই পশুকে শীতের হাত থেকে রক্ষার জন্য গায়ে মোটা ছালা বা চট দিতে পারেন। পশুটিকে নিয়মিত গোসলও করাতে হবে। কুরবানির পশুর থাকার সুব্যবস্থার পাশাপাশি খাবার দিকটাও দেখতে হবে। খড়ের পাশাপাশি পশুকে দানাদার খাবারও দেয়া যেতে পারে। ঘরের ভাতের মাড়ও দিতে পারেন ভুসির সঙ্গে গুলে। সঙ্গে প্রয়োজনমত লবণ দিয়ে দেবেন। আর সম্ভব হলে সবুজ ঘাসও খাওয়াতে পারেন।

পশুর চামড়ার সংরক্ষণ: কুরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে চামড়ার কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়। অসাবধানতাবশত চামড়ার কোনো অংশের ক্ষতি হলে বিক্রির সময় সঠিক মূল্যটি নাও পেতে পারেন। এজন্য পশুর চামড়া ছাড়ানোর কাজে ধারালো ছুরি ব্যবহার করা উচিত। চামড়া ছাড়ানো হয়ে গেলে দেখতে হবে সেখানে কোনোরকম মাংস বা চর্বি লেগে আছে কিনা। যদি থেকে থাকে তাহলে তা সাবধানে ছুরি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। তারপর তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে হালকা রোদে শুকানো যেতে পারে। চামড়া ছাড়ানোর সাত থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। গরমকালে দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে এবং শীতকালে চার থেকে ছয় ঘণ্টার চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েকভাবে চামড়া সংরক্ষণ করা যায়। এর মধ্যে আছে লবণ পদ্ধতি, রোদ শুকানোর পদ্ধতি এবং হিমাগার পদ্ধতি। আপনার সুবিধামত এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা : অবশেষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেহেতু আপনি দেশের সচেতন একজন নাগরিক আর তাই আপনি কুরবানির পরবর্তী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অন্যান্যদের চেয়ে বেশি সচেতন। সেই সচেতনতা আরো খানিকটা বৃদ্ধি করতে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি কুরবানি-উত্তর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার আরো কিছু বিষয়। প্রথমেই পশু জবাই করার সময় সংশ্লিষ্ট জায়গায় গর্ত করে নিতে পারেন। জবাই হয়ে গেলে সেই রক্ত মাটি চাপা দিয়ে দিন। আর গর্ত না করা গেলে জবাইকৃত পশুর রক্ত সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে ফেলুন। জবাই করবার জায়গাটি বিøচিং পাউডার অথবা অন্যান্য জীবাণুনাশক নিয়ে পরিষ্কার করুন। কুরবানির বর্জ্য অর্থাৎ গোবর, নাড়ি-ভ‚ড়িসহ অন্যান্য উচ্ছিষ্ট নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে অথবা ময়লার কনটেইনারে ফেলুন। যাতে সিটি করপোরেশনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাহিনী তা দ্রæত সরিয়ে নিতে পারে। সিটি করপোরেশন কুরবানির দিনের দুপুর ১২টার পর থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযানে নামবে।

হজ্ব ও কুরবানি : প্রতিবছরই মুসলমানদের মহামিলনের সমারোহ ঘটে হজ্বের সময়। তৌহিদী পতাকাতলে সমবেত হওয়ার এমন নজির অন্যকোনো ধর্মে সাধারণত পরিলক্ষিত হয় না। একই ঐক্যতান ও একই উদ্দেশ্য লাভের আশায় মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি এই একনিষ্ঠ প্রয়াস সমগ্র বিশ্বকে অভিভ‚ত করে তোলে। নানা দেশের, নানা বর্ণের এবং নানা ভাষার মানুষের মুখে যখন উচ্চারিত হয়ঃ ‘হে মহা সৃষ্টিকর্তা, আমি তোমার দরবারে হাজির হয়েছি, তুমিই একমাত্র প্রভু। নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রশংসা করছি এবং তোমার নিয়ামতের প্রত্যাশা করছি। কারণ, তুমিই সবকিছুর মালিক।’ লাখ লাখ উম্মতে মোহাম্মদীর কণ্ঠে সুমধুর ধ্বনি উচ্চারিত হয়ে আসছে গত চৌদ্দশত বছরেরও বেশি কাল ধরে। আর তৌহিদের ঘোষণাকারী হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের উচ্চারণ, নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রকাশ ও আত্মত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হচ্ছে হাজার হাজার বছর ধরে। পবিত্র হজ্ব ইসলামের পঞ্চম ও গুরুত্বপূর্ণ রোকন। হজ্বের একটি ঐতিহাসিক পটভ‚মি রয়েছে। হজ্বের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে প্রতিজ্ঞা করা। শরীয়তের পরিভাষায় সার্বিক ইবাদত যা একজন মুসলমান জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে ১৩ জিলহজ্ব পর্যন্ত বায়তুল্লাহ শরীফে পৌঁছে যথাযথভাবে পালন করেন এবং যা বিশ্বমানবতা ও তৌহিদী পয়গাম থেকে উৎসারিত ও আল্লাহপাকের নৈকট্য লাভের এক বাস্তব দৃষ্টান্ত।

চলবে-

লেখক: গবেষক ও শিক্ষাবিদ

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঈদুল আযহা,ত্যাগ ও মহিমা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close