ঠাকুরগাঁওয়ে ধারণ ক্ষমতার চারগুণ শিশু ভর্তি, শয্যায় দুজন ছাড়িয়ে মেঝেতেও রোগী
এম এ জুনাইদ কবির, ঠাকুরগাঁও ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর চাপ শয্যা ছাড়িয়ে মেঝে পৌঁছেছে। হাসপাতালে ৪৫ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে ১৬৩ জন শিশু। ফলে একই বিছানায় দুজন করে রোগী রাখা হয়েছে। সেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে এই অবস্থা দেখা গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, শীত মৌসুম শেষে এখন গরম পড়তে শুরু হয়েছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণেই হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে শিশু ওয়ার্ডে প্রায় এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ২৪ ঘণ্টায় ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ১৬৩ জন। এর আগের দিন এই ভর্তি সংখ্যা ছিল ১৭০ জনের মতো। ভর্তি ১৬৩ জন শিশুর মধ্যে ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৬, জ¦র ও সর্দির রোগী ৭০ জন, নবজাতক ১৫ জন, শ^াসকষ্টসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৩২।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে শয্যার তুলনায় ৪ গুণ বেশি শিশু ভর্তি। ফলে এক শয্যায় দুজন শিশুকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ওই ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে শিশুদের।
পঞ্চগড় থেকে আসা তিনমাস বয়সী শিশু রোগীকে নিয়ে ভর্তি রয়েছেন রোমানা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি। তাই একটি শয্যায় দুজন রোগীকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে আসার শাহিনা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত শয্যা নেই। তার কারণে বাচ্চাকে নিয়ে মেঝেতেই থাকতে হচ্ছে। এখানেই চিকিৎসা চলছে।’
২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ১৬৩ শিশু, আগের দিন ছিল ১৭০
আবহাওয়ার পরিবর্তনের হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ
লোকবল ও শয্যা সংকটে সেবা দিতে হিমশিমঠাকুরগাঁও সদরের আউলিয়াপুর ইউনিয়নের কচুবাড়ি গ্রামের লাকি আক্তার বলেন, ‘এখন দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। এর কারণে আমার ২ বছর বয়সী বাচ্চা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় মেঝেতেই ঠাঁই হয়েছে আমাদের।’
জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট (শিশু) সাজ্জাত হায়দার শাহীন বলেন,‘ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর ও পেটে ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ সময় অভিভাবকদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের প্রচুর তরল ও ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার দিতে হবে। শিশু ঘেমে গেলে জামাকাপড় পরিবর্তন ও ঘাম মুছে দিতে হবে।’
কনসালটেন্ট (শিশু) সাজ্জাত হায়দার বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডে শয্যার তুলনায় ৪ গুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এখানে জনবল সংকট রয়েছে। জনবল পেলে আমরা নির্বিঘ্নে সেবা দিতে পারব।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে শিশু রোগীর সেবা মানসম্মত হওয়ায় আশপাশের জেলার অনেক এলাকার অভিভাবক শিশুদের এখানে চিকিৎসা করান। এ কারণে এই হাসপাতালে সব সময় শিশু রোগীর চাপ থাকে। তারপরও আমাদের চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
পিডিএস/জেডকে