খলিলুর রহমান, ভালুকা (ময়মনসিং)

  ০৭ মার্চ, ২০২৪

আইনে বন এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নিষেধ থাকলেও অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে করাতকল

ভালুকায় অবৈধ শত করাতকলে বন উজাড়

ভালুকা রেঞ্জের আওতাধীন ৪৮ ও উথুরা রেঞ্জের আওতাধীন ৪২টি করাতকলের লাইসেন্স নেই

এ স’মিলটি উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নের ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ডের পাশেই অবস্থিত-প্রতিদিনের সংবাদ

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ভালুকা ও উথুরা রেঞ্জে প্রায় ১০০ অবৈধ করাতকল রয়েছে। এসব কলে উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনভূমি। প্রকৃতি হারাচ্ছে ভারসাম্য। বন আইনে বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো করাতকল স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু ভালুকায় বেশিরভাগ করাতকল স্থাপনে এ আইন শতভাগ লঙ্ঘন করা হয়েছে। সেখানে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ করাতকল বন বিভাগের ভেতরেই।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বন বিভাগের কিছুসংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চলছে এসব অবৈধ করাতকল। স্থানীয় বন বিভাগের দাবি, তারা অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। সরেজমিন জানা গেছে, ভালুকা পৌরসভার ভেতরে ২৫টি করাতকল রয়েছে। তার মাঝে ১৬টি লাইসেন্স আছে, বাকি ৯টি আবেদিত। পৌরসভার বাইরে ভালুকা রেঞ্জের আওতাধীন ৪৮ ও উথুরা রেঞ্জের আওতাধীন ৪২টি লাইসেন্সবিহীন অবৈধ করাতকল রয়েছে।

জানা গেছে, করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা-২০১২-এর ৭ ধারা অনুযায়ী রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো করাতকল স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু ভালুকায় বেশিরভাগ করাতকল স্থাপনে এ আইন শতভাগ লঙ্ঘিত হয়েছে। যেখানে করাতকল স্থাপনের কোনো আইনগত সুযোগই নেই, সেখানে বেশিরভাগ করাতকল গড়ে উঠেছে বন বিভাগের ভেতরেই। এসব করাতকলের মালিকরা সুকৌশলে গিলে খাচ্ছেন স্থানীয় বন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রিজার্ভ ফরেস্ট।

অভিযোগ উঠেছে, এসব অবৈধ করাতকলে প্রতিদিনই বনের গাছ চিরাই করা হচ্ছে। পরে গোপনে বাইরে পাচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বনের ভেতর এসব অবৈধ করাতকলের ৯০ শতাংশ মালিক কাঠ ব্যবসায়ী। কাঠ চোরদের সঙ্গে মিলমালিকদের রয়েছে দহরম-মহরম সম্পর্ক।

পরিবেশবিদরা বলছেন, করাতকল বিধিমালা না মানার কারণে সরকারি সম্পদ বন ধ্বংস হচ্ছে। একাধিক করাতকল মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মিল চালিয়ে আসছেন।

ভালুকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও পরিবেশকর্মী কামরুজ্জামান মানিক বলেন, আইন ও প্রশাসনকে তোয়াক্কা করছে না বনের ভেতরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা করাতকলগুলো। এসব করাতকলে একদিকে বন ধ্বংস করছে; অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। তাই অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদ অতীব জরুরি।

ভালুকা রেঞ্জের হবিরবাড়ী বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম খান বলেন, আমরা এরই মধ্যে চারটি অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ ও করাতকলে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করেছি। অবৈধ করাতকল বন্ধ করতে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হারুন-উর রশীদ খান জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবৈধভাবে স্থাপিত, লাইসেন্সবিহীন ৪টি করাতকল উচ্ছেদ করা হয়েছে, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উথুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা রেদুয়ানুল হক জানান, ‘উথুরা রেঞ্জে কোনো বৈধ করাতকল নেই। অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ অভিযান প্রক্রিয়াধিন।

উপজেলা বন ও পরিবেশ উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী নুর খান জানান, যারা অবৈধভাবে করাতকল চালাচ্ছেন, তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আবদুল ওয়াদুদ জানান, ‘যারা আইন মেনে মিল চালাবে, তাদের সবরকম সহযোগিতা করা হবে। অবৈধ করাতকল চালাতে দেওয়া হবে না, সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করাতকল,গাছ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close