কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

  ০৩ মার্চ, ২০২৪

স্বপ্ন ছিল বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি করবে: বৃষ্টির স্কুলের প্রধান শিক্ষক

ছবি : সংগৃহীত

আনুমানিক ৪/৫ মাস পূর্বে হঠাৎ বৃষ্টি খাতুন ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ নাম ধারণ করে একটি ফেসবুক আইডি খুলেন। সেখানে তার ওয়াল পোস্টের ছবিগুলোর মধ্যে হিন্দু ধর্মালম্বী বন্ধুদের আধিক্য এবং ওই বন্ধুদের সাথে হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়। ফেসবুকের এসব ছবিগুলোই আজ জনমনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে জীবনের শেষ পরিনতিতেও সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। ফলে মৃতুর পরও তার মরদেহ নিয়ে পরিবারকে দুর্ভোগ পোহাতে হলো’। সে কারণে আপনি যেই হোন আপনার সঠিক পরিচয়ের মূল ভিত্তি হলো পরিবার। ‘পরিবার বা নিকটাত্মীয় স্বজনদের অজান্তে নিজ পরিচয় তুচ্ছজ্ঞান, গোপন, পরিবর্তন বা ছদ্মনাম ধারণের পরিনতি শুভকর নয়’। ছাত্র জীবনের বৃষ্টি খাতুন পড়ালেখায় বেশ মেধাবী ছিল, ওর উচ্চ স্বপ্ন ছিল। বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি করবে বলে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপশি প্রস্তুতিও নিচ্ছিল’। অথচ এক উচ্ছৃঙ্খল এলোমেলো জীবন বৃত্তে চলতে গিয়ে পা পিছলে ছিটকে ঝড়ে গেলো একটা সম্ভাবনাময় প্রতিভা’।

এভাবেই মন্তব্য করে বৃষ্টি খাতুনের (অভিশ্রুতি শাস্ত্রী) (দাদা সম্পর্কীয়) নিকটাত্মীয় ও শিক্ষাগুরু কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম আরও জানান, ২০১৫ সালে বৃষ্টি খাতুন (অভিশ্রুতি শাস্ত্রী) বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক মানবিকে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজে দর্শন সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। সর্বশেষ অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা চলছিল।

রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত “দ্য রিপোর্ট” এর নির্বাচন কমিশন বিটের সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর (যার প্রকৃত নাম বৃষ্টি খাতুন) গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ায়। মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় শোকের মাতম। এলাকাবাসীসহ আত্মীয় স্বজন সবাই বাড়িতে ভীড় করে। নিহত বৃষ্টির মা’ কে শান্তনা দেবার ভাষা হারিয়েছেন প্রতিবেশীরা। নিহতের মা বিউটি বেগম ও ছোট দুই বোন একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ঝর্ণা ও দশম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা খাতুনকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন ।

এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত সাংবাদিক বৃষ্টি খাতুনের (অভিশ্রুতি শাস্ত্রী) বাবা শাবলুল আলম সবুজ রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। দরিদ্র পিতার তিনটিই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে নিহত বৃষ্টি খাতুন, মেজো মেয়ে ঝর্ণা খাতুন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর ছোট মেয়ে বর্ষা খাতুন স্থানীয় বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

কন্যা হারানোর শোকে কাতর মা বিউটি খাতুন অপলক দৃষ্টে চেয়ে আছেন। তবে ছোট বোন বর্ষা খাতুন জানায়, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে মায়ের সাথে মুঠোফোনে সর্বশেষ বৃষ্টির সাথে কথা হয়। পার্ট টাইম কাজ হিসেবে বৃষ্টি সাংবাদিকতা করলেও ওর খরচের টাকা বাড়ি থেকে মা পাঠাতো। আজ ওর মর্মান্তিক মৃত্যুর মধ্যদিয়ে আমাদের পরিবারের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো’।

নিহতের চাচা জোয়াদ আলী জানান, ‘ভাই সবুজ ঢাকায় ছোট চাকরি করে। অভাবের মধ্যেই দুই মেয়েকে বাইরে রেখে শিক্ষিত করার চেষ্টা করছিলো। গত ঈদেও বৃষ্টি বাড়ি এসে সব্রা সাথে হৈ হুল্লোর করে গেলো। সবার সাথে ঈদের আনন্দ করেছে মেয়েটি। সুস্থ মেয়েটি নাকি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।

বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আব্দুল মজিদও বৃষ্টি খাতুনের অকাল মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘বৃষ্টি মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী ছিল। অথচ নিজের পরিচয় জটিলতায় আজ তার পরিবারকে মরদেহ নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হলো। একটা মানুষ মৃত্যুর পরও নিজের পরিচয়জনিত কারণে সম্মানহানির শিকার হয় বৃষ্টি খাতুনের ঘটনা এর একটা দৃষ্টান্ত।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রধান শিক্ষক,সরকারি চাকরি,বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close