মাহমুদুল হাসান, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী

দাম বেড়েছে উপকরণের, বাড়েনি তাঁতবস্ত্র ও শ্রমের 

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে রাখাইন নারীদের হাতে নিপুণভাবে তৈরি তাঁতের বস্ত্র বেশ জনপ্রিয় থাকলেও নানা সংকটের কারণে হারাতে বসেছে এ ঐতিহ্য। উপজেলার বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবি ইউনিয়নের রাখাইন পল্লীগুলোতে ঢুকলেই কানে আসে তাঁতের টাকুর টুকুর শব্দ। দেখা মিলবে রাখাইন নারীদের। পুরুষদের তুলনায় নারীরাই এ পেশায় জড়িত বেশি। তবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আর কার্যকর উদ্যোগ পারে এ শিল্পের কারিগরদের ভাগ্য ফেরাতে। যার ফলে ফিরে পাবে এ সম্প্রদায়ের জীবনমানের নিশ্চয়তা। এমন অভিমত তাদের।

রাখাইন সম্প্রদায়ের কারিগরদের অভিযোগ, তাদের আধুনিক তাঁত বুনন পদ্ধতির আওতায় না থাকায় অনেকেই হতাশ। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে পড়েছেন জীবিকার দৈন্যতায়। সনাতনী পদ্ধতিতে হাতে বোনা লুঙ্গি, তোয়ালে, চাদরসহ নানা সামগ্রীর মূল্য তুলনামূলক কিছুটা বেশি হলেও টেকশই হয় বেশি দিন। কিন্তু সুতার মূল্য বৃদ্ধি, আর্থিক দৈন্য তাদের এ পেশাকে করে তুলেছে সংকটময়। তবে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি কিংবা বে-সরকারি সহায়তা চান এ সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা।

উপকূলের আদি বাসিন্দা রাখাইন সম্প্রদায়ের নারী উদ্যোক্তা লাসে রাখাইন জানান, তাদের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ। তবে সময়ের বিবর্তনে আবাদি জমি হারিয়ে এ সম্প্রদায়ের মানুষ এখন প্রধান পেশা তাঁতবস্ত্র তৈরিতে ঝুঁকেছেন। পূর্ব পুরুষরা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে তাঁতবস্ত্র বুনতেন। সে ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তারা বংশ পরম্পরায়। এটি তাদের ঐতিহ্য হলেও বর্তমানে চলছে দুর্দিন। কারণ উপকরণের দাম বাড়লেও তাদের পণ্যের দাম বাড়েনি। পণ্যের চাহিদা বাড়ার কারণে পরিশ্রম বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় শ্রমের মূল্য বাড়েনি।


  • উপকরণের দাম বাড়লেও পণ্যের দাম বাড়েনি। বাড়েনি শ্রমের মূল্য
  • আধুনিক পদ্ধতিতে তাঁতবস্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি দরকার তাদের

বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের সমাজসেবক নুরুল আমিন জানান, জাত ধর্ম নির্বিশেষে রাখাইন সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাদের বসবাস। একসময়ে তারা সম্পদশালী থাকলেও জমা জমি বিক্রি করে দিয়ে এখন কিছু সম্পদ কমেছে। এ সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ সমানভাবে কাজ করে। তবে তাঁত বুননের কাজে বেশি ভূমিকা নারীদের। তবে তারা আধুনিক পদ্ধতিতে তাঁত বস্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি থাকলে আরো লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, রাখাইন সম্প্রদায় জনগোষ্ঠীদের শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তারা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ সব সরকারি সুযোগ সুবিধার আওতায় রয়েছেন।

বিসিক পটুয়াখালীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) আলমগীর সিকদার বলেন, আমাদের আওতায় রাঙ্গাবালীর রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে এখনো কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। তবে ওই এলাকায় প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। অনুমোদন সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে রাখাইন সম্প্রদায়কে নিয়ে পাশের জেলা বরগুনার তালতলীতে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।

পিডিএস/জেডকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পটুয়াখালী,রাঙ্গাবালী,রাখাইন,তাঁতশিল্প,দাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close