নাজমুল মোল্লা, সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ)
ধলেশ্বরী নদীর উপর রেলের মেজর ব্রিজ
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের ধলেশ্বরী ১ ও ধলেশ্বরী ২ ব্রিজের পূর্ব পাশে দুই নদীর মিলনস্থলে মেজর রেল ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে।
ব্রিজটি নির্মাণে ৪টি অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন পিয়ার স্থাপন করা হবে। তার মধ্যে নদীর মাঝে দুটি আর দুই পারে দুটি পিয়ার নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ব্রিজ নির্মাণের জন্য উত্তর পাড় পলাশপুরে একটি ও দক্ষিণ পাড় পাথরঘাটায় একটি দুই পারে দুটি পিয়ার নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকার কমলাপুর থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার পদ্মা সেতুর উত্তর পাশ পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কর্মযজ্ঞ এগিয়ে চলছে। ঢাক-মাওয়া সড়ক পথে ধলেশ^রী টোল প্লাজা পাড় হলেই পূর্ব পাশে চোখে পড়বে রেল ব্রিজটি নির্মাণযজ্ঞ।
রেল প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, প্রথম সেকশন ঢাকার কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত হবে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন। দ্বিতীয় সেকশন হবে গেন্ডারিয়া থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন। এই সেকশনে থাকবে ৪টি স্টেশন। নতুন রেল স্টেশন নির্মাণ হবে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের নিমতলা, শ্রীনগর ও মাওয়ায়। মুন্সীগঞ্জের বালুচরের পাশে স্ট্যান বাজার সংলগ্ন কেরাণীগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পিয়ার নির্মাণ শেষ পর্যায়ে চলছে পিয়ারের উপর স্টেশন নির্মাণের কাজ।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে আর প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপার ভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)।
নারায়নগঞ্জের পাগলা স্টেশনের পর মাওয়া পর্যন্ত রেলপথে প্রায় ১৭ কিলোমিটার উড়াল রেললাইন নির্মাণ হচ্ছে। উড়াল রেললাইনের পিলারসহ স্টেশন নির্মাণে কাজ চলছে দিনরাত সমান তালে। রেলপথে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর ও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ধলেশ্বরী নদীর ওপর দুটি মেজর রেল ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর উপর রেল ব্রিজ নির্মাণের জন্য নদীর তীরে পশ্চিম পাশে পানগাও পোর্ট সংলগ্ন ১টি পিয়ার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
এর বাইরে আরও ৩ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ হবে পদ্মা সেতুর উত্তর পান্ত মাওয়ায়। গেন্ডারিয়া থেকে মাওয়া পর্যন্ত উড়াল লাইনের জন্য ৪১৯টি পিলার নির্মাণ কাজ চলছে। উড়াল লাইনের আরও ৭৮টি পিলার পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে নির্মাণ হবে। মাঠপর্যায়ে পিলার বসানো হচ্ছে খাল-বিলের উপর। খোলা আকাশের নিচে শ্রমিক, কর্মকতা ও প্রকৌশলীরা কাজ করছে। রোদ, বৃষ্টি আর করোনাভাইরাস কোন কিছুই তাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনী।
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে রেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। পুরনো স্টেশন ঢাকার কমলাপুর ও গেন্ডারিয়া রেল স্টেশন রি-মডেলিং করা হবে। স্টেশনগুলোতে থাকবে আধুনিক সিগনালিং ব্যবস্থা। পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় বড় সেতু ও ছোট সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলপথ ও সড়কপথ বিভাজনে থাকবে আন্ডারপাস, অপটিক্যাল ফাইবারের টেলিযোগাযোগ, ভায়াডাক্ট, রুফ ওয়ে, রেলক্রসিং, রেল ওভার ব্রিজ, প্রকল্প কার্যালয়, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র।
রেল প্রকল্পের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, এ রুটে আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ব্রডগেজ মালবাহী ও কন্টেনার ট্রেন চলবে। এলিভেটেড ভায়াডাক্টের ওপর দু’টি প্লাটফর্ম, একটি মেন লাইন ও দুটি লুপ লাইনসহ রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ ও তাতে লিফট স্থাপন করা হবে। প্রায় ১১ মিটার উচু রেল লাইনের নিচ দিয়ে সড়কের জন্য আন্ডারপাস নির্মাণের মাধ্যমে উভয় পথে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ ট্রেন এবং গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা থেকে রেল লাইনটি মাওয়া পর্যন্ত নির্মাণ শেষ হওয়ার পর তা সরাসরি ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথে উন্নতি হবে।
পিডিএসও/এসএম শামীম