আরিফ মঈনুদ্দীন

  ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

উপন্যাস ( পর্ব ১২)

তাহারা ফিরিয়া আসিলেন

সম্রাট বললেন, ডাক্তার তুমি যা চাও তোমাকে তা-ই দেওয়া হবে। শুধু আমাকে একটু আরাম নিশ্চিত করে দাও। আমার অসুখ ভালো করে দাও। ডাক্তার আমাকে নিরাময় করে দাও। ডাক্তারের চেষ্টায় যথাসময়ে সম্রাট আরোগ্য লাভ করলেন এবং ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলেন বিনিময়ে ডাক্তার কী চান? ডাক্তার বললেন, নিজের জন্য কিছুই আমার চাইবার নেই। শুধু আমাদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য সামান্য একখণ্ড ভূমি চাই। যেখানে বসে কোম্পানি বিনা দ্বিধায় তাদের তেজারতি চালিয়ে যেতে পারে। সম্রাট কোনো চিন্তাভাবনা না-করেই সঙ্গে সঙ্গে দাবি মঞ্জুর করে দিলেন। পরে সে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ষড়যন্ত্রেই আমরা ২০০ বছরের জন্য ওদের গোলামির জিঞ্জির পরেছিলাম। ব্রিটিশ কোম্পানি আমাদের ক্ষতি-মন্দ যা করেছে- হক সাহেব ভাবছেন অন্যটি। ডাক্তারের দেশপ্রেমে হক সাহেব মুগ্ধ। বেটা নিজের জন্য কিছুই চাইল না।

রাশেদা আক্তার বললেন, তুমি কি আমার কথা শুনে বিরক্ত হচ্ছো? অথচ তোমার চেহারায় ওরকম মনে হচ্ছে না।

কী বলছ, বিরক্তি? তার তো প্রশ্নই উঠে না। বরং আমি ভীষণরকম কৌতূহলবোধ করছি। জ্ঞানের চেয়ে অধিক তোমাকে জানার জন্য।

ঠিক আছে। আমাকে নতুন করে জানার প্রচুর সময় পড়ে আছে। এখন যাও প্যান্ট-শার্ট ছেড়ে একটা ইজি ড্রেস পরো। ফ্লাক্সে কফি রাখা আছে। ঢেলে খেয়ে নাও।

তোমার জন্য এক কাপ নিয়ে আসব কি?

না, আমি এখন খাব না। হাতে একটা বই আছে পৃষ্ঠা-দেড়েক বাকি এই ফাঁকে ওটা সেরে ফেলি। দারুণ একটি বই, পুরো পৃথিবীটা মনে হচ্ছে এখন আমার হাতের মুঠোয়। কী সুন্দর করেই-না লেখক মানুষের প্রকৃতিগত বিশ্লেষণ করেছেন। পড়লে তাজ্জব বনে যেতে হয়। বিভিন্ন দেশের স্থান-কাল-পাত্রভেদে মানুষের ক্রীড়াকলাপের কি চমৎকার উপস্থাপন! তুমি তাড়াতাড়ি কাপড় ছেড়ে এসো। সুন্দর একটা জ্ঞানের শাখার সঙ্গে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিই।

হক সাহেব দ্রুত প্যান্ট ছেড়ে বিস্কুট কালারের একটা ঢিলেঢালা পোশাক পরলেন। হাতে কফির মগ নিয়েই রুমে ঢুকলেন। সাংঘাতিক রকমের কৌতূহলে তার পুরো চেহারায় অসংখ্য প্রশ্নবোধকের আনাগোনা টের পাওয়া যাচ্ছে। কাপে চুমুক দিয়ে তিনি বললেন, বলো এবার তোমার কথা শোনার জন্য আমার শ্রবণেন্দ্রীয় রেডি, মুখে কফি খাব আর কানে তোমার কথা শুনব।

শুধু কি কথা? তোমাকে না বললাম একটা অতি মূল্যবান জানার ব্যাপার আছে।

রাশেদা আক্তার আহ্লাদের সুরে বললেন, রসিকতা করা তোমার একটা বাতিক হয়ে গেছে, সময়ে-অসময়ে শুধুই রসিকতা।

কী করব বলো, অভ্যাসটাই হয়ে গেছে অমন। আর ওই যে মনে নেই, তোমাকে যে এক দিন বলেছিলাম- তখন আমরা কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র, হাবাগোবা টাইপের একটি ছেলে পড়ত আমাদের সঙ্গে। এক দিন বাংলার স্যার ক্লাস নিচ্ছেন- ছেলেটি কী একটা ব্যাপারে হাসছিল। অথচ হাসার মতো কোনো কথাও স্যার তখনো বলেননি। ছেলেটির হাসি এবং অমনোযোগ স্যারের দৃষ্টি এড়াল না। স্যার ছেলেটিকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি হাসছ কেন? অনেক সময় ছাত্রদের অকারণে হাসিতে শিক্ষকরা অপমানবোধ করেন। ওই স্যারও হয়তো অমন ভেবেছেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, হেসে স্যারকে অপমান করবে এ রকম মেধাও কিন্তু ছেলেটির নেই। স্যারের প্রশ্নেও কিছু না বলে শুধু দাঁড়িয়েই রইল। দু-তিনবার প্রশ্ন করে স্যার খেপে যাবেন খেপে যাবেন অবস্থা, ঠিক তখনই পাশের আরেকটি দুষ্ট ছেলে হুট করে উঠে বলল, স্যার, ও তো আসলে হাসছে না- ও থাকেই ওভাবে। ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে উঠল এবং স্যারও। আর আমার এ ব্যাপারে শুধু কি আমার দোষ। তোমার লাই পেয়েই তো আমার এমন দশা। তবে এটা তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো যে, তোমার আনুপূর্বিক আলোচনায় আমি যারপরনাই মুগ্ধ। এটা আমার মনের কথা।

রাশেদা আক্তারের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। পরম তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে তিনি আনন্দের স্বরে বললেন, ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে আর পাম্প মারতে হবে না। যা বলছিলাম শোনো। তবে শোনার আগে শর্ত আছে।

হক সাহেব বললেন, কী শর্ত?

রাশেদা আক্তার বললেন, শর্তটা হলো তোমার স্নায়ুর সবগুলো তার কিন্তু টান টান রাখতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close