শহিদুল ইসলাম

  ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

রেনেসাঁ : একটি সংক্ষিপ্ত খসড়া

রেনেসাঁর অর্থ পুনরুজ্জীন। একসময় জীবিত ছিল। পরে মৃত্যুবরণ করে। তারপর একসময় ডাক্তার বদ্যির সাহায্যে কিংবা ঝাড়ফুঁকে তা পুনরায় জীবন লাভ করে। এই পুরো প্রক্রিয়ার নামই রেনেসাঁ বা পুনরুজ্জীন। এর কোনো সময় নির্ধারিত নাই। কখন যে ছিল আর কখনোই-বা মারা গেল আর কখন পুনরায় জীবন লাভ করল, তা ঘড়ি ধরে বলা যায় না। তবে ইতিহাসবিদরা তার একটা কাল-সীমানা নির্ধারণ করেছেন। সেটা যে নির্ভুল, তা নয়। তবে মোটামুটিভাবে সত্য।

এক.

বারো হাজার বছর আগে সভ্যতার সৃষ্টি হয় কৃষি আবিষ্কার ও পশু পালনের মধ্য দিয়ে। এরপর এখন আমরা জানি যে, ব্যাবিলন, মিসর, ভারতবর্ষ ও চীনে গড়ে উঠে পৃথিবীর প্রাচীনতম নগরসভ্যতা। ক্রমবিবর্তনের দীর্ঘ পথপরিক্রমার পর মানুষ একটু স্থিতিশীল সমাজজীবনে প্রবেশ করে মাত্র সেদিন, সপ্তম-ষষ্ঠ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এর আগেই মানুষ মেটালার্জি, চাকা, নৌকা, মৃৎশিল্প, চামড়া, কাঁচশিল্প, বস্ত্রশিল্প, গৃহ নির্মাণশিল্প, সেচ ও নদীশাসন, পিরামিডের মতো কবর-সৌধ, স্ফিঙ্কস ইত্যাদি আবিষ্কার ও নির্মাণে সফলতা লাভ করে। এগুলো সবই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান। এক একটা তৈরি করতে হাজার বছর লেগে যায়। কিন্তু মানুষের চলার আর শেষ নেই।

দুই.

সপ্তম-ষষ্ঠ খ্রিস্টপূর্বাব্দে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম, সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন আলোকিত অধ্যায়ের সূত্রপাত হয়। সেই নতুন অধ্যায়ে আমরা শুধু গ্রিক ও রোমান অভিনেতাদের তৎপরতার কথাই জানি। ভারত, মধ্যপ্রাচ্যে কী সেই সময় কোনো জ্ঞান-বিজ্ঞানের তৎপরতা ছিল না? দুই শ বছরের পশ্চিমী ঔপনিবেশিক শাসন আমাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে যে, আদিকাল থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের মাঝে তারাই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতা-সংস্কৃতির আলো ছড়িয়েছে। আমরা ছিলাম এক অসভ্য বর্বর জাতি। তারাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের সে আলোয় আলোকিত করে তুলেছিল ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থান। এ দাবি সর্বৈব মিথ্যা।

বরং আজই আমরা এক অশিক্ষিত ও অসভ্য জাতিতে পরিণত হয়েছি। শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও জাতীয় সংস্কৃতির চর্চার সুদীর্ঘ কালের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য থেকে সরে এসে আমরা এক অন্ধ পশ্চিমী অনুকরণ-সংস্কৃতির অন্ধকারে হারিয়ে গেছি। পশ্চিমা শক্তির সেই অবাঞ্ছিত দাবি মিথ্যা প্রমাণ করার তেমন কোনো প্রয়াস আজও চোখে পড়ে না। জ্ঞানের সে শক্তি আমরা অর্জন করতে পারিনি।

সপ্তম-ষষ্ঠ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এসে ভূমধ্যসাগরাঞ্চলে চিওস, কস্, সামোস, ক্রীট দ্বীপ ও আয়োনিয়া, মিলেটাস, গ্রিস, অ্যাথেন্স, রোম ও ইফিসাস শহরগুলোয় এক নতুন গ্রিক জাতির উদ্ভব হয়। তাদের পরিচালনায় জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সভ্যতা-সংস্কৃতি আকস্মিক ও অভূতপূর্ব বিকাশ লাভ করে। সে ইতিহাস আজ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত।

ঠিক তেমনিই একই রকমভাবে আলোকিত ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল ভারতবর্ষে। সে সময় ভারতবর্ষেও গড়ে উঠে অঙ্গ, মগধ, বুজি, কাশি, কোশল, মল্ল, ছেদি, বৎস, কুরু, পান্চাল, মৎস, শূরসেন, অশ্মক, অবন্তী, গান্ধার ও কম্বোজের মতো স্থান। এ সময়ের সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল ক্রীতদাস প্রথা।

রেনেসাঁর কথা মনে হলেই প্রথমেই ইতালির রেনেসাঁর কথা মনে পড়ে। প্রায় সব ইতিহাসবিদ ইতালির রেনেসাঁকে মধ্য যুগ ও আধুনিক যুগের মাঝখানে এক উৎক্রমণকালীন যুগ বলে মনে করেন।

আরো একটা রেনেসাঁর কথা আমরা বলে থাকি। তা হলো উনিশ শতকের বাংলার রেনেসাঁ। উনিশ শতকের প্রথমেই রাজা রামমোহন রায় এবং কলকাতার কতিপয় জমিদার ও অভিজাত শ্রেণির ক্রীড়াকর্মকে আমরা সচরাচর বাংলার রেনেসাঁ বলে থাকি। সে রেনেসাঁর নায়ক ছিলেন সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং একেশ্বরবাদী ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। রাজা রাম মোহন রায় এ ধর্মের প্রবর্তক। মুসলমান সম্প্রদায়ের কেন অংশগ্রহণ ছিল না সে রেনেসাঁয়। কলকাতার মুষ্টিমেয় মুসলিম অভিজাত ও জমিদার শ্রেণিকে সে আন্দোলনে সংযুক্ত করা যায়নি। কেন যায়নি বা কাদের ব্যর্থতার জন্য তারা ওই রেনেসাঁ আন্দোলনের বাইরে রইলেন, তা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক মতবিরোধ। আসলে ইতালির রেনেসাঁর সঙ্গে উনিশ শতকের বাংলার রেনেসাঁর পার্থক্য নির্দেশ করার জন্যই আজ লিখতে বসেছি। সেই সঙ্গে আরো একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেব, তা হলো- ইসলামের ইতিহাসে কখনো কি রেনেসাঁর উদ্ভব হয়েছিল?

তিন.

ইতালি ইউরোপের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত। সেই অঞ্চলের গ্রিস ও রোমে গড়ে উঠেছিল প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাম্রাজ্য এবং সভ্যতা-সংস্কৃতি। গড়ে উঠেছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান শিল্পসাহিত্যের এক বিরাট ভাণ্ডার। প্রথম মহাকাব্য হোমারের ইলিয়াড এবং ওডিসি রচিত হয়েছিল সেখানে। ঈশ্বরের সৃষ্টি হয় এই অঞ্চলেই। প্রথম organi্zed ধর্মের উত্থান ও প্রথম ঈশ্বর প্রেরিত ধর্মগ্রন্থ রচিত হয়েছিল এই অঞ্চলেই। প্রথম ইতিহাস, প্রথম নাটক রচিত হয়েছিল সেখানে। সেখানেই প্রথম বিজ্ঞানের বীজ রোপিত হয়েছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার জন্য প্রথম একাডেমি গড়ে উঠেছিল এই অঞ্চলেই। এই অঞ্চলেই জন্ম নিয়েছিলেন হোমার, হেরোডোটাস, থুসিডাইস, সপোক্লোস, জেনোফেন (খি. পূ. ৫ম-৬ষ্ঠ শতাব্দী) লিউসিপ্পাস, জেনোফোন, বিজ্ঞান ও দর্শনের আদিপুরুষ থেলিস, হিরাক্লিটাস, ডেমোক্রিটাস, এপিকিউরাস, লুক্রেশিয়াস, পিথাগোরাস, এমপিডোকলিস, হিপোক্র্যাটস, ইউক্লিড, সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটোল, টলেমী প্রমুখ মানুষ।

এরাই হলেন মানুষের প্রথম যুক্তিভিত্তিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। সেই সময়ের সেই আদর্শ ও দর্শনের শক্তিতে প্রায় এক হাজার বছর সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্যের অগ্রযাত্রা অব্যাহত ছিল। কিন্তু গ্রিক জাতির রাজনৈতিক প্রাধান্যের ইতিহাস খুব লম্বা নয়। অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের স্পার্টার আক্রমণে পরাজয় বরণ করে হয় পেলোপোনেসিয়ান যুদ্ধে। দীর্ঘ এ যুদ্ধ শেষ হয় ৪০৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এরপর খ্রিস্ট ধর্মের উত্থান ঘটে। স্পার্টার সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বলা যায় রোমান আধিপত্যের শুরু। এরই মধ্যে খ্রিস্ট ধর্মের উত্থানের সূত্রপাত হয় এবং ৫০০ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্ট ধর্ম জয়লাভ করে।

রোমান সাম্রাজ্যের পতনে গ্রিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রদীপও নিভে যায়। তা মৃত্যুবরণ করে। সে ইতিহাস আমরা জানি। কিন্তু তার ভেতর ঢোকার কোনো সুযোগ নেই আজ। ৫২৯ খ্রিস্টাব্দে প্লেটোর একাডেমি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বেনেডিক্টাইনের বিধান অনুসারে স্থাপিত হয় প্রথম ‘মঠ’। শুরু হয় এক হাজার বছর স্থায়ী এক অন্ধকার যুগ। এই এক হাজার বছরে গ্রিকো-রোমান সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর খ্রিস্টীয় যাজকতন্ত্রের এক কঠিন কালো ঢাকনি দিয়ে দেওয়া হয়।

এ ইতিহাস আমাদের অতি পরিচিত। ইংরেজ ঔপনিবেশিক শক্তি আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। এক অমোচনীয় কালিতে সে লেখা আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে এমনভাবে জড়িত যে আমরা তা কল্পনাও করতে পারি না। ভারতবর্ষের ইতিহাস গবেষণার জন্য এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছে কলকাতায়, প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রথম জাদুঘর, প্রথম চিড়িয়াখানা, প্রথম আধুনিক প্রেস, প্রথম সংবাদপত্র, প্রথম কলেজ, প্রথম শিক্ষানীতি, প্রথম চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, প্রথম প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়, প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম বিচারালয়সহ প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তারাই প্রতিষ্ঠা করে গেছে। সেই সঙ্গে এসেছে তাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির ধারা।

সে ইতিহাস পড়লে মনে হবে, পৃথিবীর আর কোথাও যেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা রুদ্ধ হয়ে ছিল। পৃথিবীর আর কোথাও কোনো জ্ঞান- বিজ্ঞান চর্চার কোনো ঐতিহ্য গড়ে ওঠেনি!

চার.

এটা সত্য নয়। ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যেও এই সময়ে গ্রিকো-রোমান সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে সঙ্গে নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার এক বিরাট ভাণ্ডার গড়ে উঠেছিল। ভারতবর্ষের জন্ম নিয়েছেন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট (৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ), বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্ত, মহাবীর, শ্রীধর, পদ্মনাভ, ভাস্কর, মুন্জাল, শ্রীপতি, নারায়ণ প্রমুখ। দশমিক স্থানিক অঙ্কপাতন ও শূন্যের আবিষ্কার এই ভারতবর্ষের মাটিতেই।

পাঁচ.

ওদিকে ইসলামের অভ্যুত্থান মধ্যপ্রাচ্যের আরব ভূমিতে এক গুণগত সামাজিক পরিবর্তন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘আরব জাতির রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মতো জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এবং সাধারণভাবে মানবসভ্যতার উন্নয়নে এই জাতির বিরাট অবদান রীতিমতো বিস্ময়কর।’ বলেন ‘বিজ্ঞানের ইতিহাস’ রচয়িতা ড. সমরেন্দ্রনাথ সেন। বিস্ময়কর দ্রুতগতিতে ইসলাম পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার রাজনৈতিক মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর মাত্র ১১৮ বছরের মধ্যেই ইসলাম পশ্চিমে স্পেন থেকে পূর্বে ভারতবর্ষের সিন্ধুনদ পর্যন্ত স্থান দখল করেছে। ইসলামপূর্ব সাম্রাজ্য ও সভ্যতাগুলোর ভূখণ্ড একে একে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রাচীন ব্যবলিনীয়, মিসরীয় ও পারস্য সাম্রাজ্য নতুন আরবীয় ঐস্লামিক সাম্রাজ্যের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। অথচ খ্রিস্ট ধর্ম প্রতিষ্ঠা হতে পাঁচ শ থেকে এক হাজার বছর লেগেছিল।

যাক সে কথা। আজ রাজনীতির কথা লিখতে বসিনি। আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের কথা লিখতে বসেছি। কিন্তু সমাজ বিবর্তনে ধর্মের ভূমিকা ও প্রভাবের কথা খুব বাড়িয়ে বলা সম্ভব নয়। হোমার থেকে সপ্তম-ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল নানা দেব-দেবীভিত্তিক এক কল্পকাহিনির ধর্ম। হোমারের মানবিক মূল্যবোধ জন্ম দেয় গ্রিক ধর্মের, যা প্রাকৃতিক জগৎ ও মানুষের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী। তারই ফলে সৃষ্টি হয়েছিল গ্রিক সংস্কৃতি ও সভ্যতা। এরপর রোমানদের বিশ্বাস ছিল পেশিশক্তির ওপর। তাই তো স্পার্টার কাছে গ্রিকদের পরাজিত হতে হয়। সম্রাট পেরিক্লিসের ভাষণটি আজও গ্রিক গণতন্ত্রের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। এরপর খ্রিস্ট ধর্ম ও সর্বশেষ ইসলাম।

এখন প্রশ্ন ইসলাম প্রতিষ্ঠার আগে ওই অঞ্চলগুলোয় কারা বসবাস করতেন? নিশ্চয়ই তারা মুসলিম ছিলেন না। সেখানে মূলত বাস করতেন পারসিক, ইহুদি, নেস্টোরিয়ো ও মনোফিজাইট সম্প্রদায়ের খ্রিস্টানরা। তাই আরবীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-সাহিত্য-সভ্যতা বলতে এসব বিভিন্ন জাতি ও ধর্ম সম্প্রদায়ের মিলিত সাধনার ফসল। সাম্রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-সাহিত্য-সভ্যতার পরস্পর মিলনের এক সুযোগ উপস্থিত করে। জ্ঞানের এই আন্তর্জাতিকতার সুফল পুরোপুরিই আরবদের ঘরে ওঠে।

কিন্তু এখানেই একটি বিরাট প্রশ্ন এসে সামনে দাঁড়ায়। প্রাচীন যুগে রোমানদের কাছে গ্রিকরা পরাজিত হয়েছিল। কিন্তু সভ্যতা-সংস্কৃতির মাপকাঠিতে নিম্নতর রোমান সভ্যতা উন্নততর গ্রিক সভ্যতার কাছে হার স্বীকার করতে হয়েছিল। ইতিহাসের পাতায় গ্রিকদের সে অগ্রাধিকার কখনোই পরাজিত হয়নি। এখানেও একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি লক্ষ করা যায়। এ সময়ের যাদের নামের সঙ্গে আমরা পরিচিত, তারা সবাই ভৌগোলিকভাবে আরবের অধিবাসী ছিলেন না; সেই সঙ্গে মুসলমানও ছিলেন না। অথচ এরাই আরবীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার সম্মুখসারির মানুষ। এডেসা, নিসিবিস, জুন্দিশপুরের নেস্টোরিয়ো ও মনোফিজাইট পণ্ডিতরাই আরবীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার আদিপুরুষ যথা পথপ্রদর্শক। এক দিন অ্যাথেন্স, আলেকজান্দ্রিয়া, রোম যেমন জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, তেমনি ঐস্লামিক বিশ্বে নবম, দশম ও একাদশ শতাব্দীতে জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয় বাগদাদ, টলেডো, করডোভা ইত্যাদি শহর।

ছয়.

অষ্টম শতাব্দীকে বলা হয় অনুবাদের যুগ। বাগদাদের অনতিদূরে নেস্টোরীয় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের জুণ্ডিশপুরের শিক্ষা ও গবেষণাকেন্দ্র এবং পারসিকদের অন্যতম শিক্ষা-সংস্কৃতির কেন্দ্র খোরাসানের রাজধানী মার্ভে আব্বাসীয় খলিফাদের সক্রিয় সাহায্য-সহযোগিতাতেই গ্রিক ও ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান দর্শন ও সাহিত্যের অনুবাদের কাজ দ্রুতগতি লাভ করে। এখানেই সিরিয়া, ফারসি ও আরবি ভাষায় অনূদিত হয় ব্রহ্মগুপ্তের ‘সিদ্ধান্ত বা সিন্দ-হিন্দ’ ইউক্লিডের ‘এলিমেন্টস’ ও টলেমীর ‘আলমাজেস্ট’। এ সময়ের কয়েকজন অনুবাদকের নাম হলো- ইব্রাহিম আল-ফাজারি, আল-হাজ্জাজ, আল-তাবারি, হুসায়েন ইবনে ইসহাক, থাবিত ইবনে কুরা (৮৩৬-৯০১) আল-বাত্তানি, কুস্তা ইবনে লুকা, হুনায়েন ইবনে ইসহাক, আল-কাশ, আল-জাকারিয়া আল-মানতিকি প্রমুখ। খলিফা আল মামুন প্রতিষ্ঠা করেন ‘দারুল হিকমা’ বা জ্ঞানগৃহ। মামুন হুসায়েন ইবনে ইসহাককে অনুবাদ বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত করেন।

ওদিকে স্পেনের কর্ডোভা হয়ে উঠে বিদ্যাচর্চা ও মননশীলতার এক প্রধান কেন্দ্র। আরো কয়েকটি নাম- নাওবখত, মাশাল্লাহ, আল-খোরারিজমি, মুসা তিনভাই, আল-কিন্দি (৮৭৩), আবু মাশার, আবুল ওয়েফা, মিসরের ইবনে ইউসুফ ও আল্-হাইথাম (৯৬৫-১০৩৯), আল-বিরুনি (৯৭৩-১০৪৮), ওমর খৈয়াম (১০৪৫-১১২৩), স্পেনের আল্-জারকালি (১০২১-৮৭), পারস্যের নাসির আল্-দিন আল-তুসি (১২০১-৭৪), উলুক বেগ, জাবির ইবনে-হাইয়াম (৭২০-৮১৩), আল্-রাজি, ইবনে-সিনা (৯৮০-১০৩৭), ইবনে-রুশদ (১১২৬-৯৮) প্রমুখ।

দেখা যায়, অষ্টম থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় চার শ বছর মুসলিম পণ্ডিতরা জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার নেতৃত্ব দিয়েছেন। নবম শতাব্দী তা চরম বিকশিত হয়। একাদশ শতাব্দীর শেষাংস থেকে তার অবনতির চিহ্নগুলো স্পষ্টতর হয়ে আসতে শুরু করে। কেন? আজ সে উত্তর দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ইতিহাস অনেকেই লিখে গেছেন। এখানে তার কিছুই আলোচনা করা সম্ভব নয়। যা বলার জন্য লিখতে বসেছি, তা শেষ করতে হয়। এ সময়ের সমাজের অর্থনৈতিক ভিত ছিল সামন্তবাদী।

সাত.

প্রথমেই উনিশ শতকের বাংলার রেনেসাঁর কথায় আসি। ইতালির রেনেসাঁর সঙ্গে অনেকেই সে রেনেসাঁর তুলনা করেন। কিন্তু আমার মতে তা পুরোপুরি সত্য না। রামমোহন রায় ও তার বন্ধুরা দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে সেদিন আন্দোলনে নেমেছিলেন এবং রক্ষণশীলদের হাতে তাদের যথেষ্ট হয়রানি হতে হয়েছিল।

প্রথমত, বহু শতাব্দী সঞ্চিত হিন্দু ধর্মের অমানবিক প্রথা ও সামাজিক রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্য ও আন্দোলন।

দ্বিতীয়ত, ভারতের পুরোনো সামন্তবাদী সংস্কৃতির পরিবর্তে পশ্চিমা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উদার প্রগতিশীল বুর্জোয়া সংস্কৃতির প্রতিস্থাপন।

ফলে তাদের কী ধরনের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তা আমরা মোটামুটি জানি। রামমোহন রায়কে ত্যাজ্যপুত্র হতে হয়েছিল। এই আন্দোলন কলকাতার সামান্য কিছু জমিদার ও অভিজাত শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই আন্দোলনের ফলে সতীদাহ প্রথার মতো একটি ভয়ংকর অমানবিক প্রথা আইনত নিষিদ্ধ হয়েছিল এবং বিধবাদের পুনরায় বিয়ের বাধা অপসারিত হয়েছিল। এই আন্দোলনের এটা বিরাট সাফল্য।

কিন্তু এই রেনেসাঁর নায়করা প্রাচীন হিন্দুধর্মের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীনের চিন্তা করেননি। তাদের দৃষ্টি ছিল ইংরেজের সহায়তায় পশ্চিমের জ্ঞান-বিজ্ঞান-ভাষা-শিক্ষা-সংস্কৃতির অবাধ প্রচলন। কিন্তু ইতালির রেনেসাঁর মতো প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান-সাহিত্য-সংস্কৃতির পুনরুজ্জীনের জন্য তাদের সে তৎপরতা পরিচালিত হয়নি। হলে আর একটি বিপদ আরো ঘনীভূত হতো। মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য সে আন্দোলনে যোগদান হতো আরো সুদূর পরাহত।

রামমোহনরা মুসলমানদের সচেতনভাবে ওই আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি। তখন মুসলমান অভিজাত শ্রেণি সভয়ে ওই আন্দোলন থেকে নিজেরাই দূরে সরে ছিলেন। ধ্রুপদি ভারতীয় সভ্যতার পুনরুজ্জামানের কথা বললে তা মুসলিমদের কাছে আরো অগ্রহণযোগ্য হতো। প্রাচীন ভারতের সভ্যতা-সংস্কৃতি মুসলিম সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো না। এখনো পাকিস্তানের মানুষ হরোপ্পা মহেনজোদাড়োর সভ্যতাকে নিজেদের সভ্যতা বলে মনে করে না। যদিও ভারতীয় সভ্যতার কেন্দ্র ছিল বেলুচিস্তানে ও সিন্ধুতে। তা ছাড়া উনিশ শতকের প্রথমেই মৌলানা সাহেবরা ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতবর্ষকে ‘দারুল হারব’ ঘোষণার মাধ্যমে ইংরেজদের সঙ্গে অসহযোগিতার ডাক দিয়েছিলেন। ১৮৬০ সালে নবাব আবদুল লতিফ এবং স্যার সৈয়দ আহমেদ ইংরেজি শিক্ষা ও ইংরেজদের সহযোগিতার জন্য আন্দোলনের সূত্রপাত করেন।

আট.

এবারে মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামের কথায় আসি। আমার মনে হয়, গ্রিক-রোমান জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার পথ বন্ধ হওয়ার পর এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে পারস্য, মিসর, সিরিয়ায় মানুষ নতুন করে পুরোনো গ্রিক-রোমান জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার প্রতি দৃষ্টি দেন ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ বা সপ্তম শতাব্দীর প্রথম ভাগে। তারা ছিলেন নেস্টোরিয়া ও মনোফিজাইট গোত্রের খ্রিস্টান কিংবা জরথ্রুুস্টনিয়ান। তবে খুব সাবধানে। কারণ ৪১৫ খ্রিস্টাব্দে উগ্র ধর্মান্ধ খ্রিস্ট গোষ্ঠী সে সময়ের প্রখ্যাত নিওপ্লেটোনিস্ট, জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ হাইপাসিয়াকে নিদারুণভাবে হত্যা করেছিল। সে করুণ হত্যাযজ্ঞের কথা তারা ভুলতে পারেনি। পড়ার টেবিলেই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী তার মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। তাই প্রথমদিকে তারা সাবধান ও গোপনে কাজ শুরু করেছিলেন। এরই মধ্যে আরব ভূমিতে জন্ম নেয় নতুন একেশ্বরবাদী ধর্ম ইসলাম। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে সেসব অঞ্চল ইসলাম ধর্মের অধীনস্থ হয় এবং সেসব শিক্ষাকেন্দ্রগুলোও ইসলামি সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।

উমাইয়া খেলাফতের অবসানের পর আব্বাসীয় খলিফাদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় সে কেন্দ্রগুলোয় নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়। খলিফা আল-মামুন স্বয়ং খোরাসানের রাজধানী মার্ভের শিক্ষালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন।

কাজেই সত্যিকার অর্থেই ধ্রুপদি গ্রিক দর্শন ও বিজ্ঞানের পুনর্জাগরণ মুসলমানদের হাতেই শুরু হয়েছিল এবং সেটা ইতালির রেনেসাঁর আট-ন শ বছর আগে। কিন্তু সেটা হারিয়ে গেল কেন? শেষ মুসলিম চিন্তাবিদ ইবনে খালদুন (১৩৩২-১৪০৬) সেভিল থেকে আগত একজন উদ্বাস্তু। পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ তাকে আধুনিক সমাজ বিজ্ঞানের জনক মনে করেন। তবে একটা কথা ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে, ইসলামি বিজ্ঞান বলে যেটা পরিচিত, সেটা গ্রিক বিজ্ঞানেরই অবিচ্ছিন্ন ঐতিহ্য। সে সময় তারাই সে ঐতিহ্যকে নবজীবন দান করে তার প্রসার ঘটিয়েছিলেন। রোম সাম্রাজ্যের শেষভাগে গ্রিক বিজ্ঞানের যে অবক্ষয় ঘটেছিল, ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর অষ্টম, নবম ও দশম শতকে আরবের জ্ঞানী-গুণীরা সেগুলো উদ্ধার করেন এবং তাতে পুনরায় প্রাণসঞ্চার করেন। আরবরা এক বর্ধিষ্ণু বিজ্ঞানের সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এটাই হলো সত্যিকারের রেনেসাঁ।

নয়.

কিন্তু তারপর মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্ঞানচর্চার ধারাটি ক্রমেই পশ্চিমে সরে যেতে থাকে। আরবীয় জ্ঞানচর্চার সে স্বর্ণযুগ তা আর ফিরে এলো না। কেন?

মুসলিম বিজ্ঞানীরা মোটের ওপর ধ্রুপদি গ্রিক যুগের শেষ পর্বের বিজ্ঞানের ধরনটি গ্রহণ ও সংঘবদ্ধ করেছিলেন। সে সময় বিজ্ঞানের প্রধান দুই ক্ষেত্র ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞান। এই দুই ক্ষেত্রে ঐক্য বিধান করত সর্বজনস্বীকৃত এক জ্যোতিষশাস্ত্র। এই দুই ক্ষেত্রে ধর্মভীরু মুসলিম বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। কিন্তু খাঁটি দর্শনচর্চার ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটে না। দর্শনচর্চাকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো। কারণ তার সঙ্গে কোরআনের বাণীর মিলন সম্ভব ছিল না।

ধর্মপ্রাণ মুসলিম পণ্ডিতরা সে কাজটি করতে চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু গোঁড়া কট্টরপন্থিদের ভ্রুকুটি তাদের বেশিদূর এগোতে দেয়নি। বিজ্ঞানের প্রধান ভিত্তি হলো যুক্তিবাদ। তাই সেই সময়ের বিজ্ঞানীদের বলা হয় ‘মুতাজিলাইট’ অর্থাৎ যুক্তিবাদী। গোঁড়া, ধর্মান্ধ কট্টরপন্থিরা তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আক্রমণ চালায়। আরব ভূমিতে ইবনে সিনার মতো পণ্ডিতের প্রাণনাশের জন্য তারা আক্রমণ চালায়। খলিফা তাকে বাঁচান।

গোঁড়াপন্থিদের গুরু প্রখ্যাত ইসলামি পণ্ডিত ইমাম আল-গাজ্জালি (১০৫৮-১১১১) তার ‘দার্শনিকের বিনাশ’ গ্রন্থে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। স্পেনের বহুনন্দিত আবু রুশদ (১১২৯-৯৮) ‘বিনাশের বিনাশ’ গ্রন্থে তার যথোপযুক্ত জবাব দেন। কিন্তু বিজ্ঞানী ও যুক্তিবাদীদের হার স্বীকার করতে হয়। আবু রুশদ তার পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে ‘দুই সত্য’-এর দর্শন উপস্থিত করেন। ‘উচ্চতর আধ্যাত্মিক সত্য এবং নিম্নতর যুক্তিগ্রাহ্য সত্য।’ তার এই দর্শন সমগ্র ইসলামি দুনিয়ায় চালু হয়। এই আত্মবিনাশী তত্ত্ব অতিতে যেমন গ্রিক বিজ্ঞান ও চিন্তাধারাকে নিষ্ফলা করে তুলেছিল, তেমনি ইসলামি সমাজে বিজ্ঞানের চর্চা ও চিন্তাধারাকে নিষ্ফলা করে তুলল।

দশ.

পঞ্চদশ শতাব্দীর ইতালিতে মুষ্টিমেয় পণ্ডিত, যারা আরবি, ফারসি, সিরীয় ভাষা জানতেন, তারা ওইসব ভাষায় অনূদিত গ্রিক রোমান জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন-ইতিহাস পড়ে বিহ্বল হয়ে পড়েন এবং সেগুলো নিজেদের মাতৃভাষায় অনুবাদ শুরু করেন। এভাবেই শুরু ইতালির রেনেসাঁ।

এভাবেই ধ্রুপদি গ্রিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন-সাহিত্য দুই হাজার বছরের পথপরিক্রমায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমানের হাত ঘুরে পূর্ব ইউরোপের ইতালিতে পৌঁছায়। সেখান থেকে ক্রমেই সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় ধ্রুপদি গ্রিক সভ্যতার সর্বশেষ পর্যায়ের উন্নয়নের ইতিহাস, যা আজকের আলোচনার বাইরে। তবে এটুকু বলতেই হয় যে, উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে যে রেনেসাঁর সূত্রপাত হয়েছিল এবং যে আশা-আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করেছিল- বিগত পাঁচ শ বছরের নামা-ওঠার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসে আজ আবার হতাশার মেঘ জমে উঠেছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমগ্র আকাশে। যে পুঁজিবাদ শুরুতে সামন্তবাদের শৃঙ্খল থেকে মানুষকে মুক্ত করেছিল, সেই পুঁজিবাদ আজ মানুষকে আরো কঠিন শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছে, সৃষ্টি করেছে সামাজিক ধন-বৈষম্য। অতিতের মতোই আজও দেশে দেশে বৃহত্তর মানবগোষ্ঠী ক্ষুদ্রতর এক মানবগোষ্ঠীর হাতে বন্দি, নির্যাতিত।

পুঁজিবাদের এই শৃঙ্খল ভাঙার কোনো রেনেসাঁ সংগীত কি শোনা যায় আজ পৃথিবীর কোথাও?

সহায়ক গ্রন্থ

১. George Sarton, ‘History of Science : Ancient Science Through The Golden Age of Greece’ (7 Volume), Harvard University Press, Cambridge, 1959.

২. J. D. Bernal, ‘Science in History’ (4 Volume), Penguin Books, 1969.

৩. Sir William Cecil Dampire, A History of Science and Its Relation With Philosophy & Religion, Cambridge, At The University Press, 1971.

৪. সমরেন্দ্র নাথ সেন, ‘বিজ্ঞানের ইতিহাস’, (দুই ভলিউম একত্রে), শৈবা প্রকাশন বিভাগ, ৮৬/১, মহাত্মা গান্ধী রোড, ১৯৫৫, কলকাতা।

৫. শহিদুল ইসলাম, ‘বিজ্ঞানের দর্শন’, (অখণ্ড ভলিউম), কথাপ্রকাশ, ২০১৩।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close