প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪

ফরিদপুরের খেজুর গুড় বিলুপ্তির পথে!

খেজুর গুড়ের কথা উঠলেই দেশের যে কয়টি অঞ্চলের নাম মাথায় আসে তার মধ্যে অন্যতম ফরিদপুর। পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ বেষ্টিত এ জনপদে একসময় শীত এলেই শুরু হয়ে যেত গাছিদের ব্যস্ততা। নিপুণ কৌশলে খেজুর গাছের কাণ্ড কেটে প্রস্তুত করতেন তারা। কাণ্ডে রস এলে বাঁশের নলের মাথায় বাঁধা হতো মাটির হাড়ি। সন্ধ্যায় পেতে রাখা হাঁড়ি সকালে ভরে উঠত মিষ্টি রসে। সে রস জ্বাল দিয়ে বানানো হতো গুড়। এ গুড় স্থানীয়দের পিঠাণ্ডপুলির চাহিদা তো মেটাতোই, ছড়িয়ে পড়ত সারা দেশেও। অথচ ফরিদপুরের প্রত্যন্ত অনেক গ্রামেই আজকাল খুব একটা চোখে পড়ে না খেজুর গাছ।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকরামুর রহমান শীতের ছুটিতে এসেছেন গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। শীতে গ্রামে এলেই তার মনে পড়ে শৈশবে কাটানো রঙিন দিনগুলোর কথা। সে সময় শীতের সকাল মানেই ছিল মিষ্টি খেজুরের রস। অন্যদিকে বিকেলগুলো আনন্দময় হয়ে উঠত খেজুর গুড়ে তৈরি মজাদার পিঠাণ্ডপায়েসে। অথচ এখন শুধু নিজ গ্রামেই নয়, আশপাশের অনেক গ্রামেই পাওয়া যায় না খেজুরের রস।

অথচ ফরিদপুরের প্রত্যন্ত অনেক গ্রামেই আজকাল খুব একটা চোখে পড়ে না খেজুর গাছ। ভোরবেলা গাছিদের রস পেড়ে আনা কিংবা কাচা রস খেতে বালক-বালিকাদের পাত্র হাতে অপেক্ষার দৃশ্যও অনেকটা ফিকে হয়ে এসেছে। যেসব গাছিদের বাড়ি একসময় মণ্ডম করত খেজুর গুড়ের ঘ্রাণে, সে বাড়িতে এখন অলস সময় কাটে গৃহিণীদের। তবে কি একরকম হারিয়েই গেল ফরিদপুরের এ ঐতিহ্য? নাকি এর পেছনে রয়েছে ভিন্ন কোনো বাস্তবতা? ব্রজেন দাশ গুড় বিক্রি করেন ৪৫ বছর। ব্যবসাটি পেয়েছিলেন বাবার থেকে। সারা বছর আখের গুড় বিক্রি করলেও শীতের সময় বাহারি মান ও আকারের পাটালি গুড় সংগ্রহ করেন তিনি। এ প্রৌঢ় ব্যবসায়ীর দোকান ফরিদপুর শহরের চকবাজার মার্কেটে। তিনি ছাড়া এখানে বিক্রেতা আরো আট-নয়জন। সবার সামনেই আলাদা আলাদা ঝুড়িতে গুড়ের উঁচু ঢিবি। গুড়গুলোর রংও আলাদা। কোনোটি লালচে, কোনোটি একটু ফ্যাকাশে, কোনোটি আবার বাদামি। কেন এমন বাহারি রং? কোনোগুলোই বা খাঁটি রসের গুড়? জিজ্ঞেস করাতে ব্রজেন দাস জানালেন, খাঁটি রসের গুড় এখন আর বাজারে তেমন নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিনি কিংবা আখের গুড়মিশ্রিত খেজুর গুড়ই তাদের সংগ্রহ করতে হয়। গাছিরাও নির্ভেজাল রসের গুড় তৈরিতে তেমন আগ্রহ দেখান না।

শহরের অন্য গুড় ব্যবসায়ীরাও একমত হলেন ব্রজেনের সঙ্গে। বিক্রেতা সুভাষ সাহা জানালেন, ফরিদপুরে পর্যাপ্ত গুড় তারা পান না। তাদের গুড় সংগ্রহ করতে হয় কানাইপুর, মাগুরা, যশোর, ঝিনাইদহ কিংবা রাজশাহী থেকে। এ অঞ্চলের গুড়ে এখানকার মানুষের চাহিদাই মিটছে না, এমন মত তার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close