নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জানুয়ারি, ২০২৪

অপচয়ের কারণে হুমকির মুখে খাদ্য নিরাপত্তা

রবিশস্যের কারণে শীতকালে খাদ্যশস্যের দামে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও দেশে খাদ্য অপচয় নতুন একটি আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা যেমন হুমকির মুখে পড়ছে, তেমনি একপর্যায়ে বেড়ে যাচ্ছে খাবারের দামও। এ সংকট রোধের উপায় হচ্ছে খাদ্য চেইনের প্রতিটি ধাপে মাঠ থেকে শুরু করে অপচয় কমানো। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ সূচকে বাংলাদেশ শাকসবজি উৎপাদনে ১৪তম এবং চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আর দেশে মাথাপিছু খাদ্য অপচয় প্রতি বছর ৬৫ কেজি। খাদ্য অপচয় বিশ্বব্যাপী একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বে মানুষের জন্য উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশই অপচয় হয়।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ধারণা অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ১৩০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়, অর্থমূল্যের দিক থেকে যা প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসরণে বিশ্বজুড়ে দেশগুলো নিজেদের মতো করে খাদ্য অপচয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এসডিজির ১২.৩ নম্বর টার্গেটের উদ্দেশ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্যের ক্ষতি এবং অপচয় অর্ধেকে কমিয়ে আনা। খাদ্যের অপচয় কমাতে বাংলাদেশও কয়েকটি প্রকল্প শুরু করেছে। তবে এসব প্রকল্পের সম্মিলিত প্রভাব এসডিজি ২০৩০ অর্জনে যথেষ্ট নয় বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) তথ্য বলছে, দেশে ফসলের মাঠ থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি বছর ৫০ লাখ টনের বেশি খাদ্য অপচয় হয়। আর বাড়িতে খাবার নষ্টের বার্ষিক পরিমাণ ১.০৭ কোটি টন। সব মিলিয়ে বছরে নষ্ট হওয়া খাদ্যের পরিমাণ ১ কোটি ৫৭ লাখ টন। ফসলের উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি (পোস্ট-হার্ভেস্ট লস) ও খাবার টেবিলে খাদ্যের অপচয় কমাতে সরকারের যে কয়েকটি চলমান উদ্যোগ রয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে অপচয়ের মাত্র ৩.৩৫ শতাংশ রোধ করা সম্ভব বলে কৃষি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে। বিশ্বব্যাপী ৮ শতাংশ খাদ্য খামারে, ১৪ শতাংশ খামার থেকে খুচরা দোকানে পৌঁছাতে এবং ১৭ শতাংশ দোকান ও বাসাবাড়িতে নষ্ট হয়।

খাদ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা বাড়ানো, উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি কমিয়ে আনাসহ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নের জন্য কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় বর্তমানে ৮টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। তবে এমনকি এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলেও খাদ্যের অপচয় কমবে শুধু নামমাত্র। আবার এগুলোর সুফল পেতেও অন্তত ২৬ বছর পর্যন্ত সময় লাগবে। এছাড়া জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে খাবার টেবিলের অপচয় কমাতে সরকারের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগও নেই। ফলে এসডিজির আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ খাদ্যের অপচয় অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য থাকলেও গত ৯ বছরে এ-সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনার কোনো সূচক হালনাগাদ করতে পারেনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যখন খরা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টির মতো নানা প্রকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বের মতো দেশেও কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, তখন ফসলের উৎপাদন-পরবর্তী ক্ষতি এবং খাবার টেবিলে অপচয় রোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো একেবারেই পিছিয়ে। জানা গেছে, বাষ্পতাপ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলমূল ও কৃষিপণ্যের পোস্ট-হার্ভেস্ট লস কমাতে ঢাকার সাভারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ৫০ কোটি টাকা খরচ করে দুটি বাষ্পতাপ প্লান্ট তৈরি করছে।

দুটি প্লান্টের সক্ষমতা অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩৫ হাজার টন আম ও অন্যান্য কৃষিপণ্যে বাষ্পতাপ প্রযুক্তি ব্যবহারে ট্রিটমেন্ট করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এতে এসব পণ্যের শেলফ লাইফ বাড়বে এবং পোস্ট-হার্ভেস্ট লস কমে আসবে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এ কার্যক্রম শুরু হতে আরো অন্তত ৬ মাস সময় লাগবে। বিএডিসির প্রকল্পটির সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মাহবুবে আলম বলেন, আগামী জুনের মধ্যেই প্রকল্প শেষ হবে এবং আমরা কৃষিপণ্যে বাষ্পতাপ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করতে পারব। এটি পোস্ট-হার্ভেস্ট লস কমানোর পাশাপাশি রপ্তানিতেও ভূমিকা রাখবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close