নাজিম উদ্দিন, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

  ০৭ মে, ২০২৪

খাল খননের কোটি টাকার মাটি যাচ্ছে ভাটায়

মুরাদনগরে অভিযোগ : কোটি টাকার মাটি ২ লাখ টাকার নিলামে কেটে নেওয়া হয়েছে * ঘোষণার মাধ্যমে প্রকাশ্যে নিলামের কথা থাকলেও কিছুই জানেন না জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা * নিয়ম অনুযায়ী কাজ হচ্ছে বলে দাবি করেন ঠিকাদার * অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও

সারাদেশের খাল ও পুকুর উন্নয়নের আওতায় কুমিল্লার মুরাদনগরে চাপিতলা-বিষ্ণুপুর সড়কের পাশের খালটির সাড়ে তিন কিলোমিটার খনন প্রকল্পের অনুমোদন ও বরাদ্দ প্রদান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। যার বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয় এক কোটি টাকা। কোটি টাকার এই খাল খনন কাজটি পায় সোলায়মান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

গত মার্চ মাসে উপজেলার চাপিতলা ইউনিয়নের ওই খালের পশ্চিম অংশ থেকে খনন শুরু করে ঠিকাদার। বিধি অনুযায়ী খাল খননের পর দুই পাশের পাড় বাঁধাই করে উদ্ধৃত যে মাটি থাকবে তা সরকারি ব্যবস্থাপনায় উম্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করার কথা। কিন্তু খাল খনন শুরু করার কয়েকদিন পরেই আয়েশা ব্রিকসসহ বিভিন্ন ইট ভাটায় খালের মাটি বিক্রি শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সরকারি খালের মাটি কিভাবে বিক্রি করছেন জানতে চাইলে ঠিকাদারের লোকজন জানান, তারা দুই লাখ টাকার নিলামের মাধ্যমে ওই মাটি কিনেছেন।

জানা যায়, খাল কাটারস্থলে প্রকাশ্যে নিলাম হয়েছে বলা হলেও এই নিলামের বিষয়ে কিছুই জানেন না ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয়রা। কারা এই নিলাম করলো, কখন করলো এবং কিভাবে করলো এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন বিরাজ করছে। নাম মাত্র মূল্যে নিলাম করে সরকারকে কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। খালের মাটি বিক্রির পাশাপাশি খালের পাশে সরকারি বরাদ্দে নির্মাণ করা রাস্তার মাটিও কেটে নেওয়ার অভিযোগ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সেতুর গোড়া থেকে অবাদে মাটি কেটে নেওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের চাপিতলা সেতুটি।

এদিকে নিয়ম না মেনে খাল খননের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে চাপিতলা-বিষ্ণুপুর পাকা সড়কসহ খালের পাড়ের অনেক বসতবাড়ি। যেকোন সময় খাল ধ্বসে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এছাড়া প্রতিদিন শত শত ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহনের কারণে সড়কে যানচলাচল ব্যাহত হওয়ায় এলাকাবাসী অভিযোগ করছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলছেন, রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় এই মাটিকাটার তান্ডব, অতিরিক্ত বালুতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে পথচারীরা। তারা যেই কাজ করছে একটা বৃষ্টি আসলে রাস্তার দু’পাশের পাড় ধ্বসে পড়বে। রাস্তাগুলোও ভেঙে ফেলেছে ভেকু ব্যবহার করে।

জসিম উদ্দীন নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, এলাকায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা যাচ্ছে না। রাস্তা-ঘাটে অনেক ধূলা-বালি এতে দম বন্ধ হয়ে আসে। খালের পাশের রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরো ভাঙবে।

উম্মুক্ত নিলামের বিষয়ে চাপিতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু মুছা আল কবির বলেন, ‘খাল খননের কাজটি দেখেছি কিন্তু উম্মুক্ত নিলাম কবে বা কিভাবে হয়েছে আমি এবং আমার পরিষদের মেম্বাররা কিছুই জানি না।’

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোলায়মান এন্টারপ্রাইজের মালিক সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘অফিসিয়ালি যেভাবে আছে আমরা সেভাবেই কাজ করছি। ব্যতিক্রম কোনকিছু করার চিন্তাভাবনা আমাদের নাই।’

উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রায়হানুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আমাদের দপ্তরের উপস্থিতিতে স্পট নিলাম করা হয়। কাজ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন অভিযোগে আমরা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাদের কাজে যেসব সমস্যা আছে তা আমরা চিহ্নিত করে তাদেরকে সমাধান করার জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছি।’

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। যদি কোন লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আশা করছি যেসব প্রতিষ্ঠান এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে তাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট সমাধান পাব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close