রাজু আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

খামারবাড়ির অর্ধকোটি টাকার জেনারেটর চুরি

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি থেকে কৃষকদের জন্য বরাদ্দ করা ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি বা ইফাদ) প্রকল্পের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক জেনারেটর চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব হোসেন এ নিয়ে মন্তব্য করছেন না। কুড়িগ্রাম খামারবাড়ির বর্তমান উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত এ নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

দপ্তরটির সূত্রে জানা যায়, জেনারেটর চুরির ঘটনায় একই বছর রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালকের নির্দেশে তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্তে জেনারেটর চুরি-সংক্রান্ত সব অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। এ নিয়ে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা কিংবা ফৌজদারি মামলা না করে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয় বলেও জানা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুড়িগ্রামের কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালের জুনে কুড়িগ্রাম অফিসের সাবেক উপপরিচালক আবদুর রশিদ (বর্তমানে অবসরে), সাবেক ক্যাশিয়ার আবদুল আজিজসহ কয়েকজন কর্মচারীর যোগসাজসে জেনারেটরটি বিক্রি করে দেন তারা। প্রমাণ ধামাচাপা দিতে অফিসের সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখাসহ জেনারেটরের নথিপত্র-সম্বলিত ফাইলও সরিয়ে ফেলা হয়। জেনারেটরের কক্ষ থেকে আলামত লুকাতে কক্ষটি একজন কর্মচারীকে বসবাসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রকাশ হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে আরেকটি ছোট জেনারেটর রেখে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ নিয়ে কয়েকজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা পরবর্তী উপপরিচালক ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দেন। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে অভিযোগকারীদের কুড়িগ্রাম থেকে বদলি করা হয়। তদন্তে জেনারেটর চুরির সত্যতা মিললেও শেষ পর্যন্ত বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।

খামারবাড়ি কুড়িগ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেনারেটর রাখার কক্ষটি বর্তমানে একজন কর্মচারী বসবাস করছেন। তবে ওই কক্ষে যে বিশালাকৃতির জেনারেটর বসানো ছিল, সে চিহ্ন এখনো রয়েছে। ঘটনা সামাল দিতে পরবর্তীতে যে ছোট জেনারেটর রাখা হয়েছিল তাও বর্তমানে কক্ষে নেই।

বর্তমান উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘এটি সাবেক উপপরিচালকের সময়ের ঘটনা। জেনারেটর হারানোর বিষয়টি জানামাত্র আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমি এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’ পরবর্তীতে রাখা ছোট জেনারেটর সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘জানা নেই’ বলে জানান তিনি।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বর্তমানে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, তাজহাট, রংপুরের অধ্যক্ষ বেলাল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘তদন্তের বিষয়ে কোনো কিছু বলা যাবে না। এটা নিয়ে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন না। যিনি তদন্ত করতে দিয়েছিলেন তার কাছে জেনে নিন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ‘এটি আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগের ঘটনা। তখন তদন্ত কমিটি কী প্রতিবেদন দিয়েছে তা দেখে জানাতে হবে। তবে শুনেছি বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে।’

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রশ্নে আফতাব হোসেন বলেন, ‘ আমি ব্যস্ত আছি। এসব নিয়ে এখন কথা বলতে পারছি না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close