নাজমুল মোল্লা, সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ)

  ১৯ এপ্রিল, ২০২০

শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে শঙ্কায় সিরাজদিখানের কৃষক

ঝড়-তুফানের মৌসুম, এছাড়া আগাম বর্ষার আশঙ্কায় ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গেই কেটে নিতে হয় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় আবাদ করা বোরো ধান। ওই মৌসুমে আশপাশের বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে ধান কাটার কাজ করতে এই অঞ্চলে আসে বহু শ্রমিক। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার আসতে পারছেন না শ্রমিকরা। অন্যদিকে উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির না থাকায় বিপাকে রয়েছে স্থানীয় কৃষক। সব মিলিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলটির ধান মাড়াই নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, বোরো মৌসুমে দেশে ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলায় ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয় মধ্য এপ্রিলের পর থেকে। যদিও এ সময়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বৃষ্টিপাত। এছাড়া এপ্রিলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ফলে রয়েছে অকালবন্যার শঙ্কাও। অন্যান্য বছর বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় অধিক শ্রমিক দিয়ে তড়িঘড়ি করেই ধান কেটে নিলেও এবার সেক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চলমান করোনা সংক্রমণের কারণে দেশব্যাপী লকডাউন পরিস্থিতি।

শেখর নগর ইউনিয়নের কৃষক বাচ্চু মিয়া বলেন, এই সময়টাতে অন্যান্য জেলা থেকে প্রচুর মৌসুমি শ্রমিক আমাদের এই বিক্রমপুরে আসেন ধান কাটতে। ব্যাপারী বা ঠিকাদারের মাধ্যমে আনা হয় এসব শ্রমিক। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের শঙ্কায় ধান কাটতে আসতে পারছেন না তারা। উচ্চ মজুরি দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। এক দিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে ঝড়-তুফান আর বন্যায় ফসলহানীর ভয়ে আমার রাতের ঘুম হয় না এখন।

ধান কাটার শ্রমিক সংকট নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে উপজেলা কৃষি অফিসার সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, এই সময় সিরাজদিখানে ধানের জমিগুলোতে ধান কাটার শ্রমিক অত্যন্ত জরুরি। তবে এই আপদকালিন সময়ে শ্রমিক সংকট মেটাতে সরকার থেকে বিভিন্ন উপজেলায় ধান কাটার মেশিন দেওয়ার কথা আছে। আশা করি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের সিরাজদিখান উপজেলায়ও একটা পাব। তখন একদিনেই আমরা কয়েক হেক্টর জমির ধান কেটে ফেলতে পারব, এটা সরকারের একটা উদ্যোগ। এছাড়াও সরকার থেকে আমাদের বলে দিয়েছে যে শ্রমিক সংকট মিটাতে আমাদের এখানে যেসব শ্রমিক উত্তরবঙ্গ থেকে আসে তারা যেন নির্বিঘেœ আসতে পারে তাদের জন্য সে ব্যবস্থা অবশ্যই করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর হলো আলুর জন্য সেরা। সেজন্য সিরাজদিখান উপজেলার জমিগুলোতে আলু উত্তোলনের পর যাতে জমিগুলো খালি পড়ে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছি আমরা। এছাড়া সরকারের নির্দেশ মোতাবেক জমিগুলোতে আলু উত্তোলনের পর পরই পাট, ভুট্টা, আমন-আউশ ধানের জন্য কিছু কিছু জায়গায় ইরি ধান প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। আশা করি আমাদের এখানেও দেবে। অতএব এই করোনা সংক্রমনকালে যাতে কৃষি কার্যক্রম অব্যাহত থাকে সিরাজদিখান থেকে আমরা

নিরলসভাবে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান নাহিদ বলেন, আমার জানামতে গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে আমাদের উপজেলাতে। প্রত্যেক বছরই এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটার জন্য প্রচুর শ্রমিক আসত। কিন্তু এবার প্রাণঘাতী করোনার ভয়ে অনেকেই নাকি আসতে সাহস পাচ্ছেন না। তবে যেসব শ্রমিক স্বেচ্ছায় আসতে চাচ্ছেন তাদের আনার জন্য এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close