রাবি প্রতিনিধি

  ২৬ মে, ২০২৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৫ শিক্ষার্থী

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাওয়া। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যাটাও কমতে থাকে। খুব কম শিক্ষার্থীই তাদের স্বপ্নটা ধরে রাখতে পারে। সঠিক গাইডলাইন ও পরিশ্রমের অভাবে হারিয়ে যায় এসব স্বপ্নবাজরা। তবে এবার সেই স্বপ্নছোঁয়ার স্বাদ পেয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী। সম্প্রতি তারা যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক চার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন।

স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের সেলিম রেজা টনি, ২০১৫-১৬ সেশনের মরিয়ম খাতুন, নাজমুল হক, মো. জাহিদুল ইসলাম এবং ২০১৬-১৭ সেশনের মো. এহসানুল কবির। এদের মধ্যে একজন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বাকিরাও আগামী আগস্ট মাসে পাড়ি জমাবেন সেখানে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে সবসময় তারা ছিল একধাপ এগিয়ে। মাস্টার্সে চার জনেরই ফল ছিল সিজিপিএ ৪.০০। আরেকজনের ৩.৮৯। অনার্সে যথাক্রমে তাদের ফল ছিল ৩.৮০, ৩.৭৫, ৩.৮২, ৩.৯১ ও ৩.৯৫। বৈশ্বিক মহামারি করোনার আগে থেকেই সবাই বিভাগের ‘ল্যাবরেটরি অব ইনভাইরনমেন্টাল হেলথ সাইন্সেস’ নামে একটি ল্যাবে গবেষণা শুরু করেন। স্নাতকোত্তর শেষ করার আগেই বিভিন্ন জার্নালে সবারই বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এরমধ্যে সেলিম রেজা টনির ৯টি, মরিয়মের ৬টি, নাজমুলের ৭টি, জাহিদের ৬টি এবং এহসানের ২টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও তাদের প্রত্যেকেরই কিছু পেপারস প্রসেসিংয়ে আছে। এ গবেষণাগুলোই তাদের এ স্কলারশিপ পেতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের চার বিশ্ববিদ্যালয় হলো পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ জন, নিউ মেক্সিকো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন এবং ওকলাহোমা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন। তারমধ্যে মরিয়ম খাতুন পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও স্কলারশিপ পেয়েছেন। পাঁচজনই আইইএলটিএসে ৬.৫ এর ওপর ও জিআই-এ ৩০০ এর ওপর স্কোর করেছেন। পরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করেন তারা। ফলে সুযোগ মেলে যুক্তরাষ্ট্রের চার বিশ্ববিদ্যালয়ে।

নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থী সেলিম রেজা টনি বলেন, অর্থনেতিকভাবে সংকট থাকার পরও আমার বাবা-মা এবং আমার শিক্ষক ড. খালেদ হোসাইন, উনাদের প্রচেষ্টায় আজ আমি এ অবস্থায়। স্যার আমাকে আইসিসিডি.বি-তেও কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিল। যার সুবাদে আমার গবেষণার বেসিকও শক্তিশালী হয় এবং পরিবারকেও চালানোর সক্ষমতা অর্জন হয়। আমি পিএইচডি গবেষণার মাধ্যমে আমার পরিবারের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করতে চাই।

পিটসবার্গ ও পারডু ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপের সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থী মরিয়ম বলেন, পুরো জার্নিতে স্যাররা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। ল্যাবে আমাদের সময় দিয়েছেন। গবেষণা থেকে শুরু করে স্কলারশিপ পাওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষণিক আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা জুগিয়েছেন। স্যারদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।

পারডু ইউনিভার্সিটি থেকে অফার পাওয়া শিক্ষার্থী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমার সুপারভাইজার শ্রদ্ধেয় জাঙ্গাগীর আলম সাউদ স্যার এবং কো-সুপারভাইজার খালেদ হোসাইন স্যারের উনাদের কারনেই এত বড় স্বপ্ন দেখা।

ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পাড়ি জমানো শিক্ষার্থী নাজমুল হক বলেন, আমি এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এসে গবেষণা শুরু করেছি। আমার বাবা-মা এবং স্যারদের প্রতি কৃতজ্ঞ উনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজ আমি সুযোগ পেয়েছি।

পারডু ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থী মো. এহসানুল কবির উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো না। স্যাররা সার্বক্ষণিক সহযোগিতায় ছিলেন উনাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা।

বিভাগের অধ্যাপক ল্যাবের কো-সুপার ড. খালেদ হোসাইন জানান, ওরা আমার সন্তানের মতো। আমার আনন্দের জায়গাটা তাদের বাবার আনন্দ পাওয়ার মতোই। এরাই আমার সব, এদের চোখ দিয়েই আমি পৃথিবী দেখি। দিন-রাত পরিশ্রম করে তারা এ অর্জন করেছে। তাদের অর্জনেই আমার অর্জন। তাদের প্রাণভরে অভিনন্দন জানাই।

এ বিষয়ে ল্যাবের সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, তাদের সাফল্যে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। তাদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। ভবিষ্যতে আমাদের ছাত্ররা যেন আরো বেশি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, নিঃসন্দেহে এ সংবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আনন্দের এবং গর্বের। এরাই আমাদের আগামী। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামীতে জাপানে ৩ জনকে পাঠানো হবে।

এছাড়াও চীন, ইউরোপসহ অনেক দেশে স্কলারশিপে শিক্ষার্থী পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ল্যাব সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান আরো বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি বেশি উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে বলে আমরা আশাবাদী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close