কুবি প্রতিনিধি

  ০৮ মে, ২০২৪

উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বনাম শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত রয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে গত ৩০ এপ্রিলের জরুরি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন্ধ আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এই দ্বন্দ্বে বিপাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত পাঁচটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এছাড়া সাতটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তাবিত রুটিন বন্ধের পর আবার নতুন করে করতে হবে। সোমবার (৬ মে) বিষয়টি মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল করিম চৌধুরী।

নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, গত ২৯ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির একাডেমিক ও প্রশাসনিক বর্জন কর্মসূচি ও ৩০ এপ্রিল সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকে অর্থনীতি বিভাগ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং মার্কেটিং বিভাগের আটটি পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এছাড়া যে সাতটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে রুটিন হাতে এসেছিল, সে পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খুললে নতুন পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করতে হবে।

গত ২৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে শিক্ষক সমিতির নেতাদের দ্বারা বাধার সম্মুখীন হন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মারধর করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক সমিতি তাদের সাত দফা দাবি বাতিল করে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করে। ৩০ এপ্রিল জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক কার্যক্রম ও হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই থেকে যান অনেক শিক্ষার্থী। কেউ কেউ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া বাসে করে ফিরে যান বাড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্য-শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন না। তারা চান দ্রুত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসুক।

কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিলুফা ইসলাম বলেন, আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান ছিল, এর মধ্যে শিক্ষক সমিতি ও উপাচার্যের ঝামেলার কারণে আমাদের পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। আমরা এমনিতেই করোনার ব্যাচ, সেশনজটে আছি। পরীক্ষা পেছানোর কারণে আমরা আরো পিছিয়ে গিয়েছি। আমি চাই এর দ্রুত সমাধান হোক এবং আমরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে চাই।

অর্থনীতি ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আলামিন মজুমদার বলেন, চলমান সংকটে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত। করোনা-পরবর্তী আমাদের প্রত্যেক সেশনই পিছিয়ে পড়ে। এখন আবার যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা দ্রুত ক্লাসরুমে ফিরতে চাই।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, শিক্ষকদের ওপর যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, তার প্রতিবাদে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু উপাচার্য সে সমস্যার সমাধান না করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেন। আমরা শিক্ষক সমিতি সেটার সঙ্গে একমত নই। আমরা চাই দ্রুত ভিসির অপসারণ হোক এবং এই সমস্যার সমাধান হোক। আমরা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হোক চাই না, পাশাপাশি আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে ক্লাস-পরীক্ষা দিক।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আলোচনা করে বিষয়টা সমাধান করার চেষ্টা করব।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করার আগেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আসছিল শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বিবেচনায় সিন্ডিকেটের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের। আশা করছি খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ বিরতির পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সভাপতি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক হন মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান। নির্বাচনে জয় লাভের পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মইনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গেলে উপাচার্য দপ্তরেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। তারপর থেকে বারবার সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close