ফারুক হোসেন সজীব
ছোটদের নজরুল
![](/assets/news_photos/2024/05/25/image-458728.jpg)
ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা কি জানো? আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৪ মে ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং মৃত্যুবরণ করেছিলেন ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ সালে।
তোমাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় বলো তো আমাদের জাতীয় কবি কে?
তাহলে তো সবাই পারবে, তাই না?
আবার বিদ্রোহী কবির নাম কী?
এমন প্রশ্ন শুনলে তো গড়গড় করে বলে দিতে পারবে, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
কিন্তু বন্ধুরা তোমরা কি জানো! তিনি শুধু বিপ্লবী কিংবা বিদ্রোহী কবিই ছিলেন না তিনি ছিলেন মানবতার কবি, মানব দ্রোহের কবি, তিনি হিন্দু-মুসলমানের কোনো ভেদাভেদ মানতে পারতেন না! এ জন্য তৎকালীন হিন্দু-মুসলমানদের কটাক্ষ করে তিনি প্রায় বলতেন- ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’! এটা তিনি ব্যঙ্গ করে বলতেন!
তিনি আবার ছোটদের জন্য কত কী যে লিখে গেছেন, এই কম সময়ে তোমাদের আর কী বলব! তবে একটি কথা বলে রাখি বন্ধুরা! কবি নজরুল কিন্তু বেশ পান খেতেন, আর পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে তবেই গান গাইতেন। একবার তো একটি ছোট্ট মেয়ে বলেই বসল, আচ্ছা বাপু! তুমি এত পান খাও ক্যানে?
জবাবে কবি কি বললেন জানো? তিনি মিষ্টি হেসে মেয়েটির মাথা নেড়ে দিয়ে বললেন- বাপু আমি, গান গাই যে! তিনি কিন্তু ভাষা নিয়েও অনেক রসিকতা করতে পছন্দ করতেন।
এবার কবির বাড়িতে এক ভদ্রলোক এলেন, কবি তো মহাখুশি! কারণ তিনি বেশ কিছুদিন গল্পগুজবের জন্য মানুষ খুঁজছিলেন। কিন্তু এমন একজন লোক যেহেতু তিনি পেয়ে গেছেন তাই ভীষণ খুশি হলেন! কিন্তু সমস্যা হলো! ঠিক কোন ভাষায় গল্পগুজব করবে তারা? কারণ ভদ্রলোকের ভাষা যে হিন্দি ছিল! আর লোকটিও বারবার তার নিজের হিন্দি ভাষার তারিফ করছিলেন, কথায় কথায় কবিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলেন, তাদের হিন্দি ভাষা! খাসা ভাষা! শুনে কবির মেজাজ তো গেল বিগড়ে, কবি মুখের ওপর বলেই দিলেন, মহাশয় আপনাদের ভাষা হলো, কুকুর শেয়ালের ভাষা!
শুনে ভদ্রলোক তো ভীষণ খেপে গেলেন, কবিকে বললেন-কেঁও?
কবি বললেন দেখলেন তো মশাই এই যে আপনি কেঁও বললেন কুকুররাও-ঘেঁও বলে! শুনে লোকটি একটু হেসেই বললেন, ‘হুয়া! হুয়া!’ শুনে কবি বললেন, এটা কিন্তু জনাব শিয়ালের ডাক! উপস্থিত ছিল যারা তারা সবাই কবির এমন রসিকতায় হেসে একেবারে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন!
তিনি আবার রুটি বানানোর সময়ও রসিকতা করতেন। আটার খামির প্রস্তুত করতে করতে তিনি ছড়া লিখে ফেলতেন-
‘মাখতে মাখতে গমের আটা
ঘামে ভিজল আমার গা-টা’
একবার হয়েছিল কী জানো? কবি পথ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখলেন, একটি মেয়ে গাছের দিকে তাকিয়ে কী যেন বিড়বিড় করছে! কবি তো দেখে অবাক! তিনি ভাবলেন, নিশ্চয় গাছের ওপর বসে আছে কেউ একজন, আর মেয়েটিকে গাছের ফল দিচ্ছে না বোধহয়!
তাই কবি তেড়ে এলেন, ভাবলেন ছোট্ট মেয়েটিকে কষ্ট দেওয়া, দেখাচ্ছি মজা! কিন্তু তিনি কাছে এসে গাছের দিকে তাকিয়ে দেখে তো অবাক!
একি! গাছের ওপর যে কেউ নেই!
তাহলে?
মেয়েটি কার সঙ্গে কথা বলছিল এতক্ষণ?
তিনি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কার সঙ্গে কথা বলছিলে বাপু?
মেয়েটি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, ওই যে, ওই দুষ্ট কাঠবিড়ালির সঙ্গে! ও আমাকে একটাও পেয়ারা দেয় না! শুধু একা একা খায়! খেয়ে আবার অর্ধেকটা মাটিতে ফেলে রেখে যায়! আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এমনটি করে, আমার বুঝি পেয়ারা খেতে ইচ্ছে করে না?
শুনে কবি তো অবাক! একটি ছোট্ট মেয়ে কাঠবিড়ালির সঙ্গে কথা বলছে,
এত অসাধারণ ব্যাপার!
তাই কবি কাগজ-কলম নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই লিখে ফেললেন-
কাঠবেড়ালি কাঠবেড়ালি পেয়ারা তুমি খাও?
শুনলে তো বন্ধুরা এ রকম আরো কত-শত গল্প আছে আমাদের প্রিয় কবিকে নিয়ে! কী বন্ধুরা তোমরা কী একটিবারও বলবে না- হে কবি ধন্য তুমি! শুভ জন্মদিন!
"