reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ক্যালিগ্রাফিতে মিমির সফলতা

ক্যালিগ্রাফি জগতে সুলতানা মিমি সুপরিচিত এক নাম। ফ্রিল্যান্সার ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন প্রায় আট বছর। পেয়েছেন দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার। মিমির ক্যালিগ্রাফিতে জুড়ায় প্রাণ। ছড়ায় মুগ্ধতা। মিমির সফল ক্যালিগ্রাফার হয়ে ওঠা নিয়ে লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

ক্যালিগ্রাফির শুরু তার ছোটবেলা থেকেই। দেয়াললিখন, মায়ের বানানো রুমালে শব্দের বিন্যাস, দরজায় লেখা ওয়েলকাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালের নীতি বাক্যগুলোর অক্ষরবিন্যাস তাকে খুব টানত। তিনি মনে মনে এভাবে লেখার কথা ভাবতেন। বড় হয়ে তার এমন ভাবনা ডালপালা গজাল। মিমি শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন ডিজাইনে অনার্স এবং প্রডাক্ট ও ফ্যাশন মার্চেন্ডাইসিংয়ে মাস্টার্স করেছেন। স্বামী জামিল আহমেদকে নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন। জামিল আহমেদও ক্যালিগ্রাফি করেন। ২০১৮ সালে মিমি প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যুক্ত হন আর্ট কার্নিভ্যাল গ্রুপের সঙ্গে। এই গ্রুপটি শিল্প সংস্কৃতি ও বহুমুখী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করে। এদের সঙ্গে আছেন বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ।

ক্যালিগ্রাফি আসলে কী? শুধুই কি আরবি লেখা? এমন প্রশ্নের জবাবে মিমি বলেন, ক্যালিগ্রাফি শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ক্যালোস=সুন্দর kallos=beauty] এবং গ্রাফেন=লেখা [Grafein=to write] থেকে হয়েছে। অর্থাৎ এক কথায় সুন্দর হস্তলিপিকে ক্যালিগ্রাফি বা চারুলিপি বলে। ক্যালিগ্রাফি বা চারুলিপি এমন শিল্পকে বলা হয়, যাতে চমৎকার সব প্রতীক হাতের মাধ্যমে রচনা করা ও সেগুলোকে নিখুঁত ও সুন্দর করে সাজানো হয়। এটা শব্দ ও হরফের অবস্থান ও লেখায় দক্ষতা ও কৌশলের এমন সমাহার, যাতে অখণ্ডতা, সাদৃশ্য, ঐতিহ্য, ছন্দ ও সৃজনশীল স্ফুলিঙ্গ প্রকাশ পাবে। যেকোনো ভাষাই ক্যালিগ্রাফি হতে পারে।

ক্যালিগ্রাফিতে মিমি স্লোগান, শায়েরি, চিরকুট, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম, লোগো, কোরআনের আয়াত, দোয়া, সুরা, হাদিস, কাপল নেম বা ফ্যামিলি নেম ইত্যাদি লেখেন। ক্যালিগ্রাফি তার পেশা নয়। এটা তার শখের আবেগের জায়গা। ফ্রিল্যান্সার ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট হিসেবে প্রায় ৮ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। কাজটা কেমন হবে তার ওপর তিনি দাম নেন। সেটা ৩০০ থেকে লাখ টাকাও হতে পারে। মিমি বলেন, কেউ যদি তামা-রুপা বা স্বর্ণ দিয়ে বাঁধিয়ে নিতে চান, তবে হাদিয়া আমার শ্রম ও ম্যাটেরিয়ালের খরচের ওপরই দিতে হবে। সামর্থ্য হলে একজন শৌখিন কালেক্টর লাখখানেক বাজেটের পেইন্টিং অনায়েসেই নিতে পারেন। ফেসবুকে মিমির পেজের নাম সুলতানা মিমি। এখানে অর্ডার দেওয়া যায়। কাজের জন্য কিছু টাকা অগ্রিম দিতে হয় তাকে। লেখার বাক্য বেশি হলে ও ডিটেইলস বেশি থাকলে সময় ৭ দিনের মতো সময় লাগতে পারে। একাধিক কাজ হাতে থাকলে মাসখানেক সময়ও লাগতে পারে। শখের কাজ ক্যালিগ্রাফি থেকে মাসে তার গড় আয় ২০,০০০ টাকার মতো। এই আয়ে মিমি সন্তুষ্ট। তিনি ৩ ফিট বাই ৬ ফিট একটা পেইন্টিং ৪৫,০০০ হাজার টাকা এবং ৩০/৩৬ সাইজের পেইন্টিং ২৫,০০০ ও ৩০,০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন।

মিমি ভালোলাগা ও ভালোবাসা থেকে ক্যালিগ্রাফি করেন। পুরস্কারের চিন্তা তার মাথায় থাকে না কখনোই। তবু কাজ সুন্দর হলে তো স্বীকৃতি মিলবেই। প্রায় বিশটির মতো পুরস্কার জুটেছে তার ঝুলিতে। যার মধ্যেই উল্লেখযোগ্য হলো, বেস্ট অ্যাওয়ার্ড ইন ক্যালিগ্রাফি, ইন্টারন্যাশনাল উইন্টার আর্ট এক্সিবিশন, ২০১৯, স্পেশাল আর্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড অন কনটেম্পরারি, ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশন ফিফথ টিউন অব আর্ট, ২০২০, টপ ফাইভ উইনার, বঙ্গবন্ধু ইউথ ক্যাপিটাল ইন ক্যালিগ্রাফি, ২০২০, টপ অ্যাওয়ার্ড, আইপিডিসি বর্ণশিল্পী, ২০২০, ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ উইনার, ২০২০, চ্যাম্পিয়ান ইন ক্যালিগ্রাফি ইন ক্যালিগ্রাফি, ক্যাসটাওয়ে অন মুন মেগা ফেস্ট ২০২১, রানারআপ ইন কনটেম্পরারি আর্ট, ওআইসি ইউথ ক্যাপিটাল ২০২১, চ্যাম্পিয়ন ইন ক্যালিগ্রাফি, নিউ ইয়র্ক ইন্টারন্যাশনাল সিরাত ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতা ২০২১।

মিমির অসংখ্য কাজ শিল্পবোদ্ধাদের কাছে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। মুগ্ধ করেছে শিল্পপ্রেমীদের। যার মধ্যে সুরা আল-আসর নিয়ে আরবি ক্যালিগ্রাফি অন্যতম। রাসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন একটি কনটেম্পোরারি আর্টে, যেখানে রাসুল (সা.) হস্তলিখিত সিলের ক্যালিগ্রাফি উল্লেখযোগ্য। রঙিন জীবনের বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরেন একটি ফুলদানিতে রাখা ফুলের ফিকে হওয়া রঙে, তার এ কাজটি সমাদৃত হওয়ার পাশাপাশি তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন।

পরিবারে মা, বাবা, ভাই, বোনদের থেকে সব সময়ই মিমি সমর্থন পেয়ে এসেছেন। তবে দুঃখ হলো, তার বাবা এমন অর্জনগুলো দেখে যেতে পারেননি। অন্যদিকে মেয়ে বলেও নানা বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিনি বলেন, মেয়ে বলে অনেক জায়গায় মূল্যায়ন পাইনি, ক্রমাগত বাধার শিকার হতে হচ্ছে। হিজাব নিয়েও বাধাগ্রস্ত হয়েছি বারবার।

দেশে ক্যালিগ্রাফির চর্চা বেড়েছে। এর সঙ্গে মানুষের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। ক্যালিগ্রাফিতে তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে দিন দিন। বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে। কারণ হিসেবে মিমি বলেন, অক্ষরের ব্যবহার কোথায় নেই! কাভার পেজে, প্রচ্ছদে, ব্যানারে, পোস্টারে চারপাশে অক্ষরের ব্যবহার। নিঃসন্দেহে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যালিগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নেওয়া যায়।

মাহফুজ ক্যানভাসের উদ্যোগে কিছুদিন আগে দুবাইয়ে ইন্টারন্যাশনাল ‘এনুয়াল স্টুডেন্ট আর্ট ফেস্টিভ্যাল’ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বাংলাদেশি আর্টিস্টদের ছবি প্রদর্শিত হয়। আর এ জন্য আর্টিস্টদের সব খরচ বহন করে মাহফুজ ক্যানভাস। মিমি মনে করেন, এ ধরনের আয়োজন দেশের বাইরে আমাদের কাজকে পরিচয় করিয়ে দেয়, যা আমাদের জন্য আনন্দের ও প্রাপ্তির।

বাংলাদেশে বর্তমান সময়টাকে ক্যালিগ্রাফির গোল্ডেন টাইম বলা চলে। বছর-তিনেক আগেও দেশের মানুষ ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে তেমন জানত না। এ প্রসঙ্গে মিমি বলেন, বর্তমানের সময়টাকে ক্যালিগ্রাফির গোল্ডেন টাইম বলা চলে। এ সময় হাজারের বেশি মানুষ ক্যালিগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, কেউ গ্রাফিকস/ডিজিটালি কাজ করছে, ফন্ট বানাচ্ছে কেউ হাতে-কলমে কাজ করছে।

আমাদের দেশে এত মেধাবী মানুষ রয়েছে, যারা অনেক ধরনের কাজ ক্রিয়েটিভ কাজ করছে! কিন্তু এই কাজকে প্রকাশ করার মতন কোনো জায়গা নেই। আমি সেই প্ল্যাটফরমটা গড়তে চাই। যেখানে আর্ট, ক্রাফট, ডিজাইনসহ দেশীয় শিল্প বিকাশ নিয়ে হবে, কীভাবে তা দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, আয় বাড়ানো যায় সেটাই এখন চেষ্টা। ইতিমধ্যেই ‘শিল্পবাংলা’ নামে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এ কথাগুলো বলেন মিমি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close