জিহাদ হোসেন রাহাত

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪

লক্ষ্মীপুরের লক্ষ্মী জয়িতা সুমা ভৌমিক

সুমা ভৌমিক। জন্মেছেন দেশের দক্ষিণের জনপদ সয়াল্যান্ডখ্যাত লক্ষ্মীপুরে। সংস্কৃতিমনা এই নারী স্থানীয় পর্যায়ে ছড়াচ্ছেন সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, হৃদ্যতা ও সংস্কৃতির আলো। প্রদীপ শিখা জ্বালাতে গিয়ে তিনি জয় করেছেন জেলার সংস্কৃতিমন। এক কথায় বলতে গেলে, লক্ষ্মী জনপদে লক্ষ্মী জয়িতা হিসেবে তিনি চালাচ্ছেন নিজের সৌন্দর্যময় সংস্কৃতিকর্ম।

শিল্প, সংস্কৃতিপ্রিয় এই নারীর সমাজকর্ম মুগ্ধ নয়নে দেখেন লক্ষ্মী জনপদের সংস্কৃতিমনা মানুষজন। জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর ও জেলা সদরসহ জেলার পাঁচ উপজেলায় সর্বাধিক চর্চিত নারীমুখের একজন তিনি। সুমার সংস্কৃতিকর্মের ছোঁয়া লেগেছে তার জন্ম জনপদের প্রায় প্রতিটি সাংস্কৃতিক পার্বণে। রায়পুরের হিন্দু পরিবারে জন্ম সুমার- এ কথা লোকমুখে যতটা না চর্চিত তার চেয়ে বেশি চর্চিত মানুষ হিসেবে তার সংস্কৃতিকর্ম। সংস্কৃতির সব অঙ্গনে সুমার পদচারণে বিষয়টি পরিপূর্ণ রূপে স্পষ্ট না হলেও বাঙালি সংস্কৃতির লালন যে তিনি শতভাগ করার চেষ্টা করেন, সেটি পানযোগ্য পানির মতো বৃহদাংশে পরিষ্কার।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যেন গত যুগের রানার ধারণার বাস্তব রূপ লক্ষ্মীকন্যা সুমা ভৌমিক। মানুষজনের মূল্যবান চিঠিপত্র, টাকা-কড়ি কিংবা দরকারি কোনো উপাদান যেমন সযত্নে বহন করতেন ডাক বিভাগের রানাররা ঠিক তেমনই যুগোধিক সময় ধরে রায়পুরের সাংস্কৃতিক ধারার রুপক পালকি বয়ে চলছেন এই নারী। জেলায় উজ্জ্বলতা ছড়ানো সংস্কৃতিকর্মীদের একজন তিনি। আলো ছাড়ানো সুমা ভৌমিকের জন্মস্থান জেলার রায়পুরের দেনায়েতপুর গ্রাম। বাবা মানিক লাল ভৌমিক ও মা যমুনা ভৌমিকের কোলের সুমা যুগান্তরের সময় পেরিয়ে যেন- আজ মেঘনার বুকে সংস্কৃতির ঢেউ। শিশু-কিশোরদের নিয়ে তিনি চালাচ্ছেন নাচ, গান, আবৃত্তিসহ সংগীতাঙ্গনের- রায়পুর সপ্তর্ষি কালচারাল একাডেমি-নামীয় একটি প্রতিষ্ঠান। সংস্কৃতিবান্ধব এই নারী রয়েছেন সেটির পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত। অবশ্য মূল পেশা হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন শিক্ষকতাকে।

উপজেলার চরপাতা মুজিবুল হক একাডেমির সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির পাশাপাশি জাতীয় রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদের সম্পাদকম-লীর সদস্য ও দুর্নীতি দমন কমিশনের উপজেলা সদস্য হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। এসব ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এই নারী। গল্প, কবিতা, উপন্যাসসহ যাবতীয় সাহিত্যকর্ম ও লেখনী প্রকাশনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় শিক্ষকের কলামে জেলা প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন তিনি। এ ছাড়া গত বছরের (২০২৩) ১৯ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর টাউন হলে জেলা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ও জেলা কালচারাল কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ‘তৃণমূল মানুষের জন্য শিল্প ও সংস্কৃতি’বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার পরিচালিত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘সপ্তর্ষি কালচারাল একাডেমির’ শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা মুগ্ধ হয়ে দেখেছিল জেলার সাংস্কৃতিকাঙ্গন।

মুগ্ধতা ছড়ানোর দু-মাস পর ডিসেম্বরে বিজয় দিবস উপলক্ষে রায়পুর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত সাংস্কৃতিক পর্বেও চোখ ধাঁধানো উপস্থাপনাকর্ম হাজির করে তার সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। স্বামী শিব প্রসাদ নাথের সঙ্গে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার জীবনেও সুখী সুমা। এক কথায় সুমা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে একসঙ্গে রাখছেন ইতিবাচক ভূমিকা। কর্মজীবনের দীর্ঘ সময়ে উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়েও বেশ আলোচিত হয়েছেন এই নারী। শেখ হাসিনা ইউথ ভলেন্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২ ও সম্প্রতি গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৩ বেগম রোকেয়া দিবসে শিক্ষা ও সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় উপজেলা ও জেলাপর্যায়ে জয়িতা পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

অবশ্য শুধু পুরস্কার ও সুনামে সীমাবদ্ধ নেই সুমার জীবন। ইতিমধ্যে সংগীতাঙ্গনের একজন হিসেবে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের শিল্পী তালিকায় লিখিয়েছেন নিজের নাম। নিজের কর্মের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজ জন্মস্থান ও জন্মভূমিকে উপস্থাপন করে চলেছেন সুদীর্ঘ সময় ধরে। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায়ও বেশ পারদর্শী তিনি। ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানবতাই ধর্ম নামীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে আত্মমানবতার সেবায় শ্রম দিচ্ছেন লক্ষ্মীপুরের এই জয়িতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close