reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ জানুয়ারি, ২০২৪

ঢাবি জয়িতা শিফার গল্প

ইফফাত জাহান শিফা- একজন জয়িতার নাম। লক্ষ্মীপুরের অজপাড়াগাঁ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে কীভাবে পেলেন ঠাঁই সেটি উঠে এসেছে আজকের গল্পে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী ইফফাত জাহান শিফার সাক্ষাৎকার গ্রহণের গল্প তুলে ধরেছেন জিহাদ হোসেন রাহাত

শিক্ষক দম্পতির মেয়ে ইফফাত জাহান শিফা। ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী। স্বপ্নপূরণের পথে শিফাকে পাড়ি দিতে হয় প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ও দীর্ঘ অধ্যবসায়ের পথ। শিফা লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার রায়পুর এলএম পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। তার বাবা-মা দুজনেই বিদ্যালয়টির শিক্ষক পদে নিয়োজিত রয়েছেন। এসএসসির পর ঢাকার হলি ক্রস কলেজ থেকে একই বিভাগে জিপিএ ৫ অর্জন করেন তিনি। চলুন তার মুখে শুনে নেওয়া যাক সংগ্রামমুখর পথের গল্প।

কেমন ছিল আপনার স্বপ্নযাত্রা?

প্রথমেই ধন্যবাদ আপনাকে। অশেষ কৃতজ্ঞতা আল্লাহর প্রতি। স্বপ্নযাত্রার কথা বলতে গেলে- এটি যতটুকু ছিল সহজ তার চেয়েও ছিল বেশি কঠিন। যাত্রাপথ আসলে খুব সহজ ছিল না। বেশি কঠিনও মনে হয়নি। আমি কেবল চেষ্টা করেছি।

কবে থেকে আপনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং চেষ্টা শুরু করেছিলেন?

ছোটবেলা থেকেই আমার আকাশসম স্বপ্ন ছিল। যেদিন থেকে চারপাশ বুঝতে শুরু করি সেদিন থেকেই জাগে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বাসনা। এইচএসসির ৩ মাস আগে আমাদের চূূড়ান্ত নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। এরপর আর ক্লাসও হয়নি। আমি মডেল টেস্ট ব্যাচে ভর্তি হই আইকন প্লাস নামীয় একটি কোচিং সেন্টারে। এটি মূলত ছিল এইচএসসির জন্য। ভেবেছিলাম অ্যাডমিশনের জন্য অন্য একটি কোচিংয়ে ভর্তি হব। কিন্তু আগেরটির ক্লাস আর শিক্ষার মান ভালো ছিল বিদায় পুনরায় সেখানেই ভর্তি হই অ্যাডমিশনের প্রস্তুতি নিতে। ২০২২ সালে ডিসেম্বরে আমাদের বোর্ড পরীক্ষা শেষ হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে অ্যাডমিশনের ক্লাস পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। প্রথম দিকের সাপ্তাহিক পরীক্ষাগুলো ভালো হত না। অবশ্য পড়াশোনাও অত বেশি করতাম না- যার দরুন এমন হত। তবে পরীক্ষা দেওয়া বা ক্লাস করা ছেড়ে দেইনি। ক্লাস-পরীক্ষায় নিয়মিত ছিলাম। পড়ি অথবা না পড়ি বিশেষ করে সব টেস্ট নিয়মিত দিতাম। আই থিংক দিস ওয়াজ দ্য মোস্ট হেল্পফুল থিং ফর মি ডিউরিং অ্যাডমিশন সিজন।

নতুনদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?

শিফা-জি অবশ্যই। কাউকে রেকমেন্ড করতে হলেও আমি বলব এই সময়ে নিয়মিত যেন পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে। আমাকে মূলত এই পরীক্ষার ব্যাপারটি অ্যাডমিশনের জন্য পূর্ণাঙ্গ রূপে তৈরি করেছিল। পরীক্ষা দিলে অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে। প্রশ্নের ধরন বোঝা যায়। আমি প্রথম দিকে ভালো না করলেও ধীরে ধীরে পরের টেস্টগুলোয় ডিসেন্ট মার্কস পেতে শুরু করি।

প্রস্তুতির বিষয়টি জানালেন, পড়া আয়ত্ত করার ব্যাপারে দয়া করে কিছু জানাবেন কি?

আমার মনে হয় পড়ালেখা আয়ত্ত হবার ব্যাপারটা আপেক্ষিক। আমি কখনোই খুব বেশি পড়তাম না। অ্যাডমিশন টাইমেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। আমার বাংলার ব্যাসিক ভালো ছিল, ইংরেজিও ছিল মোটামুটি, আর হিউম্যানিটিজ ব্যাকগ্রাউন্ড হওয়ায় সাধারণ জ্ঞানের দিক থেকেও মোটামুটি প্রিভিলেজড ছিলাম বলা চলে।

এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে কারো সহযোগিতা নিয়েছেন কি?

জ্বি নিয়েছি। এই সময়টায় ভালো ভালো কয়েকজন শিক্ষকের সান্নিধ্যে ছিলাম। ফলে আমার তথাকথিত ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়ে মুখ গুজে থাকতে হয়নি। ক্লাস আর পরীক্ষায় কমবেশি সব কিছু কভার হয়ে যেত। তবে আমি নিয়মিত ছিলামণ্ড দ্যাটস দ্য হাইলাইট। আর আমার বড় বোন সিনথী আপু এই সময়টায় আমার সাথে ছিলেন। ফলে ভর্তি নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা ছিল না।

ঢাবি ছাড়া অন্য কোথাও পরীক্ষা দিয়েছেন কি?

সবার প্রথমে বিউপিতে পরীক্ষা হয়। ওখানে আমি ২টা ইউনিট FASS আর FSSS এ পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমার ভালো হয় FSSS এ। তবে FASS এ আসে আমার। বিইউপিতে পরীক্ষা হয় দুই ধাপে। রিটেন আর ভাইবা। আমার ভাইবা খারাপ হয়, ভেবেছিলাম আসবে না। কিন্তু আসে অর্থনীতি। সেটি আমার প্রথম চয়েস ছিল। যদিও পরে সেটি পরিবর্তন করে ইংরেজি বিষয়ে বিইউপিতেও ভর্তি হয়েছি। পরে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ও ডি ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। দুঃখজনক ব্যাপার হলো ডি ইউনিটে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমি গুচ্ছের পরীক্ষা দিতে পারিনি। চবির বি ইউনিটে আমার অবস্থান ৬০৮ ছিল আর ডি ইউনিটে ছিল ৯৭ তম।

যদি ঢাবিতে না আসতেন তখন আপনি কি করতেন?

তবে অবশ্যই আমি চবির আইন বিভাগে পড়তাম। কারণ আমার আইন বিষয়টি এসেছিল। পরে অবশ্য আমি রাবিতেও পরীক্ষা দিয়েছিলাম একটি ইউনিটে। কিন্তু ততদনে বিইউপি আর চবির রেজাল্ট দিয়ে দেওয়াতে ওখানে আর নজর দেইনি। কিছুটা ঢিলেমি করেছি। এজন্য রাবিতে পজিশন একটু দূরে ছিল। তবে হাঁপিয়ে যাইনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির বিষয়ে কিছু বলবেন কি?

জ্বি, ঢাবি নিয়ে আমি কিছুটা আশাবাদী ছিলাম। পুরোপুরি ছিলাম না তার কারণ, পরীক্ষা দিয়ে আমি সন্তুষ্ট হইনি। ঢাবির এ আর বি দুইটা ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আসলে আমি এতটাও আশা করিনি। ঢাবির এ ইউনিটে আমার পজিশন ছিল ২৪২তম (আমি এটা ঠিক শিওর না, মনে নাই, তবে ২৪২ বা এর আশেপাশেই হবে) আর বি ইউনিটে পজিশন ছিল ১২৫ তম। আমি ঢাবিতে আইন ছাড়া অন্য সব বিষয়ের জন্য এলিজিবল ছিলাম। আইনে পড়তে ইংরেজি লাগে ২১, বাংলায় ২১ আর জিকেতে ১৮। আমার বাংলায় ছিল ২৫, জিকেতে ১৯ দশমিক ২৫ আর ইংলিশে ছিল ২০ দশমিক ৭৫। ইংলিশে দশমিক ২৫ মার্কসের জন্য আইন নিতে পারি নাই। ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে পড়তে ইংলিশে ১৫ নম্বর। কিন্তু আইনের জন্য ২১ লাগে। প্রথমে একটু মন খারাপ ছিল, পরে মনে হলো যা হয় ভালোর জন্যই হয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জন্য কীভাবে নির্বাচিত হলেন?

আই আর আমার প্রথম চয়েজ ছিল। এটাই আসে পরে। আব্বু যদিও প্রথমে বলেছিল ইংলিশ নিতে, কিন্তু পরে আর মানা করেননি।

অদূর ভবিষ্যতে কি হতে চান আপনি?

সেটি আসলে সময়ই বলে দিবে। আমি শুধু চেষ্টা করে যেতে চাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close